সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

শাহবাগে হবে মেডিকেল হাব

জুনে উদ্বোধন সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল । বেতার ভবনে একাডেমিক ভবন ও রিসার্চ সেন্টার করার পরিকল্পনা । সেবা দিয়ে যাচ্ছে বিএসএমএমইউ, বারডেম ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল

জয়শ্রী ভাদুড়ী

শাহবাগে হবে মেডিকেল হাব

রাজধানীর শাহবাগে গড়ে উঠছে মেডিকেল হাব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), বারডেম হাসপাতাল, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে মাল্টিডিসিপ্লিনারি অ্যান্ড সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। এর পাশাপাশি বেতার ভবনেও বিএসএমএমইউর রিসার্চ সেন্টার, একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন করার পরিকল্পনা রয়েছে।  

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ১ হাজার ৯০৪টি শয্যা রয়েছে। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু হলে যোগ হবে আরও ৭৫০ শয্যা। এ হাসপাতালে অত্যাধুনিক এবং বিশেষায়িত সেবা পাবে রোগীরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘বেতার ভবনেও বিএসএমএমইউর বর্ধিত একটি অংশ করার পরিকল্পনা আছে। একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, সিমুলেশন ল্যাব, রিসার্চ সেন্টার করা হবে। এখানে পার্কিংয়ের জায়গা থাকবে। শাহবাগকে মেডিকেল হাব হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং গবেষণায় আমরা অগ্রণী

ভূমিকা পালন করব।’  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে তৎকালীন সময়ে দেশের ১৩টি সরকারি, পাঁচটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং নিপসমসহ পাঁচটি পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু এতে দেশের চিকিৎসা, শিক্ষা, গবেষণা ও সেবার মানোন্নয়নে তেমন উন্নয়ন হচ্ছিল না। দেশের চিকিৎসা, শিক্ষা বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন স্বতন্ত্র ও গবেষণা সমৃদ্ধ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জানিয়ে আসছিল। ১৯৯৮ সালের ৩ এপ্রিল তৎকালীন আইপিজিএমআরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উন্নীত করার মধ্য দিয়ে দেশের প্রথম স্বতন্ত্র পাবলিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে দেশের চিকিৎসা সেবা ও গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বিএসএমএমইউ।

দেশের লাখ লাখ ডায়াবেটিস রোগীর আস্থার অন্যতম ঠিকানা রাজধানীর বারডেম হাসপাতাল। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিদিন ৩ হাজার রোগী এখানে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয়। বাংলাদেশে আর কোনো হাসপাতাল এত বেশি সংখ্যক ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসা দেয় না। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে স্বতন্ত্র ৯টি প্রতিষ্ঠান আছে। এগুলো হচ্ছে বারডেম (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ইন ডায়াবেটিস, এন্ডোক্রাইন অ্যান্ড মেটাবলিক ডিজ অর্ডারস), রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার, ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্ক, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেস, বারডেম নার্সিং কলেজ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস এবং হেলথকেয়ার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট।  সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ডায়াবেটিস যে এক দিন বড় মাপের জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দেখা দেবে, এটা প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম গত শতকের পঞ্চাশের দশকের শুরুতেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তার নেতৃত্বে ১৯৫৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (তখন নাম ছিল ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন ফর পাকিস্তান) গঠিত হয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। ২০৪০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হবে। এই রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধে বারডেম বড় ভূমিকা রেখে চলেছে। বারডেম হাসপাতালের পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল।   ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শাহবাগে বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালও প্রায় প্রস্তুত হয়ে গেছে। দেশের চিকিৎসা সেবায় বারডেম, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বিএসএমএমইউ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালেও বিশেষায়িত অনেক রোগের অত্যাধুনিক সেবা মিলবে। এই হাসপাতালগুলোতে সেবা নিতে আসা মানুষের কথা মাথায় রেখে রাস্তাঘাট, পার্কিংয়ের পরিকল্পনা করতে হবে। এই এলাকা মেডিকেল হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চিকিৎসার পাশাপাশি মানুষের সহজ সেবা প্রাপ্তির দিকেও নজর দিতে হবে।’

বিশেষায়িত স্বাস্থ্য সেবায় আরেকটি পালক যোগ করতে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি অ্যান্ড সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। এই হাসপাতালে এক ছাতার নিচে মিলবে সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা। রাজধানীর শাহবাগে ১২ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালটির নির্মাণকাজ, যন্ত্রপাতি কেনার কাজ শতভাগ শেষ। সার্বিক কাজ সম্পন্ন করে আগামী জুনে হাসপাতাল উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রকল্পের পরিচালক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক ডা. মো. জুলফিকার রহমান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই হাসপাতালে পাঁচটি ভিন্ন সেন্টারের মাধ্যমে দেওয়া হবে সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা। সুপরিসর ১২ তলা ও তিনটি বেজমেন্ট নিয়ে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি অ্যান্ড সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি হবে ৭৫০ শয্যার। এর বহির্বিভাগ থেকে প্রতিদিন ৮ হাজার রোগী সেবা পাবে। এতে থাকছে ১০০টি আইসিইউ বেডসহ ইমারজেন্সি বেড। তিনি আরও বলেন, ‘পাঁচটি ভিন্ন সেন্টারে থাকছে জরুরি চিকিৎসাসেবা, মা ও শিশু কেন্দ্র, কার্ডিওভাসকুলার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি অ্যান্ড গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সেন্টার ও কিডনি ডিজিজ সেন্টার। ১২টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, যেখানে বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপনসহ উন্নত মানের সার্জারি সম্পন্ন হবে। হাসপাতাল নির্মাণ ও উন্নত প্রশিক্ষণ এই দুই ভিত্তিতে হাসপাতাল প্রকল্পটিকে সাজানো হয়েছে। হাসপাতালের কাঠামো সম্পন্ন হয়েছে। ভিতরের ইন্টেরিয়র ৯৮ শতাংশ শেষ, যন্ত্রাংশ স্থাপন ৬৬ শতাংশ হয়েছে। জুনে এ হাসপাতাল উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে।’ এই হাসপাতাল চালু হলে শাহবাগকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে মেডিকেল হাব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর