মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ডাটাবেজ থেকে ৩০ হাজার ডাটা ডিলিট

ডাটা ডিলিটের ঘটনা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ, তদন্তে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ডাটাবেজ থেকে প্রায় ৩০ হাজার ডাটা ডিলিট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, কোম্পানির চলমান অডিট কার্যক্রম ব্যাহত করার জন্য আইটি বিভাগ কর্তৃক গণ-গ্রামীণ বিভাগের কালেকশন টেবিল, মানি রিসিট, প্রিমিয়াম রিসিট সংক্রান্ত প্রচুর পরিমাণ ডাটা ডিলিট করা হয়েছে। অডিটরের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ডাটা ডিলিটের ঘটনা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়ে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টেও ডাটা ডিলিটের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নিয়োগ করা অডিট ফার্ম একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এই ডেল্টা লাইফে  নিরীক্ষা চালায়। একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ফার্মের অডিট কার্যক্রম পরিচালনাকালীন ২০২১ সালের ২৭, ২৮ ও ৩১ অক্টোবরসহ বেশ কিছু চিঠি কাজী এহতেশাম ফয়সাল, আটি ইনচার্জের কাছে গণ-গ্রামীণ বীমা বিভাগের ডাটাবেজের তথ্য চেয়ে রিকুইজিশন দেয়। পরবর্তীতে কাজী এহতেশাম ফয়সাল এবং শেখ মহসিন রেজা (এভিপি, আইটি)-র বিরুদ্ধে বীমা পলিসি গ্রাহকদের ডাটা ডিলিট সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া যায়। একনাবিনের ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর ও ৩০ ডিসেম্বর তারিখের অডিট রিপোর্টে ডাটা ডিলিটসহ কোম্পানির প্রাক্তন চেয়ারম্যান মঞ্জুরুর রহমান, তার ছেলে সাসপেন্ডেড পরিচালক জিয়াদ রহমান এবং তার মেয়ে প্রাক্তন সিইও আদিবা রহমানসহ বেশ কিছু অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকার অর্থ আত্মসাতের এবং দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। চলমান অডিটের কার্যক্রম ব্যাহত করার উদ্দেশ্যেই আইটি বিভাগ থেকে ডাটা ডিলিট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘গ্রাহকের আমানতের তথ্য ডিলিট করা গর্হিত অপরাধ। এতে পলিসি হোল্ডারের স্বার্থ এমনকি সরকারের স্বার্থও বিঘ্নিত হয়েছে। কারণ এই কোম্পানিতে সরকারের পৌনে চারশ কোটি টাকা রাজস্ব বকেয়া রয়েছে। এ বিষয়ে দুদক তদন্ত করছে।’ উল্লেখ্য, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক সংঘটিত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর নির্দেশে মেসার্স ফেমস অ্যান্ড আর এবং মেসার্স হাওলাদার অ্যান্ড ইউনুস চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ফার্ম পরিচালিত অডিট রিপোর্টে যথাক্রমে ২৫টি এবং ২২টি অডিট আপত্তি প্রকাশিত হয়। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তৎকালীন বোর্ড থেকে কোনো প্রকার জবাব না পেয়ে বাধ্য হয়ে ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বীমা পলিসি গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষার্থে বীমা আইন, ২০১০ এর ৯৫ ধারা অনুযায়ী ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের  কোম্পানি পরিচালন পর্ষদকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রশাসক নিয়োগ করে এবং প্রশাসককে অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করার মাধ্যমে অডিট রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে বীমা আইন, ২০১০ এর ৯৬ ধারায় একটি রিপোর্ট দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। প্রাক্তন পরিচালনা পর্ষদ বরখাস্ত হলেও তাদের নির্দেশে কোম্পানির কিছু অসাধু কর্মচারী অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ডেল্টা লাইফের নির্বাহী পরিচালক ড. আশরাফ উদ্দীনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর