বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

সংস্কার ও মামলা জটিলতায় পড়ে আছে ডিএসসিসির ২৯ মার্কেট

হাসান ইমন

সংস্কার ও মামলা জটিলতায় পড়ে আছে ডিএসসিসির ২৯ মার্কেট

সংস্কার, মামলা ও ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটসহ নানা জটিলতায় বেহুদা পড়ে আছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৯ মার্কেট। এর মধ্যে সংস্কার ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২২টি মার্কেট বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে মামলা জটিলতায় বন্ধ ৭ মার্কেট। এসব মার্কেট বন্ধ থাকায় রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সংস্থাটি। তবে কিছু মার্কেটের নির্মাণ কাজ শেষ করে বরাদ্দের নামে টাকা নিয়ে দোকান বুঝিয়ে দেয়নি এমন তথ্য উঠে এসেছে সিটি করপোরেশনের প্রতিবেদনে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, বর্তমানে আমাদের গুটিকয় মার্কেটে নির্মাণ, সংস্কার ও মামলা সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। এর মধ্যে ৯৩টি মার্কেটের মধ্যে ৭টির ৩৮টি দোকান নিয়ে মামলা চলছে। এগুলো দ্রুত সমাধান করতে আইন বিভাগ কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারের চুক্তি বাতিল করেছি। নতুন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। ফুলবাড়িয়া মার্কেটসহ কয়েকটি মার্কেটের সংস্কার কাজ চলছে। সেগুলোও খুব দ্রুত সমাধান হবে। মেয়র বলেন, রমনা মার্কেটের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় পুলিশের কিছু কার্যক্রম আছে। সেটারও সমাধান খুব দ্রুতই হবে। এ ছাড়া রমনা মার্কেটের বাকি দোকানের বরাদ্দপ্রাপ্তদের দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আজিমপুর আধুনিক নগর মার্কেট ও সিদ্দিক বাজার মার্কেটের কাজ দ্রুত গতিতে চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা সেগুলোর লটারি করে বরাদ্দ দিয়েছি। কিছুদিন আগে দোকান বরাদ্দ কমিটির সভায় সেগুলো চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর আগামী মাসে ঢাকেশ্বরী রোড সাইড মার্কেট, ইসলামবাগ মার্কেট ও মেরাদিয়া বাজার মার্কেটে বরাদ্দ দেওয়ার লক্ষ্যে লটারির আয়োজন করতে যাচ্ছি।  

ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, সংস্কার ও নির্মাণ জটিলতায় পড়ে আছে ২২ মার্কেট। এর মধ্যে রমনা শপিং কমপ্লেক্স ২০১১ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ৬ তলাবিশিষ্ট এই মার্কেটে ১০০টি দোকানই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সম্পত্তি নিয়ে জটিলতা থাকায় মার্কেটটি এখনো সংস্থাটির রাজস্ব বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ঢাকেশ্বরী রোড সাইড মার্কেটটির অবস্থা বর্তমানে খুবই জরাজীর্ণ। এটি পুনর্নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও পুরনো অবকাঠামো অপসারণের বিষয়ে আদালতে মামলা থাকায় নির্মাণ কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। তবে বরাদ্দপ্রাপ্তদের থেকে ৭৮ লাখ টাকা আদায় করেছে সংস্থাটি। একই অবস্থা ইসলামবাগ মার্কেট কাম-কমিউনিটি সেন্টার অ্যান্ড কমার্শিয়াল অফিসটি ২০১৩ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এখনো কাজ শেষ না হওয়ায় কাউকে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তবে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সালামি বাবদ ৮৪ লাখ টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়েছে। গোলাপবাগ মাঠ দর্শক গ্যালারি মার্কেটটি ২০১৯ সালে সংস্কার কাজ শুরু হয়। এখনো কাজ চলমান থাকায় দোকান ভাড়া ও ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ফি বন্ধ রয়েছে। ২ নম্বর পলাশী মার্কেটের নির্মাণ কাজ এখনো শুরু হয়নি। ইতোমধ্যে বরাদ্দপ্রাপ্তদের কাছ থেকে সালামি বাবদ ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা আদায় করেছে। চানখাঁরপুল মার্কেটটির নির্মাণ কাজ ২০১৭ সালে শুরু হলে এখনো কাজ শেষ হয়নি। তবে বরাদ্দপ্রাপ্তদের কাছ থেকে অগ্রিম সাড়ে ১১ লাখ টাকা নিয়েছে সংস্থাটি। এখনো কাজ শেষ না হওয়ায় রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ডিএসসিসি। এ ছাড়া নবাবগঞ্জ কাঁচাবাজার, পরীবাগ সুপার মার্কেট, নওয়াব ইউসুফ কাঁচা মার্কেট, মিরনজুল্লাহ কাঁচাবাজার, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্স ভবন-৩, বাংলাদেশ মাঠ দর্শক গ্যালারি মার্কেট, কাপ্তানবাজার রোড সাইড মার্কেট, ৭৬ নম্বর ওয়ার্ড খেলার মাঠ সংলগ্ন মার্কেট, যাত্রাবাড়ী পাইকারি কাঁচাবাজার, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার, সূত্রাপুর পাকা ও কাঁচা মার্কেট এবং জয় মার্কেটগুলো সংস্কার জটিলতায় পড়ে আছে। এ ছাড়া সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টার মার্কেটের ৪৯টি দোকানের মধ্যে ৪৭টি দোকান সুইপাররা অবৈধ দখল করে রেখেছে। এসব দোকান অবৈধ দখলে থাকায় ব্যবসায়ীদের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না- সিটি করপোরেশনের প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য উঠে এসেছে।

এদিকে মামলা জটিলতা থাকায় কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্স ২ নম্বর ভবন, উদয়ন মার্কেট ও চিত্রমহল সংলগ্ন মার্কেট বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া কাপ্তানবাজার ১ নম্বর ভবনটির ৮৮ দোকান, নিউ সুপার মার্কেটের ৪১টি দোকান, নিউমার্কেট বনলতা কাঁচা বাজারের ১৩টি, সেগুনবাগিচা কাঁচা মার্কেটের ১০টি দোকান বন্ধ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর