সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে বিচারপতিদের

মন্ত্রিসভা বৈঠকে আইন উঠছে

উবায়দুল্লাহ বাদল

অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মাসিক ৭০ হাজার টাকা অবসরোত্তর বিশেষ ভাতা পাবেন। গৃহসহায়ক, গাড়িচালক, দারোয়ান সেবা, সাচিবিক সহায়তা এবং অফিস কাম-রেসিডেন্সের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় নির্বাহের জন্য তিনি জীবদ্দশায় এ টাকা প্রাপ্য হবেন। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের মতো বিচারকরাও ১৮ মাসের ছুটি নগদায়ন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

এ রকম বিধানসহ বিচারপতিদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন-২০২২ এর খসড়া প্রণয়ন করেছে আইন ও বিচার বিভাগ। আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত আইনের খসড়াটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন।

এ ছাড়া বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে সাক্ষ্য-প্রমাণ (সংশোধন) আইন-২০২২, পরিত্যক্ত সম্পত্তির বাড়ি (সম্পূরক বিধানাবলি) আইন-২০২২ এবং জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন-২০২২ এর খসড়া অনুমোদনের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা সচিবালয় থেকে বৈঠকে যোগ দেবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিচারক জানান, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিরা বর্তমানে সরকারি প্রটোকল পেলেও বিশেষ ভাতা পান না। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের মতো বিচারকরাও ১২ মাসের ছুটি নগদায়ন সুবিধা ভোগ করছিলেন। সেটা ছয় মাস বাড়িয়ে ১৮ মাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে আইনে। আইন মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, সামরিক শাসনামলে জারিকৃত অধ্যাদেশসমূহের বিষয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আইন ও বিচার বিভাগের আওতাধীন সুপ্রিম কোর্ট জাজ (লিভ, পেনশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ সময়োপযোগী করে নতুন আইন আকারে বাংলা ভাষায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন-২০২২ এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়। প্রস্তাবিত খসড়া আইনটির ওপর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত এবং গত ২৫ মে সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতিদের অংশগ্রহণে ফুলকোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি সময়োপযোগী করার উদ্দেশ্যে পূর্বের আইনের কিছু বিধান সংশোধন করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা পেনশন পুনঃস্থাপন সংক্রান্ত সুবিধাদি ইতোমধ্যে প্রাপ্ত হওয়ায় এবং চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ অনুসারে সরকারি কর্মচারীরা ১৮ মাসের ছুটি নগদায়ন সুবিধা ভোগ করায় বিচারকদের জন্য এরূপ সুবিধাদি খসড়া আইনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাছাড়া আইনজীবী হতে নিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের ভবিষ্যৎ তহবিল সংক্রান্ত বিধান সংযোজন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির অবসরোত্তর সুবিধা সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্তিরও প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান আইন অনুসারে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস থেকে বিচারক নিয়োগের বিধান থাকায় মূল আইনের সিভিল সার্ভিস শব্দগুলোর পরিবর্তে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস শব্দগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। খসড়া আইনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে চিফ জাস্টিস অব দ্য সুপ্রিম কোর্ট শব্দগুলোর স্থলে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সহজীকরণ আদেশ-২০২০ অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য পারিবারিক পেনশনের বিধানাবলি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। আনুতোষিক ও পারিবারিক পেনশন সম্পর্কে প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো বিচারক তার অবসরের পর বা তার মৃত্যুতে তার পরিবার যে গ্রস পেনশন প্রাপ্য হবে, তার অর্ধেক বাধ্যতামূলক সমর্পণ করতে হবে এবং সমর্পণ করা টাকার জন্য পেনশনযোগ্য কর্মকাল ৩ বছর বা অধিক কিন্তু ৫ বছরের কম হলে, অবসর গ্রহণের পর বা পূর্বে মৃত্যু হলে ৩ মাসের বেতনের সমপরিমাণ আনুতোষিক পাবেন।

গত ১৯ অক্টোবর ‘জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। আজকের বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। নীতিগত অনুমোদনের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জাকাত তহবিল গঠন করা হবে। প্রবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অর্থ যে কোনো তফসিলি ব্যাংকের জাকাত ফান্ডে জমা দিয়ে জাকাত আদায় করতে পারবেন। আর একটি বোর্ড থাকবে। ধর্মমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী এটির চেয়ারম্যান থাকবেন।

জাকাত বোর্ডে সদস্য থাকবেন ১০ জন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করে দেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে।

সর্বশেষ খবর