বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

পাসপোর্টের অপেক্ষায় ৩ লাখ মানুষ

সার্ভার ডাউন, আবেদন করতে পারছেন না কেউ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাসপোর্টের অপেক্ষায় ৩ লাখ মানুষ

পাসপোর্ট পেতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ। পাসপোর্ট হাতে পেতে অপেক্ষায় রয়েছে ৩ লাখ মানুষ। অন্যদিকে নতুন পাসপোর্টের আবেদন বা নবায়ন করার জন্য আবেদন করা যাচ্ছে না গত আট দিন ধরে। এমনকি পাসপোর্টের জন্য যারা আবেদন করেছেন তারাও ওয়েবসাইটে গিয়ে বা এসএমএস পাঠিয়ে পাসপোর্টের আপডেড তথ্য জানতে পারছেন না। আগে যারা আবেদন করেছেন তারাও নির্দিষ্ট দিনে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে সার্ভার সমস্যার কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে কেউ আবেদন জমা দিতে পারছেন না, আবার কেউ জমা না দিতে পেরে ফিরে যাচ্ছেন। এতে দেশি-বিদেশি আবেদনকারীরা বিপাকে পড়েছেন।

এদিকে, সময়মতো পাসপোর্ট না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন পাসপোর্ট গ্রহীতারা। অনেকের ভিসা, টিকিট নষ্ট হচ্ছে। এ জন্য শিক্ষার্থী এবং রোগীরাও সমস্যা পোহাচ্ছেন তীব্রভাবে। আঞ্চলিক অফিসগুলোতে পাসপোর্টের জন্য ধরনা দিতে দিতে, সেখান থেকে পাসপোর্ট গ্রহীতাদের ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। ঢাকার আগারগাঁওয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পাসপোর্ট পেতে ভিড় করছেন। সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান পাসপোর্ট অফিসে এখন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পাসপোর্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সিস্টেম আপডেড ও নতুন ডাটা সেন্টার স্থাপনের জন্য কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, যার ফলে পাসপোর্ট গ্রহীতারা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারছে না। এ ছাড়া নতুন পাসপোর্টের আবেদন ও নবায়ন করতেও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন, ১৫ ও ১৬ মার্চ ই-পাসপোর্ট সেবা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এই দুই দিন ই-পাসপোর্টের নতুন আবেদন জমা না নেওয়ার পাশাপাশি পাসপোর্ট বিতরণও বন্ধ ছিল। ১৫ ও ১৬ মার্চ অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রাপ্ত আবেদনকারীকে ২০ ও ২১ মার্চ সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ঢাকার উত্তরার মতো যশোরেও তাদের একটি ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ওই সেন্টারে ডিজাস্টার রিকভারি সাইট (ডিআরএস) পরীক্ষামূলক কার্যক্রম এবং সিস্টেম আপডেটের জন্য দুই দিন সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ১৭ মার্চ থেকে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু হলেও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে পাসপোর্ট গ্রহীতাদের সেবা প্রদানে বিঘ্ন ঘটছে। গতকাল বিকাল ৩টা থেকে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম ঠিক হয়েছে। পাসপোর্ট নবায়ন করতে উত্তরা পাসপোর্ট অফিসে আসেন আলিজা নামে এক ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, রবিবার সকাল ১০টায় উত্তরা পাসপোর্ট অফিসে যাই। লাইনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর জানানো হয় সার্ভারে সমস্যা। দেড়টা পর্যন্ত দাঁড়িয়েছিলাম। বেলা ২টায় জমা দিতে না পেরে ফিরে আসি। পরদিন আবেদন জমা দিয়ে এসেছি। ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদ বলেন, আগের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আমার নতুন পাসপোর্ট আবেদন করতে হবে। আবেদন করার জন্য কয়েকদিন ধরে কম্পিউটারের দোকানে যাচ্ছি, তারা বারবার সার্ভার ডাউনের কথা বলছে। কোনো ধরনের উপায় না দেখে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গেলাম, তারাও কবে ঠিক হবে কিছু বলতে পারল না। আবু জাফর মোহাম্মদ আরিফ নামে একজন ফেসবুকে ই-পাসপোর্টের ওয়েবসাইটে ঝুলানো নোটিস শেয়ার দিয়ে বলেন, এই দুরবস্থা কখন শেষ হবে, কেউ কি জানেন? জানা গেছে, ঢাকা ও যশোরে ই-পাসপোর্টের জন্য সার্ভার রয়েছে। ঢাকায় সার্ভারটি মূল ও যশোরেরটি সেকেন্ডারি। ঢাকার সার্ভার কোনো কারণে কার্যকর না থাকলে যশোরের সার্ভারটির কার্যকারিতা যাচাই করতে পরীক্ষামূলক চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় ডিআইপি। ১৫ ও ১৬ মার্চ যশোরের সার্ভার কার্যকর হয় এবং পরীক্ষাও সফল হয়। তবে যশোর সার্ভার থেকে ফের ঢাকার সার্ভারে কার্যক্রম শুরু করতে গিয়েই জটিলতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে অনলাইনে নতুন ই-পাসপোর্টের আবেদন করা যাচ্ছে না। তবে পাসপোর্ট মুদ্রণ, বিতরণসহ অন্যান্য কার্যক্রম চলেছে। এ বিষয়ে ডিআইপির ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাদাত হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উত্তরার দিয়াবাড়ীতে পাসপোর্টের মেইন ডাটা সেন্টার অবস্থিত। যাশোরেও অলটারনেটিভ একটি ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হয়। সেজন্য ১৪ মার্চ রাত থেকে উত্তরার ডাটা সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়। সার্ভারে মেইনটেইনস লেখা দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ ই-পাসপোর্টের দায়িত্বে থাকা জার্মান প্রতিষ্ঠান তাদের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করে। ১৬ মার্চ যশোর থেকে ই-পাসপোর্ট সেবা দেওয়া হয়।

পরে ১৬ মার্চ রাতেই যশোর ডাটা সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৭, ১৮ ও ১৯ মার্চ সরকারি ছুটি ছিল। ১৯ মার্চ রাতেই উত্তরা দিয়াবাড়ীতে অবস্থিত ই-পাসপোর্টের মেইল ডাটা সেন্টার ওপেন করা হয়। কিন্তু নেটওয়ার্ক কাজ করছিল না। পরে তা ঠিক করা হয়। এরপর কিছু কাজ করা গেছে, কিছু কাজ করা যাইনি। যশোরের ডাটা সেন্টার থেকে উত্তরার মূল ডাটা সেন্টারে ১১ হাজার ডাটা আসেনি। ২০ ও ২১ মার্চ সেসব ডাটা উত্তরার মূল ডাটা সেন্টারে আনা হয়। ২১ মার্চ ইনরোলমেন্ট বা প্রিন্ট করা যাচ্ছিল না।

আজ (গতকাল) বিকাল ৩টা থেকে ই-পাসপোর্টের সার্বিক কার্যক্রম ঠিক হয়েছে। ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৩৩ লাখ আবেদন জমা পড়েছে। প্রিন্ট হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ পাসপোর্ট। ২৮ লাখ পাসপোর্ট হাতে পেয়েছে গ্রাহকরা। ২ লাখ পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়ে অফিসগুলোতে রয়েছে। এ ছাড়া ৩ লাখ পাসপোর্ট প্রিন্টের অপেক্ষায় রয়েছে। উত্তরার দিয়াবাড়ী ও যশোর থেকে ই-পাসপোর্ট প্রিন্ট দেওয়া যাবে। ফলে গ্রাহকরা আবেদনের পর নির্দিষ্ট সময়ে ই-পাসপোর্ট হাতে পাবে বলে আশা করছি। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই ডিআইপি এবং জার্মানি ভেরিডোস জিএমবিএইচ সংস্থা ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের (ই-পাসপোর্ট) জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে পর্যায়ক্রমে ৭০টি আঞ্চলিক ও বিভাগীয় অফিস এবং ১২টি বিদেশি মিশনে চালু করা হয় ই-পাসপোর্ট সেবা।

সর্বশেষ খবর