বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

এস কে সুর ও শাহ আলমকে দুদকে চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে চার ঘণ্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ লুটপাটের ঘটনায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ  করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান।

এদিকে চার ঘণ্টার বেশি সময় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক কার্যালয় থেকে এস কে সুর দুপুর ২টায় ও শাহ আলম ২টা ১৭ মিনিটে বের হয়ে যান। বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা জানতে চাইলে এস কে সুর বলেন, যা বলার দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছি। আর শাহ আলম জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি। এর আগে ২৪ মার্চ আইএলএফএসএল থেকে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকের উপপরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান তাদের তলব করে নোটিস পাঠান। বিদেশে পলাতক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন লিজিং কোম্পানি থেকে পি কে হালদারের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এ পর্যন্ত ৩৪টি মামলা করেছে দুদক। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতে ২২টি এবং এফএএস ফাইন্যান্সের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ১২টি মামলা করা হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের মোট ১২ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১০ জন আসামি আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

জিজ্ঞাসাবাদকারী-সূত্র জানান, জিজ্ঞাসাবাদের সময় শাহ আলম ও এস কে সুর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনস্পেকশন ডিভিশনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসে আছেন এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে পি কে হালদারের সখ্য ছিল। তারাও অর্থ লুটের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। এর আগে পি কে হালদারের দুই সহযোগী ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হক ও পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী আদালতে যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সেখানে তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করেছেন এবং লিজিং লুটের নেপথ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম ও ডেপুটি গভর্নর এস কে সুরের যোগাযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। পিপলস লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীরাও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলে আসছেন। তাদের আবেদনে হাই কোর্ট গত বছর যে ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, তাদের মধ্যে এস কে সুর চৌধুরীর নামও ছিল। অভিযোগ ওঠার পর গত বছর ৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলমকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আর এস কে সুর চৌধুরী ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডেপুটি গভর্নরের পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি অবসরে রয়েছেন। এস কে সুর চৌধুরী ও শাহ আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আইএলএফএসএলের নামে-বেনামে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আর্থিক এ অনিয়মে তাদের সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে কমিশন তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে।

সর্বশেষ খবর