সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

বগুড়া কুড়িগ্রামে নদীর পানি বৃদ্ধি, ডুবে গেছে ফসল

প্রতিদিন ডেস্ক

বগুড়া কুড়িগ্রামে নদীর পানি বৃদ্ধি, ডুবে গেছে ফসল

বগুড়া ও কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ডুবে গেছে নিম্নাঞ্চলের বোরো ধান ও ফসল।

নিজস্ব প্রতিবেদক- বগুড়া জানান, অসময়ে যমুনায় পানি বৃদ্ধিতে জেলার সারিয়াকান্দিতে ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে বিপাকে কৃষক। উপজেলার ১২২টি চরের নিম্নাঞ্চল এখন পানিতে ডুবে রয়েছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া ফসল তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক।

গতকাল সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের চরঘাগুয়া এবং  বেণিপুর চরের হাজার হাজার কৃষক, কৃষাণি এবং দিনমজুর পানিতে ড্বু দিয়ে অপরিপক্ব স্থানীয় জাতের কালো এবং সাদা বোরো ধান কর্তন করছেন। কেউ বা অপরিপক্ব পিঁয়াজ তুলছেন, আবার কেউ অপরিপক্ক বাদাম তুলছেন। এসব অপরিপক্ব ফসল তারা পানি হতে তুলে উঁচু চরে শুকাতে দিচ্ছেন।

চরঘাগুয়া চরের সামচুল শেখের ছেলে কৃষক আবদুল কুদ্দুস জানান, বেণিপুর চরে তিনি তার ১৫ বিঘা জমিতে পিঁয়াজের আবাদ করেছিলেন। এতে তার সর্বমোট খরচ হয়েছিল ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার সকালে জমিতে এসে দেখেন পানি প্রায় জমির কাছাকাছি চলে এসেছে। এ জন্য শুক্রবার তিনি পিঁয়াজ তোলার জন্য ৪০ জন কামলা ঠিক করেন। পরদিন শনিবার জমিতে এসে দেখেন তার প্রায় সব পিঁয়াজ পানিতে তলিয়ে গেছে। কোনোমতে তিনি তার জমির ৩ ভাগের ২ ভাগ পিঁয়াজ তুলতে পেরেছেন। গতকালও তিনি সাতজন কামলা নিয়েছেন। তিনি জানান, আমাদের বেণিপুর চরে প্রায় ৪৫ জন কৃষক প্রায় ৫০০ বিঘা জমিতে পিঁয়াজের আবাদ করছিলেন।

সারিয়াকান্দি কৃষি অফিসের সূত্রমতে, অসময়ে পানিবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে স্থানীয় জাতের কালো এবং সাদা বোরো ধানের। এ বছর উপজেলায় সর্বমোট ৬৫০ হেক্টর স্থানীয় জাতের কালো এবং সাদা বোরো ধানের আবাদ করা হয়। এর মধ্যে ২৫০ হেক্টর জমির ধান আগেই কর্তন করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, পানি বৃদ্ধিতে পুরো উপজেলার প্রায় ৭০ হেক্টর কালো এবং সাদা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এ বছর উপজেলায় ১ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে পিঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কত হেক্টর জমির পিঁয়াজ পানিতে ডুবে গেছে, তা এখনো জানা যায়নি। তবে এর হিসাব চলমান রয়েছে। চিনাবাদামের ক্ষতির হিসাবও চলমান রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী গোলাম  মোহাম্মদ তাসকিয়া জানান, যমুনায় পানি আরও ৩ হতে ৪ দিন বাড়তে পারে। এরপর পানি পুনরায় কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বন্যার আশঙ্কা নেই। সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার আবদুল হালিম জানিয়েছেন, যমুনায় অসময়ে পানিবৃদ্ধিতে স্থানীয় জাতের কালো এবং সাদা বোরো ধানের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের সহায়তা করতে আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সবসময় যমুনার চরগুলোতে রয়েছেন।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের জেগে ওঠা চরে আগাম বোরো ধান লাগিয়েছেন চরাঞ্চলের কৃষক। কিন্তু গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষণের ফলে নদনদীর নিম্নাঞ্চলের আগাম এসব  বোরো আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা কৃষকদের। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ও পানি দ্রুত না কমায় কোমড় পানিতে নেমে এসব বোরো ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষকরা। তারা অন্তত পুরো ধান না পেলেও গরুর খাবার হিসেবে বোরো ধান কেটে নিচ্ছেন। এ ছাড়াও জেলার ৯ উপজেলার নদনদীর চরের ভুট্টা খেত, পাট, পিঁয়াজ ও তরমুজ খেতও পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এতে কৃষকরা ফসল নষ্টের আশঙ্কা করছেন। গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের কৃষকরা পানিতে নেমে বোরো ধান কেটে নিচ্ছেন। কৃষকরা জানান, আকস্মিকভাবে  নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বোরো ধান ও অন্যান্য ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এখন ধান তো দূরের কথা ধানের খড়ও পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই অনেকেই কাঁচা ধান কেটে নিচ্ছেন। অন্যদিকে, পিঁয়াজ, ভুট্টা, পাট ও তরমুজ খেতে পানি ওঠায় কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে।

সর্বশেষ খবর