সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

মায়ের লাশ আটকে দুই সন্তানকে পুলিশে দিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

চিকিৎসার অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতাহাতি হয়। এ ঘটনায় হাসপাতালে রোগীর লাশ আটকে রেখে তার দুই ছেলেকে পুলিশে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এর প্রতিবাদে দৌলতপুর নতুন রাস্তা এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন নিহতের স্বজন ও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। প্রায় ১১ ঘণ্টা পর আটক দুজনকে পুলিশ ছেড়ে দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। পরে মৃতের স্বজনরা হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরেন।

জানা যায়, নগরীর দৌলতপুরের কারিকর পাড়ার মাওলানা আবদুর রাজ্জাকের স্ত্রী পিয়ারুন্নেছা (৫৫) শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে হাসপাতালে মারা যান। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে   এ অভিযোগ এনে ইন্টার্ন চিকিৎসক কামরুল হাসানের সঙ্গে বাগ্বিতন্ডা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন রোগীর স্বজনরা। এ সময় চিকিৎসককে মারধর ও চেয়ার-টেবিল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে হাসপাতালে পিয়ারুন্নেছার লাশ আটকে রেখে তার দুই ছেলে তরিকুল ইসলাম কবির এবং সাদ্দাম হোসেনকে পুলিশে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। গতকাল ভোর ৪টার দিকে তাদের আটক করে থানায় নেওয়া হয়।

তবে মৃতের স্বামী মাওলানা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে বুকে ব্যথা ও পায়খানা-প্রস্রাব না হওয়ায় শুক্রবার রাতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ১১-১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। শনিবার রাতে তার অবস্থা গুরুতর হলে ডাক্তার ডাকতে গেলে তারা আসেননি বরং সেখানে রোগীকে নিয়ে যেতে বলেন। এক পর্যায়ে কাগজপত্র নিয়ে যেতে বলেন। এভাবে সময়ক্ষেপণে রাতে ছটফট করতে করতে আমার স্ত্রী মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর ছেলেরা কেন ডাক্তার আসেননি জানতে গেলে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। এতে ডাক্তার, ওয়ার্ডবয়সহ অন্যরা আমাদের মারধর করে ও আমার দুই ছেলেকে পুলিশে দেয়।’

এ ঘটনার মীমাংসার জন্য স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ এলাকাবাসী চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলেও তারা কোনো রকম ছাড় দিতে রাজি হননি। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে দৌলতপুর নতুন রাস্তা মোড়ে মানববন্ধন করেন। ফলে খুলনা-যশোর মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ ছেড়ে দিতে রাজি হন। কিন্তু মৃত মহিলার পরিবারের সদস্যরা আটককৃতদের মুক্তি না দিলে লাশ গ্রহণে আপত্তি জানান।

প্রায় ১১ ঘণ্টা পর পুলিশ আটককৃতদের ছেড়ে দিলে তারা হাসপাতাল থেকে মায়ের লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরেন। সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক জানান, হাসপাতাল থেকে ওই দুজনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না দেওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রবিউল হাসান জানান, মানুষ মারা গেলে লাশ হস্তান্তরের একটা প্রক্রিয়া আছে। লাশ আটকানো হয়নি। চিকিৎসককে মারধর ও ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর