বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

নয় বছরেও শেষ হয়নি ১৩ কিলোমিটার

টঙ্গী-গাজীপুর সড়কের নির্মাণ কাজ কবে শেষ হবে কেউ জানে না

গাজীপুর ও টঙ্গী প্রতিনিধি

নয় বছরেও শেষ হয়নি ১৩ কিলোমিটার

নয় বছরেও শেষ হয়নি ১৩ কিলোমিটার। টঙ্গী-গাজীপুর মহাসড়কের কাজ কবে শেষ হবে কেউ জানে না। টঙ্গী থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার নিয়ে যাত্রী সাধারণের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। গত নয় বছরেও মহাসড়কের ওই অংশের কাজ শেষ হয়নি।

টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর ১৫-২০ মিনিটের রাস্তা। সেখানে সময় লাগছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ঈদযাত্রায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আসছে ঈদেও ভয়ানক জনভোগান্তি অপেক্ষা করছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নির্মাণাধীন সড়কজুড়ে ধুলা বালিতে অন্ধকার হয়ে থাকছে। টঙ্গী-গাজীপুর সড়কে যানজট দেখা দিলে এর প্রভাব রাজধানী ঢাকায়ও ছড়িয়ে পড়ছে। বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্পের রাস্তা সংস্কারের কাজ কবে শেষ হবে- কেউ জানেন না। একদিকে বিআরটি প্রকল্প অপরদিকে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীর গতি হওয়ায় কাজটি শেষ হচ্ছে না বলে মন্তব্য করছেন এলাকাবাসী।

মহাসড়কে জায়গা দখল করে অসংখ্য দোকানপাট বসানোর কারণেও যানজট তৈরির আরেক কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাগাড় এলাকার ব্যবসায়ী সাইফুল্লাহ খালেদ সেলিম ও বিসিকে ওয়াশিং কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুমন বলেন, মহাসড়কের টঙ্গী ও জয়দেবপুর সড়কে যানজটের কারণে সাধারণ মানুষ যেমনি ভোগান্তির শিকার তেমনি শিল্প মালিকরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত। এমনকি বিদেশি ক্রেতারা নির্দিষ্ট সময়ে কারখানা ভিজিট করতে আসতে না পারায় তারাও ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। এই সংকট থেকে কবে উত্তরণ হবে আমরা কেউ জানি না। সড়কে সরেজমিনে ঘুরে বিভিন্ন লোকজন, পুলিশ, যাত্রী ও চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্পের টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কের মাঝখানে ১৮টি বিআরটি স্টেশন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ওইসব এলাকায় রাস্তা সরু হয়ে আছে। সড়কের ওই স্থান দিয়ে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। টঙ্গী ব্রিজ থেকে চেরাগ আলী পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে টানা এক লেন পরিপূর্ণ হয়নি। কিছু কিছু স্থানে এখনো সড়ক নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় ওইসব স্থানে গাড়ির গতি কমে আসে। তাছাড়া সড়কে বর্তমানে রোড ডিভাইডার না থাকায় চালকরা যত্রতত্র গাড়ি ইউটার্ন করে। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। টঙ্গীর চেরাগ আলী থেকে মিলগেট এলাকা পর্যন্ত ঢাকামুখী সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হয়নি। ওই এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে। তাছাড়া সড়কের দুই পাশে নির্মিত ড্রেনের মুখগুলো বিভিন্ন স্থানে এখনো খোলা রয়েছে। যান ও মানুষ চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। সড়কের মাঝে উড়ালসড়ক তৈরির ব্লকগুলো দীর্ঘদিন ধরে রেখে দেওয়া হয়েছে। এতে দুই পাশের সড়ক ছোট হয়ে যাওয়ায় প্রায়ই এখানে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কটি কোথাও তিন লেন, কোথাও দুই লেনে পরিণত হয়েছে। ওইসব পথে যানবাহন খুবই ধীরগতিতে চলছে। এদিকে টঙ্গীর মিলগেট এলাকা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কে কার্পেটিং কাজ শেষ হয়নি। ওই এলাকার স্থানে স্থানে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। এতে যানবাহন চলছে হেলেদুলে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে গাজীপুর থেকে রাজধানীর বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) আওতায় দেশের প্রথম বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প শুরু হয়। ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে মেয়াদ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর করা হয় এবং ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ ১৪ টাকা। এরপর আরও দুই দফা প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। পরে আবারও তা বাড়িয়ে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর করা হয়। ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি এশীয় উন্নয়ন সংস্থা, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটির (ডিইএফ) অর্থায়ন করছে।

বিআরটি সূত্র জানায়, বিআরটি সড়কে সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ, বিআরটি লেন, ছয়টি ফ্লাইওভার, ২৫টি বিআরটি স্টেশন, ২৫ কিলোমিটার ড্রেন ও দুটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। সাতটি ফ্লাইওভারের কোনোটির ওপর আবার কোনোটির নিচ দিয়ে বিআরটি বাস চলাচল করবে। আবার কোনো ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে বিআরটি ও গণপরিবহন একসঙ্গে চলবে। ধীরগতির যান চলাচলে আলাদা আড়াই মিটার প্রস্থের লেন ও সাড়ে ৪ মিটার ফুটপাথ থাকবে বলে জানা গেছে।

ট্রাফিক দক্ষিণ-এর সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ফয়জুল ইসলাম বলেন, বিআরটি প্রকল্পের খোঁড়াখুঁড়ি আবার বৃষ্টির পানিতে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তে পরিণত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে ডিভাইডার না থাকায় গাড়ি বিশৃঙ্খলভাবে চলাচল করছে। জ্যাম রোধে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (অপরাধ দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ বলেন, বিআরটি প্রকল্পের খোঁড়াখুঁড়ি শেষ না হলে জ্যাম থাকবেই। দ্রুত কাজ শেষ হলেই মানুষের দুর্ভোগ কমবে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আবদুল্লাহ আল মামুন একটি জরিপের কথা উল্লেখ করে বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৫০/৬০ হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। আর ঈদের সময় মানুষের ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি অন্য গাড়ি মিলে এই সংখ্যা তখন বেড়ে হবে কয়েক গুণ। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ঈদ উপলক্ষে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে ট্রাফিক বিভাগের ৩০০ পুলিশ তো থাকবেই। সেই সঙ্গে ঈদের সময় সাত দিন অতিরিক্ত শতাধিক পুলিশ সদস্য এ কাজে নিয়োজিত করা হবে। যারা পালা করে দায়িত্ব পালন করবেন।

বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ বলেন, পুরো প্রকল্পের কাজের এখন পর্যন্ত ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের ভিতরে কাজ শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমাদের প্রস্তুতি ঈদ কেন্দ্রিক। আশা করি ঈদে সমস্যা হবে না।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর