বিরল দর্শন পরিযায়ী পাখি সুন্দরী হাঁস। হাঁস প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরতম প্রজাতির এরা। প্রজাতির রূপের বর্ণনা কঠিন বলেই পাখিবিশারদ সোজাসাপ্টা এদের নামকরণ করেছেন ‘সুন্দরী হাঁস’। দেশে কেবল শীত মৌসুমে আসে এরা, তবে প্রতি মৌসুমেই আসে না। কালেভদ্রে সিলেটের হাওরাঞ্চলে দেখা মেলে এদের। দেখা যেত একসময় সুন্দরবন অঞ্চলেও। বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মঙ্গোলিয়া ও ভিয়েতনামে অনিয়মিত দেখা যায়।
বেশি দেখা যায় চীন, জাপান ও কোরিয়ায়। সুন্দরী হাঁস অন্য প্রজাতির সঙ্গে মিলেমিশে চলাফেরা করলেও নিজ প্রজাতির পুরুষদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে প্রায়ই। এদের বেশির ভাগ বিচরণ ক্ষেত্র জঙ্গলাবৃত জলাশয়ে। ঊষা ও গোধূলিলগ্নে নিয়ম করে শিকারে বের হয়। সাঁতারে দক্ষ হলেও ডুব দিতে তেমন পারদর্শী নয়। উড়তে পারে ভালো। পুরুষ হাঁস উড়তে উড়তে ডাকে ‘হোয়েক... হোয়েক’। অন্যদিকে স্ত্রী হাঁস ডাকে ‘গ্যাগ-অ্যাগ-অ্যাগ-অ্যাগ...’ সুরে। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপন্মুক্ত ঘোষণা করেছে। এদের মাংস তত সুস্বাদু নয় বলে শিকারিদের কাছ থেকে কিছুটা রেহাই পেয়ে যায়। দেশে খানিকটা নিরাপদ হলেও এদের আসা ততটা সন্তোষজনক নয়। অবশ্য এর জন্য দায়ী হচ্ছে অবাধে বৃক্ষ নিধন। বসবাসের জন্য পর্যাপ্ত জঙ্গলাবৃত জলাশয় সংকটের ফলে সুন্দরী হাঁস বিরল দর্শন হয়ে উঠছে আমাদের দেশে।
এ পাখির ইংরেজি নাম Mandarin duck. বৈজ্ঞানিক নাম : Aix galericulata. প্রজাতির দৈর্ঘ্য লম্বায় ৪৪ সেন্টিমিটার। ওজন ৪২৮-৬৯৩ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির গোল মাথা; বাদামি রঙের। চোখ বাদামি। চোখের ওপরে চওড়া সাদা টান। যা ঘাড় পর্যন্ত ঠেকেছে। চিবুক থেকে কমলা রঙের কেশরসদৃশ পালক ঘাড়ে ঠেকেছে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির ডানা কমলা রং ধারণ করে। তখন দুই পাশের ডানার পালক খাড়া থাকে নৌকার পালের মতো। প্রজনন ঋতুর বাইরে ডানা লালচে। দেহতল সাদা। ঠোঁট লাল, অগ্রভাগ সাদাটে। পা কমলা-পীতাভ। স্ত্রী পাখির রং নিষ্প্রভ। পিঠ জলপাই-বাদামি। দেহতল সাদা। বুকে সাদা ডোরা।প্রধান খাবার : জলজ কীট, ছোট কাঁকড়া, চিংড়ি, জলজ উদ্ভিদের কচি ডগা। প্রজনন মৌসুম মে-আগস্ট। জলাশয়ের কাছাকাছি মাটির গুহায় অথবা গাছের প্রাকৃতিক কোটরে ঘাস-লতা বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৯-১২টি। ডিম ফুটতে লাগে ২৮-৩০ দিন।