বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

হঠাৎ রেল ধর্মঘটে ভোগান্তি

মন্ত্রীর আশ্বাসে প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

হঠাৎ রেল ধর্মঘটে ভোগান্তি

রেলওয়ের রানিং স্টাফদের হঠাৎ ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে গতকাল তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

মাইলেজ বেতন, পেনশন ও আনুতোষিক হিসাব সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন না হওয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের ধর্মঘটে সারা দেশে রেলে চলাচল করা যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ ধর্মঘটে মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টা থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল বেলা দেড়টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে রেল চলাচল। রানিং স্টাফদের কাজে ফিরিয়ে আনতে সকাল সাড়ে ৯টায় কমলাপুর স্টেশনে যান রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন রেল সচিব হুমায়ুন কবীর ও রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার। বেলা ১২টায় সেখানে রেলমন্ত্রী কথা বলেন আন্দোলনরত রানিং স্টাফদের সঙ্গে। পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের যে প্রজ্ঞাপন নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে সেটি বাতিলে সব রকম চেষ্টা করা হবে। আগামী ১৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রানিং স্টাফদের দাবি নিয়ে আলোচনা হবে। রানিং স্টাফরা আগের মতো সুবিধাগুলো পেয়ে আসবেন আশা করি।’ তিনি বলেন, ‘একটি চক্র রেলকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আশা করি রানিং স্টাফরা এই ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না।’ ঈদের আগে যেন যাত্রীদের কোনো অসুবিধা না হয় সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখার অনুরোধ করেন মন্ত্রী। এরপর রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক সাইদুর রহমান রানিং স্টাফদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান। দাবি পূরণে রেলমন্ত্রীর আশ্বাসের পরই ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন রানিং স্টাফরা। এরপর রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়। বেলা ১টা ৩৯ মিনিটে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ সারওয়ার বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দিনে ৭২টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে ভোর ৬টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ১৮টি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। এসব ট্রেনের টিকিটের টাকা যাত্রীদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। একইভাবে দেশের অন্যান্য স্টেশন থেকে টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। রেল ধর্মঘটে গতকাল ভোর থেকেই দুর্ভোগে পড়েন চলাচলকারী সারা দেশের মানুষ। কষ্ট করে টিকিট করে স্টেশনে গিয়েও তারা পাননি ট্রেনের দেখা। স্টেশনে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেকেই ফেরত যান রেল ধর্মঘটের খবর পেয়ে। বেলা সাড়ে ১২টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বেলা ১১টায় এ ট্রেন কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। স্টেশনে এসে ধর্মঘটের কথা জানতে পারি। কখন ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে তা বলতে পারছি না।’ সকাল সাড়ে ৮টার ট্রেনে রাজশাহীতে যাওয়ার জন্য টিকিট কেটেছিলেন তরিকুল ইসলাম। সকাল সাড়ে ৭টায় পরিবার নিয়ে স্টেশনে এসেছেন তিনি। তিনিও ট্রেনের আশায় সকাল থেকেই বসে ছিলেন স্টেশনে। হঠাৎ ডাকা ধর্মঘটে নাকাল যাত্রীরা বলেন, ‘এভাবে দুর্ভোগে ফেলার কোনো কারণ দেখি না। এমনিতেই ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় না। এখন টিকিট পেয়েও বাড়ি যেতে পারলাম না।’ বেলা দেড়টার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ সারওয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তবে সকালের কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। সকাল থেকে না যেতে পারা ট্রেনগুলো ক্রমে স্টেশন ছেড়ে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে। ধর্মঘটের কারণে সৃষ্ট শিডিউল বিপর্যয় বৃহস্পতিবারের (আজ) মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।

রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও ধর্মঘটে নাকাল হয়েছেন যাত্রীরা। জিয়া হাসান আজাদ হিমেল নামে এক যাত্রী ভোরে স্টেশনে এসে জানতে পারেন, ট্রেন ছাড়বে না। এ সময় পরিবার নিয়ে তিনি ভোগান্তিতে পড়েন। দ্রুত গন্তব্যে যেতে ফেরত নিতে পারেননি টিকিটের টাকাও। বাসে চড়ে ফিরেছেন গন্তব্যে। শুধু হিমেল নন, এমন কয়েক হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন ভোরে রাজশাহী স্টেশনে এসে। রেলের রানিং স্টাফদের আন্দোলনে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকালে বিভিন্ন গন্তব্যে ছাড়ার উদ্দেশে প্রস্তুত পাঁচটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়। পরে যাত্রীদের টিকিটের টাকা দেওয়া হয়। বেলা দেড়টার দিকে সিল্কসিটি ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টিকিট বিক্রির সার্বিক বিষয় নিয়ে গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। রেল ভবনে বেলা আড়াইটায় এর আয়োজন করা হয়। এতে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো যাত্রীদের ভ্রমণের সুবিধার্থে ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। সেগুলো হলো- চাঁদপুর স্পেশাল-১, চাঁদপুর স্পেশাল-২, দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল, খুলনা স্পেশাল, শোলাকিয়া স্পেশাল-১ ও শোলাকিয়া স্পেশাল-২।

এ ছাড়া বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ঢাকার পাঁচটি স্টেশন থেকে টিকিট বিক্রয় করা হবে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চল? ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে, ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী আন্তনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে। তেজগাঁও স্টেশনে ময়মনসিংহ, জামালপুরগামী ও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের এবং ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে।

আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে ঈদের ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য টিকিট বিক্রি শুরু হবে। আগামী ২৩ এপ্রিল ২৭ এপ্রিলের টিকিট, ২৪ এপ্রিল ২৮ এপ্রিলের, ২৫ এপ্রিল ২৯ এপ্রিলের, ২৬ এপ্রিল ৩০ এপ্রিলের ও ২৭ এপ্রিল ১ মে তারিখের টিকিট বিক্রয় করা হবে। এ ছাড়া ঈদের পর ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ১ মে। ১ মে তারিখে ৫ মের, ২ মে ৬ মে তারিখের, ৩ মে ৭ মে তারিখের ও ৪ মে ৮ মে তারিখের ফিরতি টিকিট বিক্রি করা হবে। ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ এই স্লোগানে যাত্রীদের এনআইডি/জন্মসনদ ফটোকপি কাউন্টারে প্রদর্শনপূর্বক টিকিট ক্রয় করা যাবে। একজনকে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট দেওয়া হবে। ঈদের অগ্রিম টিকিট ফেরত নেওয়া হবে না। এবার প্রথমবারের মতো প্রতিটি আন্তনগর ট্রেনে শুধু মহিলা ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য একটি করে আলাদা কোচ সংযোজন করা হবে।

সর্বশেষ খবর