মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

দক্ষিণ সুদানে শান্তিরক্ষীদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ

শিমুল মাহমুদ, দক্ষিণ সুদান থেকে ফিরে

আফ্রিকার স্বাধীন দেশ দক্ষিণ সুদানে প্রায় এক দশক ধরে চলছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কার্যক্রম। দেশটিতে বিশ্বের ৫২টি দেশের প্রায় ১৪ হাজার শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করছে। বর্তমানে এই মিশনের ভারপ্রাপ্ত ফোর্স কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল মাঈন উল্লাহ চৌধুরী। ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে নিয়োজিত মেজর জেনারেল মাঈন উল্লাহ চৌধুরী সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত ফোর্স কমান্ডারের দায়িত্ব পেয়েছেন। অন্যদিকে দক্ষিণ সুদানের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রাজধানী জুবার সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম আতিকুল রহমান। তারা বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা এখানে কঠোর পরিশ্রম ও পূর্ণ পেশাদারিত্বের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করছে। মেজর জেনারেল মাঈন উল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমি গর্বিত যে এই অন্তর্বর্তীকালে নতুন ফোর্স কমান্ডার না আসা পর্যন্ত আমাকে অ্যাকটিং ফোর্স কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি এ জন্য জাতিসংঘ, বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আমাকে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মিশনে এই দায়িত্বে পাঠানোর জন্য। তিনি বলেন, দক্ষিণ সুদানের এই মিশনটি খুব সহজ মিশন নয়। এখানে অনেক জটিলতা আছে। ভূ-রাজনৈতিক বিষয় জড়িত রয়েছে। যার ফলে এখানে ফোর্স কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অনেক চ্যালেঞ্জের। আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি যে, এই চ্যালেঞ্জিং কাজটি সবার সন্তুষ্টি সহকারে চালিয়ে নিতে পারছি। এখানে আমাদের দুই ধরনের সামরিক সদস্যরা কাজ করছে। তাদের একাংশকে আমরা বলি টিসিসি বা ট্রুপস কন্ডিবিউটিং কান্ট্রি থেকে যারা আসেন। আর কিছু সদস্য আসেন এমএলও বা মিলিটারি লিয়াজোঁ অফিসার বা মিলিটারি অবজারভার হিসেবে। তাদের কাছে কোনো অস্ত্র থাকে না। তারা শুধু সাদা পতাকা ও ইউএন পতাকা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যেতে পারেন। এই অস্ত্রসহ এবং অস্ত্র ছাড়া দুই অংশ মিলিয়ে বিশ্বের ৫২টি দেশের সদস্য এখানে রয়েছে। তাদের পুরো কাজটি সমন্বয় করতে হয় ফোর্স হেড কোয়ার্টার থেকে। তিনি বলেন, সামরিক পোশাকধারী যারাই আছেন তারা সবাই ফোর্সের আন্ডারে আছেন। বিভিন্ন সময়ে আমাদের ইঞ্জিনিয়ার যারা আছেন তাদের বসিয়ে না রেখে তাদের দিয়ে এ দেশের উন্নয়নের কাজগুলো করা হয়। এই উন্নয়ন কাজগুলো অবশ্য মিশন সদর দফতর সমন্বয় করে আমরা এক্সিকিউশন করি।

মেজর জেনারেল মাঈন উল্লাহ চৌধুরী বলেন, দক্ষিণ সুদানের আবহাওয়া ব্যতিক্রম। এখানে মাত্র দুটি ঋতু। এখানে একটি শুকনো মৌসুম এবং অন্যটি বর্ষা মৌসুম। এখন ক্লাইমেট চেঞ্জের কারণে বর্ষা মৌসুম বেড়ে ৭ মাস হয়ে গেছে। শুকনো মৌসুম কমে পাঁচ মাস হয়েছে। এই শুকনো মৌসুমেই আমরা ইঞ্জিনিয়ারদের বাইরে নিয়ে যাই কাজ করার জন্য। তখন অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করতে পারি। বাকি সময়টায় কাছাকাছি এলাকায় অভ্যন্তরীণ কাজগুলো করা যায়। তিনি বলেন, জাতিসংঘের ম্যান্ডেট অনুযায়ী আমাদের এখানকার মোট সদস্য শিলিং ১৭ হাজার। মোট ১৭ হাজার সদস্য আমরা এখানে রাখতে পারব। তবে বর্তমানে শান্তিরক্ষী ও স্টাফ অফিসার মিলিয়ে রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার জন।  

মেজর জেনারেল মাঈন উল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা এখানে ইনসেপারেবল ফোর্স হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তারা যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই প্রশংসিত হচ্ছেন। তারা সিভিল মিলিটারি কোঅপারেশন (সিমিক) কার্যক্রমের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে সহায়তা দিচ্ছে। এতে শুধু বাংলাদেশের সুনামই প্রস্ফুটিত হচ্ছে না, জাতিসংঘের ম্যান্ডেটটাকে সামনে নিয়ে যাওয়ার কাজটিও তারা করছে। এটি জাতিসংঘ অত্যন্ত ভালোভাবে উপলব্ধি করছে এবং নানা কাজের মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশকে আদরণীয় বলে মনে করছে। বাংলাদেশি সৈন্যদের যে কোনো জায়গায় পাঠাতে তারা আগ্রহী।  

এদিকে দক্ষিণ সুদানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রাজধানীর জুবা মাল্টি সেক্টরের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম আতিকুর রহমান বলেন, চায়না, রুয়ান্ডা, ইথিওপিয়া, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের কন্টিনজেন্ট রয়েছে আমাদের এই সেক্টরে। আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য অত্যন্ত গর্ববোধ করছি।

তিনি বলেন, এখানে নিয়োজিত বাংলাদেশের চারটি কন্টিনজেন্ট আনমিসের ম্যান্ডেট বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা দক্ষিণ সুদানের বেসামরিক জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করছে। বিভিন্ন দেশগঠনমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে এদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। নিজ ক্যাম্পের বাইরে এবং দূরবর্তী এলাকায় অন্যান্য দেশের বাহিনীকে ফোর্স প্রটেকশন দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রতি এদেশের জনগণের গভীর আস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের কাজের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ সুদানে একটি বিশেষ অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ সুদানে বাংলাদেশের সামরিক পর্যবেক্ষক, স্টাফ অফিসার এবং বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের ফিমেল এনগেজমেন্ট টিমগুলো অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর