শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

নান্দনিক রূপে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল

প্রকল্প নিচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, এপ্রিলে অর্ধেকাংশের কাজ শুরু চ্যানেলের দুই পাশে ওয়াকওয়ে, বিনোদন স্থান ও সবুজায়ন করা হবে

হাসান ইমন

নান্দনিক রূপে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল

বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেলের বর্তমান অবস্থা এবং সি.এস অনুযায়ী প্রস্তাবিত গতিপথ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধার করতে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। পুরান ঢাকার মুসলিমবাগে আদি চ্যানেলটির শুরু থেকে রায়েরবাজার বেড়িবাঁধ সড়কের পশ্চিম পাশের খাল দিয়ে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত সংযুক্ত করা হবে। চ্যানেলের দুই পাশে ওয়াকওয়ে, সবুজায়ন, উন্মুক্ত স্থান ও বিনোদন স্পট তৈরি করা হবে। এতে ঢাকার একটি অংশের জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। আগামী এপ্রিলে অর্ধেকাংশের খনন ও নর্দমা অপসারণের কাজ শুরু হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর কামরাঙ্গীর চর সরকারি হাসপাতাল মাঠে এক নির্বাচনী জনসভায় এ আদি চ্যানেলটি পুনরুদ্ধার ও মহাপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য ডিএসসিসির তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকনকে নির্দেশ দেন। কিন্তু তা বেশি দূর এগোয়নি। বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নির্বাচিত হওয়ার পর কয়েকবার সরেজমিন আদি চ্যানেল পরিদর্শন করে নতুন করে উদ্যোগ নেন। এ বিষয়ে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। ইতোমধ্যে প্রকল্প পরামর্শক নেওয়ার কার্যক্রম চলছে। পরামর্শক নিয়োগের পর প্রকল্পের ডিপিপি করা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে অর্ধেকাংশের খনন, নর্দমা ও বর্জ্য অপসারণ কাজ আগামী মাসে শুরু হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নদী ও খালের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর মধ্যে ওয়াকওয়ে, সাইকেল লেন, বাচ্চাদের খেলার স্থান, সবুজায়ন, উন্মুক্ত স্থান, বিনোদন স্থান ও ড্রেনের পানি পরিষ্কারে (ইটিপি) করা হবে।’ প্রকল্পসূত্রে জানা যায়, কামরাঙ্গীর চরের মুসলিমবাগ, হাক্কুল এবাদ ব্রিজ (লোহারপুল),  রহমতবাগ, ব্যাটারিঘাট, কুড়ার ঘাট, পূর্ব রসুলপুর, নবাবগঞ্জ সেকশন, কোম্পানীঘাট পাকা ব্রিজ ঘেঁষা থেকে রায়েরবাজার পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল। প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এ চ্যানেল পুনরুদ্ধার করলে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা অনেকাংশেই সমাধান হবে। এ ছাড়া অবহেলিত কামরাঙ্গীর চর, লালবাগ, হাজারীবাগের পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে। অধিকতর বাসযোগ্য হবে। দখল প্রতিরোধ করার মাধ্যমে নদীটি পুরনো রূপে ফিরিয়ে নেওয়ার পর বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় ডিএসসিসি। এ ছাড়া বুড়িগঙ্গার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চ্যানেলটির জমি পুনর্দখল করে চ্যানেলটি পুনঃখনন করা হবে। কিছু জমি অধিগ্রহণ করে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। দুই পাড়ে বাঁধ তৈরি করে নির্মাণ হবে ওয়াকওয়ে। ইতোমধ্যে দুই পাশের নদীর জমির সীমানাও চিহ্নিত করা হয়েছে। উদ্ধার করা জমি কাজে লাগাতে নদীর দুই পাড়কে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে হাতিরঝিলের আদলে স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চারটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথাও চলছে। যে কোনো একটিকে নিয়োগ দিয়ে দ্রুত প্রকল্প নিতে চায় সংস্থাটি। তবে প্রাথমিকভাবে চ্যানেলের মুসলিমবাগ থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার অংশ খনন, নর্দমা ও বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম এপ্রিলে শুরু করবে ডিএসসিসি। ২০ মার্চের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে। এর জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ও নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ডিএসসিসির এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভালো। এ চ্যানেলটির বর্তমানে কিছু অংশ এমনভাবে দখল হয়েছে যার চিহ্নও নেই। এটা উদ্ধারে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। এ পরিকল্পনায় উচ্ছেদ, খনন, জমি অধিগ্রহণসহ নানা বিষয় থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাস্তবায়নে দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত আর্থিক চ্যালেঞ্জ। কারণ এটা বাস্তবায়নে অনেক টাকার প্রয়োজন। আগে এ টাকার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়ত চ্যানেলটির কিছু অংশের জমি দখল হয়ে গেছে। আবার কিছু দখলদার তাদের নিজ নামে কাগজপত্র তৈরি করেছেন। এগুলো উচ্ছেদ করতে গেলে মামলাও হতে পারে। এজন্য ডিএসসিসিকে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করতে হবে। তবে অর্ধেকাংশের খনন, নর্দমা ও পলি অপসারণ করা হলে ঢাকার কিছু অংশের জলাবদ্ধতা কমবে।’ এদিকে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল উদ্ধারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সংশোধিত নতুন ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) সরকারের কাছে সুপারিশ করেছেন। একই সঙ্গে প্রকল্পটির বাস্তবায়নে কারিগরি ও কৌশলগত সব সহায়তারও আশ্বাস দিয়েছেন। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সর্বাত্মক সহায়তা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে রাজউকের ড্যাপ প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলটি উদ্ধার করে সাংস্কৃতিক বলয় তৈরির প্রস্তাব রয়েছে ড্যাপে। প্রস্তাবে সিএস ও আরএস নকশা অনুযায়ী চ্যানেলটি উদ্ধার করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এর দুই পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ সাংস্কৃতিক বলয় নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। এজন্য ডিএসসিসির নেওয়া উদ্যোগকে টেকনিক্যালি ও কৌশলগত যে কোনো প্রকার সহায়তা লাগলে তা আমরা করব। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে এটি বেশ ভালো উদ্যোগও বটে।’

সর্বশেষ খবর