রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় ডায়রিয়া আক্রান্তের ভিড় বাড়ছে। আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষই বেশি। স্থানসংকুলান না হওয়ায় অন্য হাসপাতালেও ভিড় বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্তের। ডায়রিয়া নিরাময়ে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে আইসিডিডিআরবি।
আইসিডিডিআরবি-সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত ৭৬৯ জন ভর্তি হয়েছেন। ২৮ মার্চ রোগী ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৩৪ জন, ২৭ মার্চ ১ হাজার ২৩০ জন, ২৬ মার্চ ১ হাজার ২৪৫ জন। গত ১০ দিনে আইসিডিডিআরবিতে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১২ হাজার ৯০৫ জন।
সরেজমিন আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্স, সিএনজি করে হাসপাতালে আসছেন রোগী। ভ্যানে করেও আশপাশ এলাকা থেকে মহাখালী আসছেন অনেক রোগী। হেঁটে হাসপাতালের ভিতরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই অধিকাংশের। কোলে করে ভিতরে নিয়ে যাচ্ছেন স্বজনরা। মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে এসেছেন ইয়াকুব আলী (৫৮)। রেলগেট এলাকায় চায়ের দোকান আছে তার। তিন দিন আগে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন প্রতিবেশী শামসুল হক। শামসুল হক বলেন, ‘ইয়াকুব আলীর পরিবার চুয়াডাঙ্গা থাকে। আমরা কয়েকজন মিলে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে মগবাজার থাকি। বাইরের হোটেলে খাওয়াদাওয়া চলে। তিন দিন আগে ইয়াকুবের পেটে সমস্যা শুরু হয়। ঘণ্টায় কয়েকবার পায়খানা হচ্ছিল। শরীর নেতিয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।’বছিলা থেকে হাসপাতালে এসেছেন রাহেলা বিবি (৬২)। ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দুই দিন ধরে ডায়রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় একজনের সহযোগিতায় হাসপাতালে এসেছেন তিনি। হাসপাতালের বাইরে তাকে বসিয়ে রেখে ভিতরে হুইল চেয়ার আনতে গেছেন ওই ব্যক্তি। রাহেলা বিবি বলেন, ‘ভিক্ষা করে আমার পেট চলে। যেখানে যা পাই তা-ই খাই। হঠাৎ শনিবার রাতে পাতলা পায়খানা শুরু হয়। দোকান থেকে কিছু ওষুধ কিনেও খেয়েছি। একটা সময় পায়খানায় যাওয়ার মতো শক্তিও আর পাচ্ছিলাম না। পাশের পরিচিত একজনের সহযোগিতায় হাসপাতালে এসেছি।’ বেগুনবাড়ী এলাকা থেকে ভ্যানে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে এসেছেন খাদেম আলী। পাশে বসে বাতাস করছেন স্ত্রী মাহেরা বেগম। তিনি জানান, ফেরি করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্লাস্টিকের পণ্য বিক্রি করেন খাদেম আলী। দুপুরের খাবার বক্সে করে নিয়েই বাসা থেকে বের হন। কিন্তু তীব্র গরমে গলা শুকিয়ে গেলে বেশ কয়েকবার রাস্তার পাশে বানানো শরবত খেয়েছিলেন। গতকাল থেকে বারবার পায়খানা করছেন। অবস্থা খারাপ হলে প্রতিবেশী ভ্যানচালকের সহযোগিতায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন খাদেম আলীকে। শুধু এ হাসপাতাল নয়, অন্যান্য হাসপাতালেও বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন পাঁচ-ছয় জন ভর্তি হচ্ছেন। বর্তমানে ৩৮ জন ভর্তি আছেন। এর মধ্যে আটটি শিশু। কয়েকদিন হলো ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি বেড়েছে।’ ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে সুস্থ হতে আইসিডিডিআরবি কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে খেতে হবে। বড়দের (১০ বছরের বেশি বয়সী) ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পায়খানার পর ১ গ্লাস (২৫০ মিলি) খাবার স্যালাইন খেতে হবে। শিশুদের ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পায়খানার পর শিশুর যত কেজি ওজন তত চা-চামচ বা যতটুকু পায়খানা হয়েছে আনুমানিক সে পরিমাণ খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি দুই বছরের নিচের শিশু অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাবে এবং কোনো অবস্থাতেই বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। ছয় মাসের অধিক বয়সী রোগী খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার খাবে। রোগীকে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বেশি বেশি তরল খাবার যেমন ডাবের পানি, চিড়ার পানি, স্যুপ ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। রোগীকে কোমল পানীয়, ফলের জুস, আঙুর, বেদানা খাওয়ানো যাবে না। ছয় মাস থেকে পাঁচ বছরের শিশুকে প্রতিদিন ১টি করে জিংক ট্যাবলেট পানিতে গুলিয়ে ১০ দিন খাওয়াতে হবে। তার পরও অবস্থার উন্নতি না হলে চিকিৎসকরে পরামর্শ নিতে হবে।