রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ভ্যাকসিন নিতে ঢল হুড়োহুড়ি, আহত ২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভ্যাকসিন নিতে ঢল হুড়োহুড়ি, আহত ২৩

দেশজুড়ে ১ কোটি ডোজ টিকাদান শুরু হয় গতকাল। প্রতিটি কেন্দ্রেই ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ছবিটি সাভারের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যানেজমেন্ট (বিআইএইচএম) কেন্দ্র থেকে তোলা -রোহেত রাজীব

দেশজুড়ে চলমান গণটিকা কর্মসূচিতে দিনভর ছিল মানুষের ঢল। টিকা নিতে গিয়ে ভবনের রেলিং ভেঙে পড়ে ভোলায় আহত হয়েছেন ২০ জন। পিরোজপুরে লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছেন। গাজীপুরে স্টেডিয়াম ভাঙচুর হয়েছে। মানুষের উপস্থিতি বেশি থাকায় টিকা কর্মসূচি আরও দুই দিন বাড়িয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সারা দেশে গণটিকাদান কার্যক্রমের মেয়াদ আরও দুই দিন বাড়নো হয়েছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ টিকা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রে উপস্থিত হচ্ছেন। বিকাল গড়িয়ে গেলেও এখনো অনেকে লাইনে রয়েছেন। টিকা দিতে পারবেন কি না আশঙ্কা দেখা দিয়েছে অনেকের মধ্যে। অসংখ্য মানুষের আগ্রহের কারণে টিকার মেয়াদ দুই দিন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। দেশে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজের টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। গতকাল মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের এক অনুষ্ঠান থেকে ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা জানান। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং কভিড-১৯ ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘টিকা কেন্দ্রে প্রচুর ভিড় দেখা যাচ্ছে। মানুষকে দীর্ঘ সময় কেন্দ্রে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। সে কারণে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানোর।’

রাজধানীসহ সারা দেশেই টিকার দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ভোলা : লালমোহনে টিকা নিতে এসে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের রেলিং ভেঙে নারী, শিশুসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আটজনকে লালমোহন উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, লালমোহনের কালমা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে টিকাদান কেন্দ্র হওয়ায় সকাল থেকে বিভিন্ন বসয়ী নারী-পুরুষ টিকা নিতে ছুটে আসেন।

গাজীপুর : গাজীপুরে টিকা নিতে আসা মানুষ শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে ভাঙচুর চালিয়েছেন। টিকা নিতে আসা এক কলেজছাত্র জানান, টিকা নিতে সকাল ৭টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি। ১০টার সময় জানানো হয় স্টেডিয়াম কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে না, টিকা নিতে শহীদ বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে যেতে হবে। এ খবর শুনে উপস্থিত লোকজন উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

পিরোজপুর : স্বরূপকাঠি উপজেলায় টিকার লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছেন। সুটিয়াকাঠি ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। নেছারাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবির হোসেন বলেন, টিকা নিতে এসে লাইনে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে সামান্য সংঘর্ষ হয়েছিল। তবে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি সমাধান করে ফেলেছে।

সিলেট : গণটিকার প্রথম দিন সিলেট বিভাগে প্রায় ৭ লাখ মানুষকে দেওয়া হয়েছে টিকা। যদিও প্রথম দিন টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ৪ লাখ ডোজ।

সাভার : সাভারে পৌরসভাসহ ১২ ইউনিয়নের ২৬ কেন্দ্রে দেওয়া হয়েছে টিকা। প্রতিটি কেন্দ্রে ছিল মানুষের ঢল। ভোর থেকেই পৌর এলাকার বাংলাদেশ হেলথ ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে আসতে থাকে মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসমুদ্রে পরিণত হয় কেন্দ্র। হাজার হাজার মানুষকে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অপেক্ষারতদের অধিকাংশই পোশাক কারখানায় কর্মরত। এতে একপর্যায়ে তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা।

নীলফামারী : জেলার ছয় উপজেলার ২০৭ কেন্দ্রে ৪১৪ স্বাস্থ্যকর্মী ও ৬২১ স্বেচ্ছাসেবী করোনার টিকাদানে কাজ করছেন। সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর কবির জানান, জেলায় এক দিনে ৬২ হাজার টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

হিলি : হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ১৪ কেন্দ্রে একযোগে টিকা দেওয়া হয়েছে। এক দিনে প্রায় ৪ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। বাগেরহাট : জেলার নয় উপজেলার ৭৫ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার ২৪৩ কেন্দ্রে ৭২ হাজার ৯০০ জনকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে সকাল থেকেই ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়।

নেত্রকোনা : জেলার ৩১৪ কেন্দ্রে টিকা দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদফতর। পৌর শহরের ১২ অস্থায়ী কেন্দ্রের প্রায় সব কটিতেই ছিল ভিড়।

 

নাটোরে : জেলায় এক দিনে ৩ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ১৮৫ কেন্দ্রে একযোগে শুরু হয় গণটিকার কার্যক্রম। তবে বুথ সংখ্যা কম হওয়ায় চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন টিকাগ্রহীতারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : পৌরসভার ১২সহ জেলার ৩০৬ ওয়ার্ডে টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম। সিভিল সার্জন ডা. মো. একরাম উল্লাহ জানান, স্থায়ী কেন্দ্রের পাশাপাশি গণটিকার কেন্দ্রগুলোয় ১২ বছর বয়স থেকে শুরু করে তদূর্ধ্বরা টিকা গ্রহণ করেছেন।

রাজবাড়ী : জেলার ১৩৭ কেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কর্মসূচিতে সকাল থেকে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহিম টিটন বলেন, ‘আমরা একটি সফল কর্মসূচি পরিচালনার আশা করছি।’

টাঙ্গাইল : গণটিকায় জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াই প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। জেলায় এ দিন ১ লাখ ৯ হাজার ৮০০ জনকে টিকা দেওয়া দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রতি কেন্দ্রে ৩০০ জনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর