বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ইউক্রেনে শান্তি প্রক্রিয়া ভণ্ডুলের মুখে আশঙ্কা বড় যুদ্ধের

প্রতিদিন ডেস্ক

ইস্তাম্বুলে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি বৈঠকের অঙ্গীকার অনুযায়ী, রুশ সেনারা ইউক্রেনে দখল করা প্রায় সব এলাকা থেকে সরে গেলেও শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। রাশিয়া বলছে, তারা অঙ্গীকার পালন করলেও ইউক্রেন তা করছে না। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিবিরোধী তৎপরতার কারণে শান্তি প্রক্রিয়া ভণ্ডুলের মুখে রয়েছে। এদিকে ইউক্রেনে অনবরত পশ্চিমা সামরিক সাজ-সরঞ্জাম পৌঁছাতে থাকায় বড় যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হতে চলেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল জাজিরা, স্পুটনিক।

গতকাল প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ইস্তাম্বুল শান্তি আলোচনার অবস্থান থেকে সরে এসে ইউক্রেন তার দেশ থেকে অবিলম্বে সব রুশ সেনা প্রত্যাহার এবং দুই পক্ষের সম্ভাব্য সমঝোতা নিয়ে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এ প্রস্তাব নাকচ করে মঙ্গলবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ইউক্রেনের এসব দাবি পূরণ সম্ভব হবে না।’ ল্যাভরভ অভিযোগ করেন, মস্কো ও কিয়েভের মধ্যকার শান্তি আলোচনা ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করছে পশ্চিমা বিশ্ব। ইউক্রেনের বুচা শহরে বেসামরিক নাগরিক হত্যার  সাজানো ঘটনা সামনে এনে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এই ধরনের প্রচেষ্টা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে শান্তি প্রক্রিয়া নস্যাৎ হয়ে যেতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছি যে, শান্তি আলোচনা ভেঙে দেওয়ার অজুহাত হিসেবে মস্কোর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। গত সপ্তাহে তুরস্কে অনুষ্ঠিত আলোচনায় যখন দুই পক্ষ অগ্রগতি লাভ করেছে, তখনই রাশিয়ার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তোলা হয়েছে।’ ল্যাভরভ আবারও বলেন, ‘বুচা শহরের যুদ্ধাপরাধের ব্যাপারে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা ভুয়া। বুচা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর রাশিয়ার সেনারা কোনো বেসামরিক নাগরিক হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল না।’ এ ছাড়া রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপ-সচিব দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ‘ইউক্রেনের প্রচারণাগত কল্পনার জগতে এসব ভুয়া খবর উৎপন্ন হয়েছে।’ তিনি প্রশ্ন করেন, রুশ সেনারা যদি ৩০ মার্চ বুচা শহর থেকে পশ্চাদপসরণ করে থাকে এবং ওই শহরের মেয়র ৩১ মার্চ শহরটিকে রুশ সেনামুক্ত হিসেবে ঘোষণা করে থাকেন, তাহলে কথিত নিহত বেসামরিক নাগরিকদের লাশ কেন প্রথমবারের মতো ৩ এপ্রিল প্রদর্শন করা হলো? তিনি আরও বলেন, ‘প্রচারিত ভিডিও দেখে এমন কোনো আলামত পাওয়া যায় না যে, এসব লাশ কয়েকদিনের পুরনো বরং ছবিতে নিহত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করা হয়েছে বলেই মনে হয়।’ মেদভেদেভ বলেন, ‘বিভিন্ন পশ্চিমা কোম্পানি ও বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে এসব ভুয়া লাশ তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ইউক্রেনের সেনারা রাশিয়ার ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করার জন্য নিজ দেশের নাগরিকদের হত্যা করতেও কুণ্ঠিত হচ্ছে না।’

 

ইউক্রেনে আরও অস্ত্র পাঠাচ্ছে আমেরিকা : ইউক্রেনে আরও ১০ কোটি ডলারের অস্ত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে আমেরিকা। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এবং পেন্টাগন গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আলাদা বিবৃতিতে এ কথা জানায়। মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাড়তি এই ১০ কোটি ডলারের অস্ত্রের মধ্যে ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র থাকবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, ইউক্রেনের জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য ১০ কোটি ডলার মূল্যের বাড়তি নিরাপত্তা সহযোগিতা পাঠানোর বিষয়টি আমি অনুমোদন করেছি।’ খবরে বলা হয়, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই মার্কিন সরকার ইউক্রেনকে এই অস্ত্র দিতে যাচ্ছে। গত আগস্ট মাস থেকে এ পর্যন্ত আমেরিকা ইউক্রেনে মোট ছয়বার অস্ত্রের চালান পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি জানান, ইউক্রেনে রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১৭০ কোটি ডলারের অস্ত্র পাঠানো হয়েছে। এর আগেও দেশটিকে মোট ২৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করা হয়।

৫১ সামরিক স্থাপনায় রুশ হামলা : রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, গত শনিবার রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ওডেসা শহরের কাছে রাতভর হামলা চালিয়ে ৫১টি সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে। কোনাশেনকভ বলেন, ‘গত শনিবার রাতে রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর কৌশলগত বিমান থেকে ইউক্রেনের ৫১টি সামরিক স্থাপনায় আঘাত করা হয়েছে। এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে ৪টি কমান্ড পোস্ট, ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ২টি স্থাপনা, ২টি আর্টিলারি ব্যাটারি, দুটি বহুমাত্রিক রকেট উৎক্ষেপণের ব্যবস্থা, ৪টি ফিল্ড আর্টিলারি এবং ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর ৩২টি নিরাপত্তাচৌকি ও সামরিক সরঞ্জামের এলাকা। এ সময় রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী ইউক্রেনের ১২৫টি যুদ্ধবিমান, ৮৮টি হেলিকপ্টার ও ৩৮৩টি  ড্রোন ধ্বংস করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ১২৫টি যুদ্ধবিমান, ৮৮টি  হেলিকপ্টার, ৩৮৩টি চালকবিহীন ড্রোন, ২২১টি  ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা, ১ হাজার ৯০৩টি ট্যাংক ও অন্য সাঁজোয়া যান, ২০৭টি রকেট ব্যবস্থা, গোলন্দাজ বাহিনীর ৮০৫টি অস্ত্র ও মর্টার এবং ১ হাজার ৭৮১টি স্বয়ংক্রিয় সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়েছে। গত মঙ্গলবারও সাগর ও আকাশপথ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে একটি তেল শোধনাগার এবং তিনটি জ্বালানি ও তেলের গুদাম ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এসব তেলের গুদাম থেকে নিকোলায়েভ এলাকায় ইউক্রেনীয় সেনাদের জন্য জ্বালানি সরবরাহ করা হতো।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর