রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সিলেটে ফাঁদ রোমানিয়ার

জাল ভিসায় টাকা আত্মসাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

রোমানিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নামে সিলেটে প্রায় ৩০০ যুবকের কাছ থেকে অন্তত ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন এক ট্রাভেলসের মালিক। প্রত্যেকের কাছ থেকে ওই প্রতারক ১ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে অভিযুক্ত আমিন রহমান ট্রাভেলসে গিয়ে বিক্ষোভ করেছেন প্রতারিতরা। ট্রাভেলসের মালিক আমিন রহমানকে গ্রেফতার ও আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধারে তারা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। আমিন রহমান ট্রাভেলস সিলেট মহানগরের জিন্দাবাজার হক সুপার মার্কেটে অবস্থিত। প্রতারিতের বেশির ভাগ রোমানিয়ায় যাওয়ার জন্য আমিন রহমানকে টাকা দিয়েছিলেন। ভুক্তভোগীরা জানান, ৯০ দিনের মধ্যে রোমানিয়ায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় আমিন রহমান ট্রাভেলস। ওই বিজ্ঞাপন দেখে তারা যোগাযোগ করেন। তখন ট্রাভেলসের মালিক আমিন রহমান জানান, রোমানিয়ায় যেতে হলে ৬ লাখ টাকা লাগবে। প্রথমে বুকিং মানি হিসেবে ৫০ হাজার, ওয়ার্ক পারমিট আসার পর দিতে হবে আরও ৫০ হাজার টাকা। বাকি ৫ লাখ দিতে হবে ভিসা হওয়ার পর। আমিনের কথামতো রোমানিয়ায় যেতে আগ্রহীরা তার সঙ্গে স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তি করে টাকা দেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি রোমানিয়ায় ফ্লাইট দেওয়া শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ওইদিন বিকাল ৪টা থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দেন তিনি। অনেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাদের পাসপোর্টে লাগানো ভিসাও ছিল জাল। এ ছাড়া অনেককে ভিসা হওয়ার কথা বললেও তাদের পাসপোর্ট ফেরত দেননি আমিন। সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গোটারগ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন জানান, চুক্তি অনুযায়ী ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা তিনি আমিনের হাতে তুলে দেন। তাকে ওয়ার্ক পারমিটের কাগজ দেখিয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তিও করেন আমিন। আগামী ৩ মার্চ তার ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি তার পরিচিত একজনের মাধ্যমে ভারতের রোমানিয়া অ্যাম্বাসিতে ভিসার কপি পাঠান। তখন অ্যাম্বাসি থেকে জানানো হয় ওই ভিসা নকল।

 তিনি আমিন রহমান ট্রাভেলসের কর্মকর্তা রাজীবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান ভিসা সঠিক আছে। অ্যাম্বাসি অনেক সময় আসল ভিসাও জাল বলে। কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আমিনের মোবাইল বন্ধ পেয়ে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মাহবুবুর রহমান মঞ্জু নামে এক প্রতারিত যুবক জানান, ঢাকা থেকে তার ফ্লাইট ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি। এজন্য তিনি আগের দিন ঢাকায় যান। কিন্তু বিকাল ৪টা থেকে আমিনের মোবাইল বন্ধ পান। তখন বুঝতে পারেন টাকা নিয়ে আমিন পালিয়েছেন। হতাশ হয়ে সিলেট ফিরে আসেন। মঞ্জু জানান, তিনি বাড়ির জায়গা বিক্রি করে আমিনকে ৭ লাখ টাকা দিয়েছেন রোমানিয়া যাওয়ার জন্য। প্রতারণার বিষয়ে তিনি এবং আরও কয়েকজন ভুক্তভোগী থানায় গেলেও পুলিশ মামলা না নিয়ে কোর্টে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে। এদিকে গতকাল দুপুরে আমিন রহমান ট্রাভেলসে গিয়ে মারওয়া বেগম চৌধুরী নামে এক কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়। তিনি জানান, আমিন রহমান তাদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, একটি সমস্যায় পড়ে তিনি তার মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি সবার ফ্লাইট দেবেন। আর যদি না পারেন তবে সবার টাকা ফেরত দেবেন।

তবে উপস্থিত ভুক্তভোগীরা জানান, আমিন যে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে কথা বলেছেন সেটি দুবাইর। তিনি দেশেই গা ঢাকা দিয়ে দুবাইর নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর