শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

বাড়ছে হজের খরচ, ঈদের পর হতে পারে চুক্তি

উবায়দুল্লাহ বাদল

করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ধরে বিদেশিদের হজ পালনের অনুমতি দেয়নি সৌদি আরব। এবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় বিদেশিদের হজ পালনের সুযোগ দিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সে বিষয়টি এখনো খোলাসা করছে না সৌদি কর্তৃপক্ষ। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ঈদের পরই হতে পারে বাংলাদেশ-সৌদি আরবের মধ্যে বহুল কাক্সিক্ষত হজচুক্তি। সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে সীমিত আকারে, না স্বাভাবিক নিয়মে হজ অনুষ্ঠিত হবে।

তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার হজের খরচ অনেক বাড়বে বলে আভাস দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বিমান ভাড়া, মিনায় প্রতি হাজির জন্য খাট বসানোসহ বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ বাড়াতে পারে সৌদি আরব। এ ছাড়া বিমানের টিকিট সংকটের কারণে পবিত্র ওমরাহ ও হজের যাত্রী পরিবহন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিমান বাংলাদেশ ও সৌদি এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বৃদ্ধি এবং এই দুই দেশের অন্যান্য এয়ারলাইনসকেও (থার্ড ক্যারিয়ার) হজ এবং ওমরাহ যাত্রী পরিবহনের সুযোগ দিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাধারণত হজ মৌসুমের প্রায় ৭/৮ মাস আগেই হজের বিষয়ে নানা উদ্যোগ ও প্রক্রিয়া শুরু করে মন্ত্রণালয়সহ হজ সংশ্লিষ্টরা। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর হজের কার্যক্রম বন্ধই ছিল। বর্তমানে টিকা কার্যক্রমের কারণে বিশ্বে করোনার প্রকোপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। সৌদি সরকারও ওমরাহর জন্য মক্কার বায়তুল্লাহ শরিফ খুলে দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মদিনার মসজিদে নববিও জিয়ারত করছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এমতাবস্থায় হজের মাত্র তিন মাস বাকি থাকলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না সৌদি সরকার। গত ১৯ মার্চ সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ৫ দিনব্যাপী ‘হজ এবং ওমরাহ মেলা’য় অংশ নিয়েছিল ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। সেখানে হজ ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন, মিনায় তাঁবুতে খাট বসানোসহ সৌদি সরকারের ভিশন-২০৩০ এর বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয় মুসলিম দেশগুলোকে। তবে হজের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিয়ে জানানো হয়-চায়না, উত্তর কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেখা দেওয়ায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে সৌদি সরকার।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘হজের বিষয়টি সৌদি আরবের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। হজচুক্তি এতদিন হয়ে যেত। চায়নায় করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেখা দেওয়ায় দেরি হচ্ছে। আশা করছি ঈদের পরেই হবে। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে হয়তো হজ সীমিত আকারে হবে। পরিস্থিতি এমন থাকলে স্বাভাবিক হজ হবে ইনশাল্লাহ।’ হজের খরচ বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নানা কারণেই এবার বিমান ভাড়া বাড়বে। পাশাপাশি সৌদি আরবের মিনায় তাঁবুতে প্রত্যেক হাজির জন্য একটি করে খাট বসানো হয়েছে। এসব কারণে সৌদি সরকারের বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধি পাবে। ফলে এবার হজের খরচ অনেক বাড়তে পারে। তবে তা হজচুক্তির পরই হজের খরচের বিষয়ে জানা যাবে।’

উল্লেখ্য, সরকারের সর্বশেষ ঘোষিত হজ প্যাকেজ-১ ছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা, প্যাকেজ-২ ছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং প্যাকেজ-৩ ছিল ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এদিকে হজ এবং ওমরাহ যাত্রীদের নির্বিঘ্ন সৌদি আরবে পাঠাতে বিমানের ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো ও দুই দেশের অন্যান্য এয়ারলাইনসকেও (থার্ড ক্যারিয়ার) সুযোগ দিতে বিমান মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, করোনা শুরুর পর বাংলাদেশের ওমরাহ যাত্রীরা শুধু বিমান বাংলাদেশ ও সৌদি এয়ারলাইনসের মাধ্যমে সৌদি আরব গমন ও প্রত্যাগমন করছেন। ফলে সৌদি আরবগামী বিমান যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে অন্যদিকে বিমানের ফ্লাইট সংখ্যা কমেছে। এ কারণে বিমানের টিকিট পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে। বেড়েছে টিকিটের দাম। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ পবিত্র রমজান মাসে অধিক সংখ্যক ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে গমন করে থাকেন। বিগত দুটি রমজানে যেতে না পারায় এবার রোজায় ওমরাহ পালনের বিষয়ে মানুষের মধ্যে অনেক বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। বিমানের ফ্লাইট অপ্রতুলতার কারণে রোজায় তাদের সৌদি আরবে গমনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাই ওমরাহ যাত্রীসহ আগামী হজ মৌসুমে হজযাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে সৌদি আরবে গমন ও প্রত্যাগমন করতে পারে সে জন্য বিমান বাংলাদেশ ও সৌদি এয়ারলাইনসের ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতির আগের মতো মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে চলাচলকারী বিমানে ট্রানজিট যাত্রী হয়ে ওমরাহ যাত্রীদের সৌদি আরবে গমনের সুযোগ দেওয়া উচিত। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের অন্য এয়ারলাইনসগুলোকেও হজ এবং ওমরাহ যাত্রী পরিবহনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে এজেন্সি মালিকদের সংগঠন ‘হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে’র (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘বিমানের ফ্লাইট সংকটের কারণে টিকিটের দাম বাড়ছে। অতীতে দেখা গেছে সৌদি এয়ারলাইনস নির্দিষ্ট কিছু এজেন্সিকে টিকিট দিয়ে হজ এবং ওমরাহর টিকিট সংকটকে আরও উসকে দেয়। তৈরি হয় নানা ধরনের জটিলতা। এ কারণে আমরা থার্ড ক্যারিয়ারের মাধ্যমে হজ এবং ওমরাহ যাত্রী পরিবহনের সুযোগ দাবি করছি। এ বিষয়ে মহামান্য আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে।’

এ বিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, ‘ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো এবং থার্ড ক্যারিয়ারের বিষয়ে বিমান মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সৌদি এয়ারলাইনসের পাশাপাশি হজযাত্রী পরিবহনে সৌদি আরবের আরও একটি এয়ারলাইনসকে সুযোগ দেবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’ 

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এ বছর ৭ থেকে ১২ জুলাই হজ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ হজে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান।

 

সর্বশেষ খবর