সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

বিষ কমছে না ঢাকার বাতাসে

মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে বিপজ্জনক পরিস্থিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিষ কমছে না ঢাকার বাতাসে

রাজধানী ঢাকার বাতাসে বিষের মাত্রা কমছেই না। গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩০ দিনে কখনোই স্বাস্থ্যকর ছিল না ঢাকার বাতাস। এ সময়ে সবচেয়ে কম দূষিত দিন ছিল ২৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার। সেদিনও বাতাসে দূষণের মূল উপাদান পিএম ২.৫ (অতিসুক্ষ্ম বস্তুকণা) ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭১ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া নিরাপদ সীমার চেয়ে ১৪ গুণ বেশি। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকার বাতাসে পিএম ২.৫-এর গড় মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭৭.৯ মাইক্রোগ্রাম। এদিকে দূষিত বায়ুর কারণে বাড়ছে শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগ।

বিশ্ব বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়ালের তথ্য মতে, মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে কখনো কখনো অস্বাস্থ্যকর থেকে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে ঢাকার বাতাস। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতি ঘনমিটার বাতাসে বিষাক্ত অতিসুক্ষ্ম বস্তুকণার গড় পরিমাণ ৭৭.৯ মাইক্রোগ্রাম হলেও, রাত ৮টায় ছিল ১১৬ মাইক্রোগ্রাম, যা নিরাপদ সীমার চেয়ে ২৩ গুণ বেশি। দূষণ থেকে বাঁচতে ঢাকাবাসীকে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখা, ঘরের বাইরে শরীরচর্চা না করা, মাস্ক ছাড়া বাইরে বের না হওয়া ও ঘরের বাতাস দূষণমুক্ত করতে বায়ু

বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র চালিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছে এয়ার ভিজ্যুয়াল। আর এ অতিসুক্ষ্ম বস্তুকণা ফুসফুসের গভীরে পৌঁছে মারাত্মক ক্ষতি করে। এদিকে ধুলার কারণে সারাক্ষণই ধূসর হয়ে থাকছে ঢাকার আকাশ। সরেজমিন দেখা গেছে, রাস্তার পাশের গাছগুলোর পাতায় জমেছে ধুলোর পুরু আস্তর। রাজধানীর মেগা উন্নয়ন প্রকল্প এলাকাগুলোয়, বিশেষ করে যেখানে সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে, সেখানে ধুলার কারণে সামনের ১০ ফুট দূরত্বের গাড়ির নম্বর প্লেটও দেখা যায় না। এসব প্রকল্প এলাকার আশপাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে বাসিন্দাদের ঘরের মেঝে, আসবাব দিনের মধ্যে কয়েকবার মুছেও পরিষ্কার রাখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। খিলক্ষেতের বাসিন্দা শাপলা আক্তার বলেন, ঘরের দরজা-জানালা সব সময়ই বন্ধ রাখি। তার পরও ঘর মোছার দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যে আবার ফ্লোরে ধুলো জমে। টি-টেবিলের কাচে জমা ধুলোয় আঙুল দিয়ে নাম লেখা যায়। এ ছাড়া দূষণ কমাতে সড়কে নির্মাণসামগ্রী না রাখতে দুই সিটি করপোরেশন নির্দেশ দিলেও এখনো রাজধানীর অলিগলিগুলো ইট-বালু-পাথরের দখলে। বালুর ওপর দিয়ে দ্রুতগামী যানবাহন ছুটে যাচ্ছে ধুলো উড়িয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি কোথাও ধুলা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে নির্মাণকাজ চলছে না। এ ছাড়া সড়কে কালো ধোঁয়া ছাড়া প্রচুর ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে একাধিক আইন রয়েছে। একাধিক সংস্থা এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত। তবে কেউ কাজ করছে না। রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. আবু রায়হান এ ব্যাপারে বলেন, সম্প্রতি সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ) নামক রোগটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ রোগটি বাংলাদেশে মৃত্যুর তৃতীয় কারণ। এ রোগের সঙ্গে বায়ুদূষণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর