রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলতে বাধা দিচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সি সিন্ডিকেট

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য পুনরায় শ্রমবাজার খোলার পর সবকিছু স্বাভাবিক গতিতে সম্পন্ন করে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। এরই মধ্যে প্রায় দেড় লাখ ভিসাও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। অথচ এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সইয়ের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কর্মী পাঠানো শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ। তথ্য বলছে, এ ঘটনার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি সিন্ডিকেট। বিশেষ করে অভিযোগের তীর বায়রার একজন প্রভাবশালী নেতার দিকে। যিনি নানাভাবে মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারটি যেন খুলতে না পারে গোপনে সেই তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ ৪০ মাস বন্ধ থাকার পর অন্যতম বড় শ্রমবাজারটি খুলে দেওয়ায় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এটি বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় বাজারটি নেপালের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এর মাশুল গুনতে হতে পারে কয়েক লাখ বেকার কর্মীর। এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে করোনাভাইরাসের কবলে পড়ে অনেক বেকার কর্মী হতাশায় ভুগছেন। মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের মনে আশার সঞ্চার হলেও তা হতাশায় রূপ নিতে যাচ্ছে। জানা গেছে, বর্তমানে সৌদি আরব এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মী পাঠাচ্ছে বাংলাদেশের প্রায় ৬০০টি রিক্রুটিং এজেন্সি। তারা উচ্চমূল্যে ভিসা কেনার অজুহাতে প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলে অভিবাসী কর্মীরা মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে এজেন্সিগুলো মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর মতো কর্মী পাবে না, অথবা কর্মী পেলেও এত উচ্চমূল্যে ভিসা বিক্রি করতে পারবে না-এই ক্ষতির আশঙ্কায় মালয়েশিয়া শ্রমবাজার খোলার বিষয়টিতে অযৌক্তিকভাবে বিরোধিতা করছে এজেন্সিগুলো।

অভিযোগ রয়েছে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার খোলার উদ্যোগের বিরোধিতা করছে ওই প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। তারা ব্যক্তিগতভাবে প্রভাব প্রতিপত্তি ও মিডিয়াকে ব্যবহার করে গুজব ছড়াচ্ছেন এবং পদে পদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন।

উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় বর্তমানে ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। ২০১৮ সালে প্রায় পৌনে ২ লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে দুই দেশের সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিল। তখন অন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এর প্রতিবাদ জানায়। ওই বছরই সেপ্টেম্বর মাসে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে শ্রমবাজার বন্ধ আছে।

এদিকে করোনা মহামারি শুরু হলে বিশ্বের অনেক দেশের মতো মালয়েশিয়াও বিদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয়। করোনা পরিস্থিতি উন্নতির পর দুই দেশের দীর্ঘ আলোচনায় গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সমঝোতা স্মারকে সই করে দুই দেশ। এর এক মাস পর থেকেই কর্মী পাঠানো শুরু করার কথা ছিল। সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর মালয়েশিয়া কর্মী নিতে বিভিন্ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়েছে। ইতোমধ্যে দেড় লাখের বেশি ভিসাও প্রস্তুত করে রেখেছে দেশটি। কিন্তু বাংলাদেশের দিক থেকে দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। এমনকি কারিগরি বিষয়গুলোও চূড়ান্ত হয়নি আজও। এর মধ্যে ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া’ হয়ে দেখা দিয়েছে কতিপয় রিক্রুটিং এজেন্সি। রিক্রুটিং এজেন্সি সিন্ডিকেট নিজেদের স্বার্থের কারণে আটকে দিচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। ফলে পুরো বিষয়টি নিয়ে এখন চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর