বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

এপ্রিলেই তিস্তায় বন্যা দেখা দিয়েছে ভাঙন

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

এপ্রিলেই তিস্তায় বন্যা দেখা দিয়েছে ভাঙন

অন্যান্য বছর এপ্রিলে তিস্তার বুকজুড়ে থাকে ধু-ধু বালুচর। প্রখর রোদে বালুময় তিস্তা হেঁটে পার হন চরাঞ্চলবাসী। প্রায় ৩০ বছর পর এই প্রথম সে চিত্র পাল্টে গেছে। অসময়ে ভারত গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেওয়ায় এবং উজানে ভারি বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি হুহু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে তলিয়ে গেছে তিস্তার বুকে উজান ও ভাটিতে কৃষকের লাগানো কয়েক হাজার বিঘা জমির মরিচ-পিঁয়াজ,  রসুন, মিষ্টিকুমড়ার খেত। জানা যায়, ব্যারাজের ১০টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে উজানের প্রচুর পানি ভাটিতে এসেছে। এপ্রিলে তিস্তার এ রকম বন্যায় বাকরুদ্ধ চরাঞ্চলের লাখো মানুষ। এ সময় তিস্তার বুকে যে চাষাবাদ হয় তাই দিয়ে তাদের চলে সারা বছর। অসময়ের এ বন্যায় কৃষকের স্বপ্নের ফসল ডোবার সঙ্গে সঙ্গে ডুবেছে কৃষকের ভাগ্যও। এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তাপাড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন। গতকাল দুপুরে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ছিল ৫১ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার নিচে। মার্চের শেষ সপ্তাহে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে মাত্র ৩ হাজার কিউসেক পানি ছিল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়ে গতকাল দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬০০ কিউসেকে। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, পানি যে কোনো সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই কর্মকর্তা জানান, ৩০ বছর আগে এপ্রিলে তিস্তায় বন্যা দেখা দিয়েছিল। এ বছরও ঘটল সে ঘটনা। তিনি জানান, তিস্তায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

 ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানি বাড়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন চরাঞ্চলের চাষিরা। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এলাকার পাট চাষি একরামুল হক বলেন, ‘জীবনেও দেখিনি চৈত্র-বৈশাখে তিস্তার পানি বাড়ে। পানি বাড়ার কারণে ৪ বিঘা জমির উঠতি পাট খেত ডুবে নষ্ট হয়েছে। এতে আমার অন্তত ১৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।’ সদর উপজেলার চরগোকুন্ডার চাষি এসাহাক মিয়া বলেন, ‘গত সাত দিনে উজান থেকে প্রচুর পানি এসে তিস্তায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ২ বিঘা জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ করেছিলাম, অকালবন্যায় সব নষ্ট হয়ে গেছে।’

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, ‘উজানে বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ (বুধবার) দুপুরে ব্যারাজ পয়েন্টে পানি দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬০০ কিউসেক। পানি আরও বাড়বে।’ লালমনিরহাট কৃষি অধিদফতরের উপপরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, ‘তিস্তায় পানি বৃদ্ধির ফলে সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর চরের জমির বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর