শনিবার, ৫ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

কোন্দল নিরসনে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ

দফায় দফায় বৈঠক জেলা উপজেলা নেতা এবং দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে

রফিকুল ইসলাম রনি

কোন্দল নিরসনে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ

টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে স্থানীয় সংগঠনের নেতাদের দূরত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। অবস্থাটা সামনের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটিকে বড় ধরনের পরীক্ষায় ফেলতে পারে। এ দুশ্চিন্তা থেকেই দলীয় নেতারা কোন্দল নিরসনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। 

দলীয় সূত্র মতে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জেলা-উপজেলায় গিয়ে বৈঠক করছেন। একই সঙ্গে বেশি কোন্দলপূর্ণ জেলা-উপজেলার নেতাদের ঢাকায় ডেকে উভয় পক্ষকে নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত বুধ ও বৃহস্পতিবার চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ-উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, দলীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়রদের নিয়ে বৈঠক করেন চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দুই দিনব্যাপী এ বৈঠকে জেলা-উপজেলা নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতা, এমপি-মন্ত্রীদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ পেয়েছে। নেতা-কর্মীদের পাশ কাটিয়ে চলা, নিজস্ব বলয় তৈরি করাসহ নানা বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জেলার নেতারা। চাঁদপুরে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কারও কারও বিরুদ্ধেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন জেলা-উপজেলার নেতারা। কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর এক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি প্রভাব খাটিয়ে দলের দুঃসময়ের নেতা ও জনপ্রতিনিধিকে ডিজিটাল আইনে মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছেন। এ নিয়ে হট্টগোলও হয়েছে সভায়। আরেক সম্পাদকম লীর সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, দলের নেতা-কর্মী বাদ দিয়ে কতিপয় পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়ে চলেন তিনি। এ ছাড়া এমপিদের প্রতি অভিযোগও তুলেছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। আবার একজন এমপি তার বক্তব্যে নিজের অসহায়ত্বও ফুটিয়ে তুলেছেন। দুই দিনের বৈঠক শেষে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেন।

জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কোন্দল নিরসন এবং নেতায় নেতায় ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব কমানোর লক্ষ্যেই তৃণমূলের নেতাদের ঢাকায় ডেকে আনা হচ্ছে জেলা-উপজেলা নেতাদের। গত ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় ডেকে এনে ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এ ছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে গিয়েও সংগঠনকে চাঙ্গা করতে বর্ধিত সভা, মতবিনিময় সভা এবং সম্মেলন করা হচ্ছে। গত দুই মাসে বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন জেলা-উপজেলা নেতাদের নিয়ে। সভাগুলোতে তৃণমূলের নেতাদের বক্তব্যেও বিভেদ, মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের দূরত্ব এবং দলে অনুপ্রবেশের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। সম্প্রতি তৃণমূলের অনেক স্থানেই আওয়ামী লীগে বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদ রীতিমতো সংঘাতে রূপ নিয়েছে। কিছুদিন পর পরই দেশের কোথাও না কোথাও নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। বিশেষ করে ইউপি নির্বাচনে কয়েকটি স্থানে নিজেদের মধ্যে সংঘাতে কয়েকজন নেতা-কর্মীর প্রাণও ঝরে গেছে। এসব ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ দলটির হাইকমান্ড। দ্রুত এসব দ্বন্দ্ব-কোন্দল মিটিয়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে হাইকমান্ডের নির্দেশেই এ ধারাবাহিক বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা স্বীকার করেছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের ভিতরে আধিপত্য বিস্তারের কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও সংঘাত থামানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এসব ঘটনায় দলটির নীতিনির্ধারক মহল রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এ কারণেই শক্ত হাতে দলের হাল টেনে ধরতে এবং তৃণমূলের দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দ্বন্দ্ব-কোন্দলে জর্জরিত জেলার নেতাদের ঢাকায় তলব করে বৈঠকের মাধ্যমে তা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে আমাদের দলের অন্যতম লক্ষ্যই হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চতুর্থ মেয়াদে দলকে ক্ষমতায় আনা। আর এ লক্ষ্যেই দেশের যেখানে যেখানে দলের সাংগঠনিক ক্ষেত্রে ছোটখাটো সমস্যা রয়েছে, দ্বন্দ্ব-কোন্দল রয়েছে- তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলে সারা দেশেই দলকে শক্তিশালী সাংগঠনিক শক্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য আমরা যেসব জেলায় সমস্যা রয়েছে তাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠকে বসে তা নিরসন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। দলের নেতারা জানান, মূলত তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটের সম্মেলন ও স্থানীয় এমপি এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে চলমান অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করতে চান দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বশেষ দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডসভায় বিভাগীয় দায়িত্বশীল নেতাদের এমন নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ সব ইউনিটের সম্মেলন শেষ করা হবে। চলমান কোন্দল ও দ্বন্দ্ব নিরসন করা হবে। মূলত তৃণমূল আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত ও সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নেত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামী লীগ যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ বড় একটি রাজনৈতিক দল। এ দলে নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা থাকে। সেই প্রতিযোগিতা কোথায়ও কোথায়ও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করছে। আমরা দ্বন্দ্ব নিরসন এবং সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে জেলা-উপজেলা সম্মেলনকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি জানান, রাজশাহী বিভাগে এখন মাত্র একটি জেলা সম্মেলনের বাকি। এ জেলার সম্মেলন শেষ হলে তিনি সংসদীয় এলাকায় গিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করবেন।

সর্বশেষ খবর