দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উৎপাদনে কিছুটা ধীরে চলো নীতিতে চলছে সরকার। যদিও প্রথমে লক্ষ্য ছিল চলতি বছরের জুনেই টিকা উৎপাদনে যাবে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী করোনার বিস্তার কমে এসেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই নেই কোনো বিধিনিষেধ। পাশাপাশি করোনা মহামারী শেষ হওয়ার আগেই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও ভঙ্গুরতা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। দেশ দুটির যুদ্ধের কারণে বিশ্বের পরাশক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে দ্বিধাবিভক্তি। এ ছাড়া এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও চলছে নানা রকম অর্থনৈতিক টানাপোড়েন। বাংলাদেশের অর্থনীতি এত দিন স্থিতিশীল থাকলেও কয়েক মাস ধরে খাদ্য, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে ব্যয় বাড়ায় মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশও।
এ জন্য করোনার টিকা উৎপাদনে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছে সরকার। রাষ্ট্রীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি এসেনশিয়াল ড্রাগস ও আমেরিকার ডায়াডিক ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে ননডিসক্লোজার (এনডিএ) চুক্তি। প্লান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। জুনের পরিবর্তে ভ্যাকসিন উৎপাদনের নতুন লক্ষ্য হতে পারে চলতি বছরের শেষ দিকে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
এদিকে বিশ্বের ভ্যাকসিনের চাহিদাও অনেকটা কমে এসেছে। কেননা বেশির ভাগ দেশই তাদের জনগণের একটা বড় অংশকে ইতোমধ্যে টিকার আওতায় এনেছে। বাংলাদেশেরও টার্গেটের প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ ইতোমধ্যে টিকার আওতায় এসেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ২০০ দেশের মধ্যে টিকা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম।সূত্র জানায়, করোনার টিকার উৎপাদন প্লান্ট স্থাপনের জন্য গোপালগঞ্জে সাড়ে সাত একর জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার। সেখানে ভূমি উন্নয়নের প্রাথমিক কাজও শুরু হয়েছে। দ্রুত উৎপাদনে যেতে স্বল্প সময়ের মধ্যে মেশিনারি স্থাপন করা জরুরি। এ জন্য স্টিল স্ট্রাকচারের একটি কাঠামো তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে মেশিনারি, ল্যাবের যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আনার প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে আমেরিকান কোম্পানির প্রযুক্তিগত সহায়তায় দেশীয়ভাবে টিকা উৎপাদনে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই টিকার সামগ্রিক মালিকানা থাকবে বাংলাদেশের। তবে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে আমেরিকা। প্রাথমিক উৎপাদনের পর মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা হবে। এতে সফলতা এলে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে এসেনশিয়াল ড্রাগস। বছরে এক বিলিয়ন ডোজ উৎপাদনের মাধ্যমে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও করতে পারবে বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমেরিকান একটি কোম্পানির সঙ্গে ননডিসক্লোজার চুক্তি হয়েছে। প্লান্ট স্থাপনের জন্য গোপালগঞ্জে সাড়ে ৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্লান্ট স্থাপনের প্রাথমিক কাজও শুরু হয়েছে।’
টিকা উৎপাদন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার আপাতত অভ্যন্তরীণভাবে অর্থের জোগান দেবে। তবে একই সঙ্গে বিদেশি কোনো দেশ বা সংস্থাকে বিনিয়োগকারী হিসেবেও নেওয়া হবে। এ জন্য এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডিতে) পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ বিভাগ।