বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি ২১ বছর পর গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রায় ২১ বছর পর পলাতক আসামি আজিজুল হক রানাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। ওই আসামি ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বোমা হামলার মাধ্যমে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি। ওই মামলায় ফায়ারিং স্কোয়াডে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। আজিজুল হক রানা দীর্ঘ ২১ বছর নানা পেশায় ছদ্মবেশ ধারণ করে পালিয়ে ছিলেন। অত্যন্ত গোপনে চালিয়ে আসছিলেন সাংগঠনিক কার্যক্রমও। তিনি নিজেকে লুকিয়ে রাখতে টেইলারিং, মুদি দোকানদার, বই বিক্রেতা, গাড়িচালক এবং সর্বশেষ প্রিন্টিং ও স্ট্যাম্প প্যাড বানানোর কাজ করে আসছিলেন। কখনো রুমান, কখনো শাহনেওয়াজ নামে নিজের পরিচয় দিতেন তিনি। মঙ্গলবার রাজধানীর খিলক্ষেত বাজারে বিশেষ অভিযান চালিয়ে রানা ওরফে শাহনেওয়াজ ওরফে রুমানকে (৪৪) গ্রেফতার করা হয়। গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিসিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, রানাকে গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে জিহাদি বই, দুটি মোবাইল ফোন, পেনড্রাইভ ও কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক জব্দ করা হয়। ২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাঁর সফরসঙ্গীদের হত্যার উদ্দেশ্যে কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠের সভামঞ্চের পাশে মাটির নিচে ৪০ কেজি ওজনের বোমা এবং হেলিপ্যাডের (ডহর পাড়া) পাশে মাটির নিচে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। মুফতি হান্নানের সঙ্গে বোমা পুঁতে রাখার দায়িত্বে ছিলেন রানা। ঘটনাটি প্রকাশ পেলে বোমা দুটি উদ্ধারের পর রানা কোটালীপাড়া থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন।

 আজিজুল হক রানা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিটিটিসি কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, তিনি ১৯৮৭ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরে জামিয়া আনোয়ারিয়া মাদরাসায় নূরানী বিভাগে ভর্তি হন। ওই মাদরাসার ওস্তাদ ও হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজিবি) সক্রিয় সদস্য মুফতি হান্নানের অনুসারী মাওলানা আমিরুল ইসলামের সংস্পর্শে আসেন। আমিরুল ইসলাম তাকে হুজিবিতে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করেন। ওই মাদরাসায় মুফতি হান্নান, আবদুর রউফ, আবদুস সালামসহ হুজিবির সিনিয়র সদস্যদের যাতায়াত ছিল এবং ওই মাদরাসায় গোপন বৈঠক মিলিত হতেন। গ্রেফতার আজিজুল হক রানা হুজিবিতে যোগদানের পর অন্য ছাত্রসহ প্রশিক্ষণ ও তালিম নেওয়ার জন্য হুজিবি নেতা মুফতি ইজহারের চট্টগ্রামের লালখান মাদরাসায় যান এবং তালিম নেন। তালিম শেষে সেখানে তিনি বোমা তৈরি, আত্মরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। মুফতি হান্নান সংগঠনের অপারেশনাল কার্যক্রমের জন্য জিহাদি বিশ্বস্ত কয়েকজন লোক সংগ্রহ করার জন্য মাওলানা আমিরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেন। মাওলানা আমিরুল রানাকে নির্বাচন করেন। সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমিরুল ইসলাম তাকে একটি পত্র লিখে গোপালগঞ্জ বিসিক এলাকার সোনার বাংলা সাবান ও মোমবাতি তৈরির কারখানায় পাঠান এবং মুফতি হান্নানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে মাওলানা আমিরুল ইসলামের দেওয়া পত্রটি হস্তান্তর করেন। মুফতি হান্নান তাকে সংগঠনের নিয়মকানুন সম্পর্কে বুঝিয়ে দেন এবং আজিজুল হকের নাম পরিবর্তন করে ছদ্মনাম ‘শাহনেওয়াজ’ দেন। আজিজুল হক নতুন নাম শাহনেওয়াজ পরিচয়ে আনুমানিক ১৫ দিন মোমবাতি প্যাকিংয়ের কাজ করেন। বিশ্বস্ততা অর্জন করলে কারখানার পেছনে একটি কক্ষে গোপন বৈঠকে উপস্থিত থাকার অনুমতি পান। কারখানায় মোমবাতি ও সাবান তৈরির আড়ালে বোমা তৈরির কাজ চলত। বোমা তৈরির কাজে আজিজুল হকসহ ইউসুফ ওরফে মোসহাব, মেহেদী হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদ, ওয়াসিম আক্তার ওরফে তারেক হোসেন, মহিবুল ওরফে মফিজুর রহমান, শেখ এনামুল হক, আনিসুল ইসলাম ওরফে আনিসসহ আরও কয়েকজন ছিলেন।  আজিজুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হলেও এখনো আরও চারজন পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন- লোকমান, ইউসুফ, মোসহাব হাসান ওরফে রাশু, শেখ মো. এনামুল হক। এর আগে গত বছরের ২১ নভেম্বর ২০ বছর পলাতক থাকা এক আসামিকে রাজধানীর ডেমরা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতার ওবায়দুর রহমান ইবনে আবদুল্লাহ (৪১) ২০০১ সালে বানিয়ারচর ক্যাথলিক চার্চে বোমা হামলার ঘটনায় করা মামলার আসামি।

সর্বশেষ খবর