মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

দুর্ঘটনা ডেকে আনছে অক্সিজেন সিলিন্ডার

খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়িতে ব্যবহার নিরুৎসাহ করেন বিশেষজ্ঞরা

জিন্নাতুন নূর

করোনা রোগীসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের অনেকেই ঘরে চিকিৎসা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। তাদের বড় একটি অংশ বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করেছেন বা করছেন। অথচ, বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারে রয়েছে অনেক অব্যবস্থাপনা। সঠিকভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডারটি ব্যবহার করতে না পারলে বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। হাসপাতালে এবং হাসপাতালের বাইরে, বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করতে গিয়ে ইতোমধ্যে বেশ কিছু দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বাড়িতে এই সিলিন্ডার ব্যবহারে নিরুৎসাহ করেছেন। একইসঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার পরিবহন, ব্যবহার ও এর মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নজরদারির প্রয়োজন। পাশাপাশি এ জন্য প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা তৈরি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তারা।

সম্প্রতি বাগেরহাটের শরণখোলার রায়েন্দা-মাছুয়া ফেরিঘাট এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সের অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিনজন দগ্ধ হন। জানা যায়, শ্বাসকষ্টের রোগীর জন্য অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। দুর্ভাগ্যবশত সিলিন্ডারটি অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানোর সময় বিস্ফোরিত হয়। এর আগে গত বছরের ৪ নভেম্বর যশোর জেনারেল হাসপাতালে বড় সিলিন্ডার থেকে ছোট সিলিন্ডারে অক্সিজেন স্থানান্তরের সময় বিস্ফোরণে দুজন আহত হন। এ ছাড়া গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দোতলায় কার্ডিওলজি বিভাগের করোনারি কেয়ার ইউনিটে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে অক্সিজেনের অভাবে এক রোগীর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও করোনা গবেষক ডা. মো. সালেহ মাহমুদ তুষার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাড়িতে গুরুতর শ্বাসকষ্টের রোগীদের জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন দিতে হবে। তবে, এর বাইরে ঘরে এটির ব্যবহার আমরা নিরুৎসাহিত করি। হাসপাতালে শর্টসার্কিট থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনায় অক্সিজেন সিলিন্ডারে আগুন লেগে যেতে পারে। দুর্ঘটনা এড়াতে ভালো মানের ইলেকট্রিক ক্যাবল ব্যবহার করতে হবে। আবার অক্সিজেন সিলিন্ডার জীবন রক্ষাকারী সামগ্রী। এ জন্য এটি তৈরির সময় এর গুণগত মানের সঙ্গে আপস করা যাবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল ক্যামিস্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ টি এম জাফরুল আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যেহেতু এই সিলিন্ডারে একটি বাল্ব নিয়ন্ত্রণ করে অক্সিজেন, এ জন্য বাল্বটি সেটিং প্রশিক্ষিতদের দিয়েই করানো উচিত। হাসপাতালে নিয়মিত নজরদারির মধ্যে থাকলেও বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রেসার জানা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। এ ছাড়া অনেকে অক্সিজেন কনসেনট্রেটরও বাসায় রেখে ব্যবহার করছেন। এটি থেকেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য বাসায় অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করছি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অক্সিজেন নিজে জ্বলে না কিন্তু এটি ছোট স্ফুলিঙ্গ বা আগুন শিখার সংস্পর্শে এলে খুব দ্রুত আগুন ছড়াতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে পরিবহনের সময় একসঙ্গে যখন অনেক অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকে তখন অসাবধানতাবশত বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অক্সিজেন সিলিন্ডার পরিবহন, ব্যবহার এবং এর মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নজরদারি করার পাশাপাশি এ জন্য প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা তৈরি করা প্রয়োজন। ব্যবসায়ীরা জানান, করোনা মহামারি শুরুর আগ পর্যন্ত কিছু হৃদরোগী, শ্বাসকষ্টের রোগী ও গর্ভবতী মায়েরা বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করতেন। কিন্তু মহামারিতে ঘর-বাড়িতেও অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের হার বেড়েছে। বিশেষ করে গত বছর এই হার বেশি ছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেসরকারিভাবে যেসব অক্সিজেন সিলিন্ডার খোলা বাজারে বিক্রি বা ভাড়ায় দেওয়া হচ্ছে তা কোন জায়গা থেকে আমদানি করা হচ্ছে এবং এগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ কি না তা যাচাই-বাছাই করা অত্যন্ত জরুরি। যাচাই-বাছাই ছাড়া সিলিন্ডার বাজারজাত করা দণ্ডনীয় অপরাধ। আবার ঢালাওভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করা কোনোভাবেই উচিত নয়। এ ছাড়া বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখায় অগ্নিকাণ্ডের মতো বড় ধরনের ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। এ জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অক্সিজেনের ব্যবহার ও বিধি-নিষেধ সম্পর্কিত নীতিমালা করা প্রয়োজন। 

অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে দুর্ঘটনা এড়াতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- যে ঘরে আগুনের ব্যবহার হয়, সেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা যাবে না। অক্সিজেন থেরাপির সময় কেউ যেন পাশে ইলেকট্রিক রেজার ব্যবহার না করে। সিলিন্ডার সবসময় নিরাপদ স্থানে খাড়াভাবে রাখতে হবে। বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে সিলিন্ডার রাখতে হবে। অক্সিজেন লিক আছে কি না তা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর