শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ওদের চোখে নতুন স্বপ্ন

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে হতদরিদ্রদের পরিপাটি জীবন

রফিকুল ইসলাম রনি, সিরাজগঞ্জ থেকে

ওদের চোখে নতুন স্বপ্ন

‘আগে রাস্তার পাশে ঝুপড়ি ঘরে থাকতাম। বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি ঢুকে পড়ত। টুপটুপ করে পানি পড়তে থাকায় ঠিকমতো ঘুমটাও হতো না। আর ঝড় শুরু হলে তো বুক ধরপড় শুরু হতো কখন যে ঘরটা উড়ে যায়। এখন শেখ হাসিনা আমাদের ঘর দিয়েছেন। ভূমিহীন থেকে ভূমির মালিক হয়েছি। স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছি। আগে পরের বাড়িতে কাজ করতে হতো। কষ্টের সীমা ছিল না। এখন স্থায়ী ঠিকানার পাশাপাশি নিজে দোকান করেছি। কেনাবেচাও ভালো হয়। প্রধানমন্ত্রীর দোয়ায় আমাদের জীবন এখন ভালোভাবে চলছে।’ এভাবে একদমে কথাগুলো বললেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকসাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী সীমা বেগম। তার স্বামী আলী আরশেদ অটোভ্যান চালিয়ে দিনে ৪০০-৫০০ টাকা আয় করেন। নিজে কিছুদিন আগে দোকান করেছেন। কেনাবেচাও ভালোই হচ্ছে। তার মুখে হাসির ঝিলিক। বললেন, ‘আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি।’

সীমা বেগমের দোকানে বিক্রি হয় শাড়িকাপড়, লুঙ্গি, গামছা, চুড়ি, গহনা আর শিশুদের খেলনা। সেখানে প্রতিদিনই কেনাবেচাও ভালো হয় বলে জানালেন তিনি। সীমা বেগমের ঘরের পাশেই নুরজাহান বেগমের ঘর। বয়োবৃদ্ধ নুরজাহান কিছু করতে পারেন না। ছেলে নুর আলম (৩০) ঘরের বারান্দায় মুদি দোকান করেছেন। নুর আলম জানালেন, ‘দীর্ঘদিন খিরদান গ্রামে ছিলাম। যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এরপর একটি খাস জায়গায় বসবাস শুরু করি। খুব কষ্ট হতো। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি পড়ত। এখন পাকা ঠিকানা পেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগে দিন মজুরের কাজ করতাম। দিনে ২৫০-৩০০ টাকা পেতাম। তা দিয়ে ছয় সদস্যের সংসারে খুব কষ্ট হতো। কিন্তু এখন ঘর পাওয়ার পর ঋণ নিয়ে দোকান করেছি। প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকার কিস্তি পরিশোধ করার পর মা, স্ত্রী, দুই সন্তানকে নিয়ে ভালোই চলছে। আগে দিনমজুরের কাজ করতে গিয়ে নানা অপমান-অপদস্থ হয়েছি। এখন আর নিয়মিত পরের কাজ করি না। দোকান করে ভালোই চলছি।’ সীমা বেগম ও নুর আলমের মতো অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে পরিপাটি জীবনের স্বপ্ন দেখছেন। এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২৬৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মুখে হাসি ফুটেছে। আনন্দের জোয়ারে ভাসা এসব পরিবার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকসাবাড়ী ইউনিয়নের খোকসাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছেন।

এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী অশীতিপর বৃদ্ধা পিয়ারুন বেগম। বয়স সম্পর্কে কেউ বলছিলেন ১২৫, কেউ ১১৫, কেউবা ১১০। সবশেষে জানা গেল ১১৫-এর কম হবে না। শেষ বয়সে এই পিয়ারুনের জীবনে এখন নতুন দিশা এসেছে। মেয়ে টুলটুলি বেগমের নামে বরাদ্দ হওয়া মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘরে আশ্রয় মিলেছে তাঁর।

বয়সের ভারে নুব্জ পিয়ারুন বেগম দুই হাত তুলে অস্ফুটস্বরে যা বলছিলেন তার অর্থ দাঁড়ায় অনেকটা এ রকম-

 ‘আমার কিছু ছিল না। বাবা-মাও নেই। ঘর ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর দিয়ে ভালো কাজ করেছেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন শেখ হাসিনাকেও ভালো রাখেন।’

প্রথম পর্যায়ে ১০০ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১২০টি ঘর নির্মাণ করে উপকারভোগীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের ৪৪টি ঘরের মধ্যে ২১টি নির্মাণ করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ২৩টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের ঘর নির্মাণ শেষে ঈদের পরপরই সেগুলো ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হস্তান্তর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। খোকসাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঠাঁই মিলেছে মুক্তিযোদ্ধা, রিকশাচালক, দিনমজুর, স্বামীপরিত্যক্তা, বিধবা, প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন পেশার লোকদের। যার বেশির ভাগই স্থানীয় ওয়াপদার ঢালসহ সরকারি খাসজমিতে ভাঙাচোরা অথবা ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। অনেকেই নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে ভাসমান জীবন যাপন করছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে তাদের জীবনমান যেমন বদলেছে তেমনি আত্মকর্মসংস্থানমূলক নানা কাজে নিয়োজিত রেখেছেন নিজেদের।

সিরাজগঞ্জের সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প খোকসাবাড়ীতে কেবল ঘর নির্মাণ করা হয়েছে তা নয়; গ্রামেই শহরের মতো সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা হয়েছে। এখানে একটি মসজিদ, একটি খেলার মাঠ, বসার জন্য একটি গোলঘর, ঘাটলাসহ একটি পুকুর ও পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে।

স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে থাকা ১০ একর সরকারি খাসজমি অপদখলমুক্ত করে ৭ একরে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি করা হয়েছে। বাকি ৩ একরে উপকারভোগীদের সুবিধার্থে খোকসাবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসসহ রাইফেল ক্লাব নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

এখানে ঘর পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তার হোসেন (৮০), শাহনেওয়াজ সরকার (৫৫), বিধবা কোহিনুর বেগম (৬৫), আলেয়া বেগম (৫৫), মাজেদা বেগমসহ (৫৫) সবাই উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করলেন। তাঁর জন্য দোয়া করলেন।

সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, মুজিববর্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মধ্যে জমিসহ ঘর তুলে দেওয়ার এ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। এর সঠিক বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পেরে নিজেদের গৌরবান্বিত মনে করছেন তাঁরা।

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কে এম হোসেন আলী হাসান বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল কেউ গৃহহীন থাকবে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘর দিয়ে স্থায়ী ঠিকানা করে দিচ্ছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও এমন নজির নেই।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর