মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

পার্কিং নেই ঢাকার মার্কেটে

সড়কে গাড়ি রাখতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা, বাড়ছে যানজট, দুর্ভোগ ও প্রতিবন্ধকতা, মহাপরিকল্পনা গ্রহণের দাবি নগরবিদদের

হাসান ইমন

পার্কিং নেই ঢাকার মার্কেটে

পার্কিং ব্যবস্থা নেই পীর ইয়ামেনি মার্কেটে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পার্কিং ব্যবস্থা নেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯৩ মার্কেটে। একই সঙ্গে বেসরকারি শপিং মল, মার্কেট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও অধিকাংশেরই পার্কিং ব্যবস্থা নেই। এসব মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা মানুষ বাধ্য হয়ে গাড়ি রাখছেন সড়কেই। এভাবে অবৈধ পার্কিংয়ে সড়ক সংকুচিত হচ্ছে। পরিবহন চলাচলে সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। তৈরি হচ্ছে যানজট। দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। নগরবিদরা বলছেন, পার্কিং ব্যবস্থা নিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও সিটি করপোরেশনকে কালবিলম্ব না করে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে তার বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। প্রশাসনকেও সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

জানা গেছে, পার্কিং নৈরাজ্য কমাতে ২০০৭ সালে পরিকল্পনা গ্রহণ করে সিটি করপোরেশন। সেটিকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ওই সময় ডিএসসিসির আরবান প্ল্যানিং বিভাগ একটি খসড়াও তৈরি করে। রাজধানীর পার্কিং স্পটগুলোতে কত সংখ্যক গাড়ি পার্কিং করা যায়- তাও নির্ধারণ করা হয়। তখন সিদ্ধান্ত হয় নির্ধারিত স্থানে পার্কিং করবে গাড়ি। দিতে হবে টোল। টোল আদায় কর্মীদের অনুমতি ছাড়া রাস্তার পাশে কেউ গাড়ি পার্কিং করতে পারবে না। তখন আশা করা হয়েছিল, এতে গাড়ি পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে ফিরে আসবে শৃঙ্খলা, কমে যাবে যানজট। তবে নানা জটিলতায় পার্কিং নিয়ে ওই পরিকল্পনা আটকে থাকে।

এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, পার্কিং ব্যবস্থা নিয়ে এখনই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা না হলে, রাজধানীর বাসযোগ্যতা বিনষ্ট হবে। ফুটপাথ থেকে শুরু করে সড়কের কোথাও চলাচলের পথ থাকবে না। ঢাকায় প্রতিটি ভবন নির্মাণকালে গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হচ্ছে কি না, সিটি করপোরেশন ও রাজউকসহ সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে গড়ে তুলতে হবে পরিকল্পিত পার্কিং ব্যবস্থা। পার্কিং নৈরাজ্যের সঙ্গে জড়িত সুবিধাভোগীদের লাগাম টানতে হবে। সড়কে কিংবা ফুটপাথে গাড়ি রাখলে তার মালিক ও চালকদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাহলেই পার্কিং নৈরাজ্য কমে আসবে। তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের যেসব মার্কেটে পার্কিং ডিজাইন রয়েছে, সেগুলোতে দ্রুত পার্কিং ব্যবস্থা করতে হবে। আর যেসব মার্কেটে পার্কিংয়ের নকশা নেই, সেখানে বিকল্প পার্কিং নিয়ে চিন্তা করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, সিটি করপোরেশনের যেসব মার্কেটে পার্কিংয়ের স্থান বেদখল হয়েছে- সেগুলো আবার দখলমুক্ত করে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সিটি করপোরেশনের নতুন নির্মাণাধীন যেসব স্থাপনা রয়েছে সেগুলোতে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, বেসরকারি ভবনগুলোর পার্কিংয়ের যে অপর্যাপ্ততা রয়েছে সেটি নিরসনের জন্য ইমারত নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণের দায়িত্বসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি করপোরেশনের আওতায় চাইছি, যাতে মহাপরিকল্পনার আওতায় ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় পার্কিংয়ের স্থান অনুমোদন দিতে পারি। আর যানজট নিরসনেও আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। এদিকে সরেজমিন দেখা গেছে, গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেট, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-১, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২, পল্টন শপিং কমপ্লেক্স, আহসান মঞ্জিল সুপার মার্কেট, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্স-১ এবং কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্স-২ এ নেই পার্কিং ব্যবস্থা। নকশা অনুযায়ী মার্কেটগুলোর পার্কিং ব্যবস্থা থাকলেও এসব পার্কিংয়ে দোকান বরাদ্দ দিয়েছিল ডিএসসিসি। তবে গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেট, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-১, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর পার্র্কিংয়ে থাকা দোকানগুলো উচ্ছেদ করেছে সংস্থাটি। উচ্ছেদ করলেও পার্কিং ব্যবস্থা করতে পারেনি ডিএসসিসি। এ ছাড়া বাকি মার্কেটগুলোর অধিকাংশে নেই পার্কিং ব্যবস্থা। নোয়াখালী থেকে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটে এসেছিলেন মো. ইসমাইল। এলাকায় তার দোকানের জন্য মালামাল কিনে থাকেন এই মার্কেট থেকে। ইসমাইলের কথা, একটা মার্কেটে পার্কিং স্পেস তো দূরের কথা, সিঁড়ি দিয়েও হাঁটার অবস্থা নেই। সিঁড়ির ধাপে ধাপে মালামাল রাখা হয়েছে। দুজন লোকও একসঙ্গে হাঁটা যায় না। তিনি বলেন, ‘ট্রাকে করে এ মার্কেট থেকে নোয়াখালী সোনাইমুড়ী বাজারে মাল নিমু। কিন্তু গাড়ি রাখতে হইছে মূল রাস্তায়। এইটার জন্য পুলিশ মামলা দিতে চাইছিল ট্রাকওয়ালারে। পরে আমি গিয়া পুলিশরে অনুরোধ করে বলছি, আধা ঘণ্টার মধ্যে মাল ভরে চলে যামু। তাই আর মামলা দেয়নি।’ এ ছাড়া রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত মতিঝিলের দিলকুশা। গতকাল দুপুরে দেখা গেছে, এখানে প্রতিটি সড়কের অলিগলিতে রাখা হয়েছে ছোট-বড় গাড়ি। গোটা বাণিজ্যিক এলাকায় যানজট লেগে থাকছে। পল্টন-মতিঝিল রুটে চলছে মেট্রোরেল নির্মাণকাজ। এতে দুই দিকে সরু হয়ে গেছে সড়ক। সরু সড়কের ওপর রাখা হয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি। এতে গণপরিবহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। তৈরি হচ্ছে যানজট। শাপলা চত্বর থেকে নটর ডেম কলেজ পর্যন্ত সড়কেরও একই চিত্র।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর