শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

আসছে বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন

মানিক মুনতাসির

আসছে বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন

বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে আগামী বছরের শেষে। আর সংবিধান অনুযায়ী ২০২৩ সালের শেষে কিংবা ২০২৪ সালের শুরুতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাকি রয়েছে আর মাত্র তিন মাস। এরই মধ্যে নতুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু করেছে অর্থ বিভাগ ও এনবিআর। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, বিশেষজ্ঞ ও সংগঠনের সঙ্গে ধারাবাহিক প্রাক-বাজেট আলোচনাও শুরু করেছে এনবিআর। এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসছে বাজেটের বিভিন্ন অগ্রাধিকারের বিষয়ও ঠিক করছে সরকার। চলমান মেগা প্রকল্প হিসেবে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেলসহ চলমান বৃহৎ প্রকল্পগুলোর কাজ নির্বাচনের আগেই শেষ করতে চায় সরকার। এ জন্য আসছে বাজেটে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবে বলে মনে করেন সরকার-সংশ্লিষ্টরা। অর্থ বিভাগ ও এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে করোনাভাইরাস মহামারি। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি প্রায় কেটে গেছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্কও নেই। কিন্তু সরকারের ভিতরে ও বাইরে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম ওঠানামা করছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে খাদ্যপণ্যের দাম সহনীয় থাকলেও বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের বাজারে চলছে অরাজক পরিস্থিতি। এর একটা নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে রাজস্ব খাতে। কেননা মানুষের হাতে টাকার প্রবাহ কমে গেছে। অন্যদিকে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে পণ্যমূল্য। ফলে মানুষ ভোগের মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে রাজস্ব আয়ের ওপর দীর্ঘমেয়াদি এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের মেয়াদও প্রায় শেষের দিকে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করাও সরকারের জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। চলমান বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সমাপ্ত করতে পারলে আসছে নির্বাচনে ভোটারদের আকৃষ্ট করাও সহজ হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য। এ জন্য আগামী বাজেটে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটা অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, গত বছরের মতোই এবারের প্রেক্ষাপটটা খুবই চ্যালেঞ্জের। মানুষের আয় কমে গেছে। রাজস্ব আদায় পরিস্থিতিতেও বিরাজ করছে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। এর সঙ্গে যুক্ত হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফলে আসছে বছরের বাজেটটাও কঠিন এক চ্যালেঞ্জিং সময়ে উপস্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। এ বছর বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকেই প্রাধান্য দিতে তাগিদ দিয়েছেন তিনি। সূত্র জানায়, নতুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরের বাজেটের ১১ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। আসছে বছরের বাজেটে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন জিডিপির প্রবৃদ্ধির টার্গেট ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে (২০২১-২২) বাজেটে এটার টার্গেট ৭ দশমিক ২ শতাংশ। সামনের বছর বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশে সীমিত রেখে এনবিআরকে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে ঠিক করেছে সরকার, যা জিডিপির ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়টা কেটেছে করোনা মহামারিতে। সে সময় দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এরপর ২০২১-২২ অর্থবছরে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বাজেট ঘোষণা করা হয়। বিপর্যস্ত অর্থনীতি চাপ সামলে অনেকটা ঘুরেও দাঁড়ায়। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে স্বাভাবিক গতি ফেরার আগেই বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে ওমিক্রনের আঘাত, যা থেকে পৃথক নয় বাংলাদেশও। এমন পরিস্থিতিতে সামগ্রিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আসছে নতুন অর্থবছরের বাজেট। এই বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকার প্রাক্কলিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে পরিচালন ও অন্যান্য খাতের ব্যয় ধরা হতে পারে ৪ লাখ ২৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে এসব অঙ্কের কোনোটাই এখনো চূড়ান্ত নয়। চলতি অর্থবছর ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, যা ছিল জিডিপির ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

সর্বশেষ খবর