বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

নির্ধারিত সময়ে হচ্ছে না কুমিল্লা সিটি নির্বাচন, বসছেন প্রশাসক

১৬ মের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ২০ জুনের মধ্যে ভোট করবে ইসি, ইভিএমে হবে ভোট, ঈদের আগেও হতে পারে তফসিল

গোলাম রাব্বানী

নির্ধারিত সময়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন করতে পারছে না নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১৬ মের মধ্যে এ নির্বাচন করার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও ২০ জুনের মধ্যে এ সিটিতে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এ ক্ষেত্রে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ঈদের আগের তফসিল ঘোষণা করে ২০ জুনের মধ্যে এ সিটিতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করবে কমিশন। এ ছাড়া কুমিল্লা সিটির পাশাপাশি আটকে থাকা পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদেও ২০ জুনের মধ্যে ভোট হবে। গতকাল নির্বাচন কমিশনের প্রথম আনুষ্ঠানিক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। তবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের  মেয়াদ শেষ হলেই এ সিটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গতকাল সকাল ১১টায় নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রথম সভা আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান, ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন মেয়াদের নির্ধারিত সময়ে হচ্ছে না। মেয়াদ শেষে পরবর্তী এক মাসের মধ্যে এ নির্বাচন করবে নতুন কমিশন। পাঁচ বছর আগে কুমিল্লা সিটির ভোট হয়। আগামী ১৬ মে শেষ হচ্ছে এ সিটির মেয়াদ। পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি, ইভিএমে ভোট করতে মধ্য জুন সময় নিচ্ছে নতুন কমিশন। কমিশন সভা শেষে ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার জানান, কুমিল্লা সিটিতে ভোট করতে কোনো ধরনের জটিলতা নেই। ইভিএমে ভোট করতে সব প্রস্তুতি নিয়ে জুনে নির্বাচন করা হবে। তিনি জানান, নতুন কমিশনের প্রথম সভা হয়েছে। এ সভায় পাঁচটি এজেন্ডা ছিল। এজেন্ডায় কুমিল্লা সিটি, কিছু পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচন বিষয় ছিল। মাননীয় কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০ জুনের মধ্যে এ নির্বাচনগুলো সম্পন্ন করা হবে। এ মাসের শেষের দিকে কমিশনের দ্বিতীয় সভায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ও আটকে থাকা পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ইসি সচিব বলেন, কুমিল্লা সিটির সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা ছিল। ৭ মার্চ  ও ৩০ মার্চ এ-সংক্রান্ত তথ্য জানতে চিঠি দেয় কমিশন। সর্বশেষ ৪ এপ্রিলে স্থানীয় সরকার বিভাগ জানিয়েছে, এ-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, এখন আর কোনো বাধা নেই ভোটে।

সচিব বলেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে এক মাস সময় চলে গেছে। এ সিটিতে ভোট হবে ইভিএমে। সে জন্য প্রশিক্ষণ ও সিডি প্রস্তুতের বিষয় রয়েছে। ঈদের ছুটিও থাকবে। এ জন্য এ সময়ের মধ্যে এ নির্বাচন করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে গেলে অনেক প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। এক মাস সময় পার হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানিয়ে দেব আমরা। আইনের ব্যত্যয় হবে না, প্রয়োজনে প্রশাসক দেবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিদায়ী কমিশনের সময়ও কুমিল্লার ভোট করতে চেয়েছিল। নির্ধারিত সময়ে ভোট করতে না পারার দায় নতুন কমিশনও নিচ্ছে না। এ অবস্থায় বেশি সময় নেওয়ায় আইনি কোনো ব্যত্যয় হবে না বলে জানান ইসি সচিব।

তিনি জানান,  একটি কমিশন গেছে। নতুন কমিশন এসেছে ২৭ ফেব্রুয়ারি। আগের কমিশনকে জানানো হয়েছিল, তখন তারা বলেছে নতুন কমিশন বিষয়টি দেখবেন, নির্বাচন করবেন। আমরা জানলাম, এখনো মামলা রয়েছে। আমরা প্রস্তুত ছিলাম। পুরো বিশ্লেষণ করে দেখলাম সামনে যে সময়টা রয়েছে তাতে সম্ভব হচ্ছে না। সময় বাড়ানো যায়, তাতে সুন্দর নির্বাচনের জন্য ২০ জুনের মধ্যে হবে।

বিলম্ব হওয়ায় আইনি ব্যত্যয় হবে কি না? জানতে চাইলে আইনি কোনো ব্যত্যয় ঘটবে বলে কমিশন মনে করে না। (প্রশাসক নিয়োগের) বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানানো হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চাইলে ওই সামান্য সময়ে প্রশাসক দিতে পারে। গতকাল ইসির মিডিয়া সেন্টারের ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, যুগ্ম-সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান ও এস এম আসাদুজ্জমান। ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটিতে ভোট হয়েছিল। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৭ মে প্রথম সভা হয়। পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে এ বছরের ১৬ মে। মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নতুন ইসির প্রতি সংলাপে কাজের মাধ্যমে আস্থা অর্জন ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা নিয়ে তাগিদের মধ্যে কুমিল্লায় ভোট হবে। দুটি পৌরসভা নিয়ে ২০১১ সালের জুলাই মাসে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর দুটি নির্বাচন হয়। ১০ বছর আগে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও ২০১৭ সালে দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচন হয়। দুই নির্বাচনেই বিএনপি নেতা জয়ী হন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে পরাজিত করে।

কুমিল্লায় বসছেন প্রশাসক : কুমিল্লা সিটিতে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, অবশ্যই প্রশাসক নিয়োগ দিতে হবে। কারণ হলো পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রশাসক নিয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন আইনে বলা আছে, পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে পরিষদ ভেঙে দিতে হবে। আইনে বলা আছে, প্রশাসক নিয়োগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর