মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী, সামাল দিতে হিমশিম

নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে রাজধানীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর ভিড়। সাতটি অস্থায়ী তাঁবু টানিয়েও জায়গা সংকুলান হচ্ছে না হাসপাতালে।

আইসিডিডিআরবিতে ২৩ মার্চ ১ হাজার ২৩৩ জন, ২৪ মার্চ ১ হাজার ১৭৬ জন, ২৫ মার্চ ১ হাজার ১৩৮ জন, ২৬ মার্চ ১ হাজার ২৪৫ জন ও ২৭ মার্চ ১ হাজার ২৩০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৯৯২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের ফটক দিয়ে অসংখ্য রোগী ও তাদের স্বজনরা ঢুকছেন। রোগীদের অধিকাংশই সিএনজি ও অ্যাম্বুলেন্সে আসছেন। কিন্তু হাসপাতালের ফটকে গিয়ে পর্যাপ্ত হুইল চেয়ার পাচ্ছেন না। অনেক রোগীকে কোলে করে হাসপাতালের ভিতর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এর মধ্যে জরুরি বিভাগের সামনে রোগী ও স্বজনদের ভিড় বেশি দেখা গেছে। রোগীদের তাৎক্ষণিকভাবে ভর্তি করতে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও দৌড়ঝাঁপ করছেন। আইসিডিডিআরবির এক চিকিৎসক জানান, ঢাকা মহানগর ও আশপাশ এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। ঘণ্টায় ৬০ জনের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন। আইসিডিডিআরবির ৬০ বছরের ইতিহাসে এত রোগীর চাপ তারা দেখেননি। ফলে হাসপাতালের শয্যার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় তাঁবু টানিয়ে ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছে আইসিডিডিআরবি। এখন আইসিডিডিআরবিতে প্রায় ২ হাজার রোগী ভর্তি আছেন। আইসিডিডিআরবি সূত্র বলছে, সারা বছর দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ ডায়রিয়া রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে রোগীর সংখ্যা কিছু বাড়ে। সাধারণত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে শেষ সপ্তাহে রোগী চূড়ান্তভাবে বাড়ে। কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেছেন, গ্রীষ্ম মৌসুম আসার আগেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ বাড়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তিনি বলেন, দৈনন্দিন কাজকর্মে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করলে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ও দৈনন্দিন সুপেয় পানি পান করলে ডায়রিয়া রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। সরকারি হাসপাতালগুলোতে খাবার স্যালাইন, আইভিফ্লুইড স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণের সরবরাহ রয়েছে। অল্প ডায়রিয়া থাকতেই যে কোনো অবস্থাতে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। একুশ শতাব্দীতে ডায়রিয়া একেবারে চলে যায়নি। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

এ ব্যাপারে ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গরম বাড়ায় পিপাসায় মানুষ বাইরের বিভিন্ন দোকান থেকে শরবত, আখের রস কিনে খাচ্ছে। স্কুলগেটের বাইরে শিশুরা বিভিন্ন খাবার কিনে খাচ্ছে। এসব কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া বাড়ছে। বমি বমি ভাব, গলা শুকিয়ে যাওয়া, বারবার পাতলা পায়খানা, খিঁচুনি হলে দ্রুত হাসপাতালে আসতে হবে। পর্যাপ্ত স্যালাইন খেতে হবে এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া যাবে না।

সর্বশেষ খবর