শিরোনাম
বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

বৈসাবি উৎসবের জোয়ারে পাহাড়

রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

বৈসাবি উৎসবের জোয়ারে পাহাড়

দুয়ারে কড়া নাড়ছে বৈশাখ। পুরনো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ করতে উৎসবমুখর এখন পার্বত্যাঞ্চল। তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা এবার বৈসাবিকে সাজিয়েছে নানা রঙে, নানা ঢঙে। নাচে-গানে-উল্লাসে মেতেছে তরুণ-তরুণীরা। গত দুই বছর করোনা মহামারির জন্য পার্বত্যাঞ্চলে বৈসাবি পালিত না হলেও এবার ভিন্ন চিত্র। ৪ এপিল থেকে শুরু হওয়া বৈসাবি উৎসব চলছে এখনো। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পল্লীগুলোতে প্রতিদিনই বসছে গানের আসর। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে নূপুরের ছন্দ। সবমিলিয়ে পাহাড় এখন উৎসবের নগরী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পার্বত্যাঞ্চলের ১০ ভাষাভাষি ১১টি ক্ষুদ্র্র নৃগোষ্ঠী ভিন্ন ভিন্ন নামে বৈসাবি উৎসব পালন করে থাকে। চাকমারা-বিজু, মারমারা-সাংগ্রাইং, ত্রিপুরা-বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা-বিষু ও অহমিয়ারা-বিহু নামে পালন করে থাকে। অর্থাৎ সবমিলিয়ে এর নাম রাখা হয় বৈসাবি। বছরজুড়ে অপেক্ষার পর বৈসাবি এলে পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা এ বৈসাবি উৎসবে মেতে ওঠে।

গতকাল সকাল ৭টায় রাঙামাটি রাজবাড়ি ঘাটে ফুলবিজু উৎসব উদ্বোধন করেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান। এ সময় বৈসাবি উৎসব কমিটির আহ্বায়ক প্রকৃত রঞ্জন চাকমা উপস্থিত ছিলেন। রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে গঙ্গাদেবীকে ফুল উৎসর্গ করে বিশ্ববাসীর শান্তি সম্প্রীতির প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ফুলবিজুর আনুষ্ঠানিকতা। অন্যদিকে ফুলবিজুকে রঙিন করে সাজাতে গর্জনতলি ত্রিপুরা পল্লীতেও বসে উৎসব-আসর। গড়াই নৃত্যের পাশাপাশি চলে বয়স্কদের স্নান ও বস্ত্রদান উৎসব। আয়োজন করা হয় নানা পিঠা-পুলির। রাঙামাটি ত্রিপুরা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ঝিনুক ত্রিপুরা বলেন, এবার বৈসাবি অর্ধ মাসব্যাপী চলবে। গত দুই বছর করোনার কারণে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা কোনো উৎসবই করতে পারেনি। পাহাড়ে লাগেনি উৎবের রঙ। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র। সবাই আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে রয়েছে। কাল আমাদের মুলবিজু। মুলবিজুতে সবাই নতুন জামা কাপড় পরিধান করে ঘুরে বেড়াই। সন্ধ্যায় বসে নাচ-গানের আসর। ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ অর্থাৎ চাকমা ভাষায় গোজ্জ্যাপোজ্জ্যা ও ১৫ এপ্রিল পালন করা হবে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি উৎসব। এর মধ্যে চলবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নৃত্য-সংগীত, জুম্ম  খেলাধুলা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, পণ্য প্রদর্শনী, বেইন বোনা প্রতিযোগিতা। এদিকে গতকাল ভোরে খাগড়াছড়ি সদরের খবংপুজ্যা এলাকা দিয়ে চেঙ্গী নদীতে ফুল দিতে শত শত চাকমা শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের ভিড় জমান। সূর্যোদয়ের আগেই চাকমারা দলে দলে ছুটে নদীর তীরে সমবেত হন। কেউ একাকী আবার অনেকে সারিবদ্ধ হয়ে নদীতে নানা রঙের ফুল উৎসর্গ করেন। যেন রঙিন হয়ে ওঠে চেঙ্গী নদী। এ ছাড়া শহর, শহরতলির বিভিন্ন খাল ও প্রাকৃতিক ছড়াও ফুলে ফুলে ভরে যায়। ছোট্ট শিশুরা নদীতে আনন্দ-উল্লাস করে নতুন বছরকে আহ্বান জানায়।

এর আগে তারা ফুল সংগ্রহ করে। বৈসাবিকে ঘিরে এরই মধ্যে পাহাড়ের পাড়া-পল্লীতে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলায় মেতেছে পাহাড়িরা। বিগত দুই বছর করোনার ধকল কাটিয়ে এবার বর্ণিল সাজে বৈসাবি পালন করছে পাহাড়ের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোররা। ঐতিহ্যবাহী বৈসাবিকে ঘিরে গিলাখেলা, পানিখেলাসহ নানা খেলাধুলার উৎসবে মেতেছে জেলার প্রত্যেকটি পাহাড়ি পল্লীগ্রাম। এ উপলক্ষে খাগড়াছড়ি সদরে মহাজনপাড়া সূর্যশিখা ক্লাবে চলছে তিন দিন ধরে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠান। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ইনস্টিটিউটের আয়োজনেও  চলছে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর