মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

বাড়ছে পানি, ঝুঁকিতে অনেক হাওরের বাঁধ

উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বোরো চাষিদের মাঝে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো মেরামতে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন স্থানীয় কৃষকরা। জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরের ১০টি বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বোরো চাষিরা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

বাড়ছে পানি, ঝুঁকিতে অনেক হাওরের বাঁধ

সুনামগঞ্জে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ঝুঁকিতে পড়েছে অনেক হাওরের বাঁধ। পানির চাপে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কোনো বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বোরো চাষিদের মাঝে। ঝুঁকিপূর্ণ  বাঁধগুলো মেরামতে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন স্থানীয় কৃষকরা। জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরের ১০টি বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বোরো চাষিরা।

এর আগে তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে প্রায় ২ হাজার একর জমির বোরো ধান। বৃষ্টিপাত শুরু হতে না হতেই হাওরডুবির এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ কৃষকরা। প্রশ্ন উঠেছে ফসল সুরক্ষার জন্য সরকারের দেওয়া মোটা অঙ্কের বরাদ্দের ব্যবহার নিয়েও।

জানা যায়, শনিবার সকালে নজরখালি বাঁধ ভেঙে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঢুকতে শুরু করে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি। চোখের সামনেই পানির নিচে তলিয়ে যায় কৃষকের বছরের একটিমাত্র ফসল বোরো ধান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ২০ হাজার একর জমির ফসল। বাঁধ ভেঙে অসময়ে আধাপাকা ধান তলিয়ে যাওয়ায় দিশাহারা হাওরপাড়ের ৮২টি গ্রামের কৃষক। স্থানীয় কৃষক হুমায়ুন কবির জানান, ২০১৭ সালের হাওর বিপর্যয়ের সময়ও শুরুর দিকে নজরখালি বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গিয়েছিল টাঙ্গুয়ার হাওরের বোরো ধান। অতীতের এমন বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা থাকার পরও নজরখালি বাঁধের জন্য অপ্রতুল বরাদ্দ দেয় স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে অসময়ে বাঁধ নির্মাণ করে দায় সারেন তারা। এদিকে, স্থানীয় সূত্র জানায়, দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের পাউবোর তুফানখালি বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। ২০১৭ সালে এই বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গিয়েছিল বরাম হাওরের বোরো ফসল। কুলঞ্জ ইউনিয়নের ২৮ নম্বর পিআইসিন বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। এদিকে, তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান গাওরের আনন্দনগর গ্রামের বাঁধ দেবে গেছে। এই বাঁধ নতুন করে সংস্কার করছেন পিআইসির লোকজন। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় চারটি  বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, বাঁধ নির্মাণে সরকার বিপুল বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু অনেক বাঁধের কাজ দেরিতে শুরু হওয়ায় সময়মতো শেষ করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে বাঁধগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে। আমরা সবাইকে বলেছি, যার যার অবস্থান থেকে বাঁধ মেরামতে এগিয়ে আসতে। হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা বলেন, বাঁধ নির্মাণে অনেক ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ছিল। এখন যদি বাঁধ ভেঙে কৃষকের  ফসলহানি হয়, তবে এর  দায় সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই নিতে হবে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আগাম বন্যা আসলে কেবল বাঁধ দিয়ে ফসলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আমাদের প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে কিছুই করার থাকে না। এর জন্য নদী উৎসমুখ থেকে মেঘনা পর্যন্ত প্রতিটি নদ-নদী  খনন করা জরুরি। উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জে চলতি মৌসুমে সোয়া ২ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে বোরো ধান। এই ধানের সুরক্ষায় ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য সরকার ১১৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর