মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

জেল জরিমানার বিধান রেখে গণমাধ্যমকর্মী বিল সংসদে

নিজস্ব প্রতিবেদক

কোনো গণমাধ্যমকর্মীর আইনগত অধিকার লঙ্ঘন করলে গণমাধ্যম মালিক বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত বা গণমাধ্যমে মালিকের দায়িত্ব পালনকারী (সম্পাদক) ব্যক্তিকে ছয় মাসের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে গণমাধ্যমকর্মী(চাকরির শর্তাবলি) বিল সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশনে গতকাল বিলটি উত্থাপন করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। পরে বিলটি অধিকতর যাচাই-বাছাই করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। প্রস্তাবিত আইনের বিলে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর অধীন নির্ধারিত মজুরি, মজুরি বোর্ডের সিদ্ধান্ত, দাখিলকৃত দরখাস্ত, প্রকাশিত মজুরির হার এবং গঠিত ভবিষ্য তহবিল এ আইনে ন্যস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত আইনের অধীন বিধি মোতাবেক মজুরি নির্ধারিত, ন্যূনতম ওয়েজ বোর্ড কর্তৃক সিদ্ধান্ত প্রদত্ত, দরখাস্ত দাখিল, মজুরি প্রকাশিত এবং ভবিষ্য তহবিল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ হেফাজতের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। আইনের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে- ‘গণমাধ্যমকর্মীদের কল্যাণ ও চাকরির শর্ত ও কর্মপরিবেশসহ গণমাধ্যমকর্মীদের আইনি সুরক্ষা প্রদানের জন্য “গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন-২০২২” নামে আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে এ বিল উপস্থাপন করা হলো। বিলে গণমাধ্যমকর্মীদের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ৪৮ ঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর অতিরিক্ত কাজ করালে ওভার টাইম দিতে হবে। এ ছাড়া কোনো গণমাধ্যমকর্মীর বয়স ৫৯ বছর হলে বা ২৫ বছর চাকরি পূর্ণ করার পর অবসর গ্রহণের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে গণমাধ্যম মালিক অবসর গ্রহণকারীকে প্রতি পূর্ণ বছরের জন্য ৩০ দিনের মূল বেতন প্রদান করতে হবে। বিলে এ আইনের অধীনে গণমাধ্যম মালিক ও কর্মীদের সম্পর্ক ও তাদের মধ্যকার বিরোধ উত্থাপন ও নিষ্পত্তি, নিম্নতম বেতন হার নির্ধারণের বিধান রাখা হয়েছে এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর অধীন এসব ধারা বিলুপ্ত করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। বিলে নারী গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ছয় মাসের প্রসূতি ছুটির বিধান রাখা হয়েছে। বিলের ৪৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- কোনো গণমাধ্যম মালিক বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত বা গণমাধ্যমে মালিকের দায়িত্ব পালনকারী (সম্পাদক) ব্যক্তি এ আইনে প্রদত্ত কোনো গণমাধ্যমকর্মীর আইনগত অধিকার লঙ্ঘন করলে তিনি অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। এজন্য তিনি অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা অনূর্ধ্ব ছয় মাসের কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন।

বিলে আরও যা আছে : বিলে নিয়োগকৃত গণমাধ্যমকর্মীদের অস্থায়ী, শিক্ষানবিশ এবং স্থায়ী চাকরি হিসেবে শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে- কোনো গণমাধ্যম মালিক নিয়োগপত্র না দিয়ে কাউকে নিয়োগ দিতে পারবেন না। নিয়োগকৃত গণমাধ্যমকর্মীকে ছবিসহ পরিচয়পত্র দিতে হবে। কোনো গণমাধ্যমকর্মীর বেতনকাল এক মাসের অধিক হবে না এবং পরবর্তী মাসের প্রথম সাত দিনের মধ্যে বেতন পরিশোধ করতে হবে। কোনো গণমাধ্যমকর্মী পূর্ববর্তী ১২ মাসের বাস্তবে অন্যান্য ২৪০ দিন কাজ করে থাকলে এক বছর এবং অন্যূন ১২০ দিন কাজ করে থাকলে তিনি ছয় মাসের হিসেবে সুবিধা পাবেন।

বিলে গণমাধ্যমকর্মীদের মৃত্যুজনিত সুবিধা অনুচ্ছেদে চাকরিরত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে কর্মরত প্রতি পূর্ণ বছরের হিসেবে এবং ছয় মাসের অধিক সময়ের চাকরির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ দিনের হিসেবে পাওনা পরিশোধের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কর্মকালীন ?দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৪৫ দিনের বেতন প্রদান করতে হবে। বিলে গণমাধ্যমকর্মী ছাঁটাই ও ছাঁটাইকৃতদের পুনর্নিয়োগের বিষয়ে সরকারকে অবিলম্বে ও লিখিতভাবে অবহিত করার বিধান যুক্ত হয়েছে। ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো গণমাধ্যমকর্মী কমপক্ষে এক বছর চাকরি করে থাকলে ছাঁটাইয়ের কারণ উল্লেখ করে তাকে এক মাসের নোটিস অথবা এক মাসের মূল বেতন প্রদান এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রতি বছর চাকরির জন্য ৩০ দিনের মূল বেতন প্রদান করতে হবে। মানসিক অক্ষমতা বা অব্যাহত ভগ্নস্বাস্থ্যের কারণে যে কোনো গণমাধ্যমকর্মীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা যাবে। তবে ক্ষতিপূরণ হিসেবে একই বিধান প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া কোনো গণমাধ্যমকর্মী যদি ফৌজদারি অপরাধে মৃত্যুদন্ড বা এক বছরের অধিক মেয়াদের কারাদন্ডে দন্ডিত হন বা অসদাচরণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে তাকে বিনা নোটিসে বা নোটিসের পরিবর্তে বেতনে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবে। তবে গণমাধ্যম সার্বিক নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ১০ বা ততোধিক গণমাধ্যমকর্মীকে একসঙ্গে চাকরি থেকে অবসানের বিষয়টি সরকারকে অবহিত করতে হবে।

বরখাস্ত ছাড়া অন্যভাবে কোনো মালিক কোনো গণমাধ্যমকর্মীকে চাকরি থেকে অবসান ঘটালে ওই মালিককে স্থায়ী গণমাধ্যমকর্মীর ক্ষেত্রে ১২০ দিনের এবং অন্য গণমাধ্যমকর্মীর ক্ষেত্রে ৬০ দিনের লিখিত নোটিস প্রদান করতে হবে। সে ক্ষেত্রে গণমাধ্যম মালিক গণমাধ্যমকর্মীকে প্রতি সম্পূর্ণ বছরের চাকরির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ দিনের মূল বেতন প্রদান করবেন।

ছুটি, চিকিৎসা সুবিধা ও ভবিষ্যৎ তহবিল গঠন : গণমাধ্যমে কর্মরত ব্যক্তি সাপ্তাহিক এক দিন ছুটি ভোগ করবেন। ১৫ দিন পর্যন্ত নৈমিত্তিক ছুটি, তবে কোনো কারণে ছুটি ভোগ না করলে তা জমা থাকবে না। একজন কর্মী প্রতি ১১ দিন পর এক দিন অর্জিত ছুটি অর্জন করবেন। এ ছুটি ভোগ না করলে তা জমা থাকবে এবং চাকরি সমাপনান্তে জমাকৃত অর্জিত ছুটির অনূর্ধ্ব ১০০ দিন নগদায়নের সুবিধা প্রাপ্য হবেন। এ ছাড়া প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মী তার চাকরির মেয়াদের অন্যূন ১৮ ভাগের ১ ভাগ অংশ পূর্ণ বেতনে অসুস্থতাজনিত ছুটি প্রাপ্তির অধিকার হবেন। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতি পঞ্জিকাবর্ষে পূর্ণ বেতনে এককালীন বা একাধিকবার অনূর্ধ্ব ১০ দিন পর্যন্ত উৎসব ছুটি ভোগ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রতি কার্যদিনের জন্য দুই দিনের মূল বেতন বা দুই দিনের বিকল্প ছুটি মঞ্জুর করতে হবে। প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মী তিন বছর পরপর ১৫ দিনের বিনোদন ছুটিসহ ছুটিতে গমনের অব্যবহিত পূর্ববর্তী মাসের আহরিত মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ ভাতা পাবেন।

সর্বশেষ খবর