শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

বাস্তুহারাদের জন্য ‘মডেল’ আশ্রয়ণ গ্রাম

রফিকুল ইসলাম রনি, পুঠিয়া থেকে ফিরে

বাস্তুহারাদের জন্য ‘মডেল’ আশ্রয়ণ গ্রাম

পুঠিয়া শহর থেকে ২ কিলোমিটার দক্ষিণে তালুকদার গ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্প। পুঠিয়া থেকে পাকা রাস্তা ধরে বাড়ইপাড়ার নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা গ্রামটিতে প্রবেশ করেই হাতের ডান পাশে দৃষ্টি কাড়ে তিন তলা পাকা মসজিদ। প্রায় আধা কিলোমিটার প্রশস্ত গ্রামটিতে সারিবদ্ধ পাকা ঘর। ঘরগুলোর পশ্চিম পাশে ফাঁকা বিশাল মাঠ। পূর্ব পাশে নদী। ঘরগুলোর সামনে দিয়ে হেঁটে যেতেই চোখে পড়ে প্রাথমিক ও ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার, মিনি শিশু পার্ক, গণ শৌচাগার এবং সর্বশেষ কবরস্থান। এসব দেখে কেউ বিশ্বাস করবেন না, এটা আশ্রয়ণ প্রকল্পের গ্রাম। যে কেউই বলবেন এটা একটি আদর্শ ও পরিকল্পিত গ্রাম। গ্রামের পাশে নদী, সবুজের সমারোহ, মসজিদ, পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ, কবরস্থান, শিশু পার্ক,  গণ শৌচাগার সব মিলিয়ে মনোমুগ্ধকর এক দৃশ্য। আবহমান গ্রামবাংলার চিরায়ত রূপ তো এমনই হয়। এ গ্রামের বাসিন্দাদের অধিকাংশই ছিলেন ভিক্ষুক, বাস্তুহারা মানুষ। যাদের জীবনে ন্যূনতম পরিচয় দেওয়ার মতো কিছু ছিল না। তারা সামাজিক পরিচয় দিতে পারছেন। ভালো জীবনযাপনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।

এ গ্রামে প্রবেশ করে রঙিন টিনের ঘরে বোঝার উপায় নেই এটা ভূমিহীন, গৃহহীন-বাস্তুহারাদের আবাস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক উদ্যোগ আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় এখানে কেবল ঘর বা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে তাই নয়; গ্রামেই শহরের মতো সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য করা হয়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এ গ্রামে ১১০টি পরিবারকে ঘরসহ বাড়ি দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদে ৩৮টি ঘরের চাবি ও দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৭২টি ঘরের নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। অন্যের জায়গায় বসবাস করা কিংবা খাস জমিতে ঝুপড়ি ঘরে থাকা মানুষগুলো এখন রঙিন টিন আর আধাপাকা বাড়িতে বসবাস করছেন। তারা যেন শুধু ঘর নয় পেয়েছেন নিজেদের স্থায়ী পরিচয়। যেখানে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তারা।

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা সরকারি খাস জায়গা। আগে প্রভাবশালীদের দখলে ছিল। মুজিববর্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মধ্যে জমিসহ ঘর তুলে দেওয়ার প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। এই প্রকল্প শুরু হওয়ায় আমরা স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সহযোগিতা নিয়ে এই জায়গা দখলমুক্ত করি। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি গ্রাম হবে শহর’- স্লোগানের আলোকে আমরা এটাকে শুধু একটা প্রকল্প নয়, আধুনিক সব সুবিধা সম্মিলিত গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এখানে মসজিদ আছে, মাঠ আছে, পুকুর আছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও মিনি শিশু পার্ক, শিশুরা যেন শিক্ষা নিতে পারে সেজন্য গড়ে তোলা হয়েছে প্রাথমিক ও ধর্মীয় শিক্ষালয়। সর্বশেষ মানুষ মরে গেলে যেন কবরের জন্য ছুটতে না হয় সেজন্য স্থায়ী ঠিকানা ‘কবরস্থান’ করা হয়েছে। আমরা চেয়েছি টেকসই সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে। সেজন্যই ডিজাইনে না থাকলেও (মসজিদ, প্রাথমিক ও ধর্মীয় শিক্ষালয়, মিনি শিশু পার্ক, কাঁচাবাজার) এগুলো করা হয়েছে। কারণ, এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের প্রকল্প।’

পৌরসভার দুদুর মোড় হিসেবে পরিচিত কান্দা মৌজায় আরও ৫৬টি বাড়ি নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, একটি আদর্শ গ্রামের আদলেই গড়ে তোলা হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো। পানি নিষ্কাশনের জন্য করা হয়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা। রাখা হয়েছে খেলার মাঠ, কবরস্থান ও মসজিদ।

পুঠিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মতিন মুকুল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের অন্য যে কোনো স্থানের চেয়ে এ উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পটি মডেল হতে পারে। কারণ, এত সুন্দর পরিকল্পিত আশ্রয়ণ প্রকল্প আর চোখে পড়বে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, প্রতিটি গ্রাম হবে শহর। আসলেই আশ্রয়হীন, বাস্তুহারা মানুষের জন্য এই আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোই প্রমাণ করে গ্রাম শহরের আদলেই গড়ে উঠছে। শহরের সব সুযোগ-সুবিধা এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে রয়েছে। তিনি বলেন, স্থানীয় রাজনীতিবিদ এবং উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ তদারকির কারণে মডেল বাড়ি তৈরি হয়েছে।

তালুকদার গ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী হাবীবুল জানালেন, আগে অন্যের জায়গায় বসবাস করতাম। ঘরসহ বাড়ি পাব কখনো কল্পনা করিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মতো ভাসমান মানুষের জন্য স্থায়ী ঠিকানা করে দিয়েছেন। আমরা দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাকে ভালো রাখেন। তিনি বলেন, সরকারি আশ্রয়ণের ঘরের সামনে খেলার মাঠ, মসজিদ, পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ, কবরস্থান, শিশু পার্ক, গণ শৌচাগার পাব কল্পনাও করিনি।

সর্বশেষ খবর