বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

আসছে ডিজিটাল জনশুমারি

দেশব্যাপী তথ্য সংগ্রহ চলবে ১৫ থেকে ২১ জুন

গোলাম রাব্বানী

এক যুগ পরে হচ্ছে জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজ। প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে এ শুমারির কাজ হবে। দেশব্যাপী আগামী ১৫ থেকে ২১ জুন এ শুমারির তথ্য সংগ্রহ চলবে। ষষ্ঠ এ ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’র কাজ বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এবারে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’ ২০২২ কাজ শেষে স্বল্প সময়ে এই শুমারির রিপোর্ট প্রকাশ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আগে একাধিকবার এই শুমারির তথ্য সংগ্রহের তারিখ পরিবর্তন হলেও এবারে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এ কাজ শুরু করছে বিবিএস।

এদিকে ১০ বছর পরপর জনসংখ্যার সঠিক পরিসংখ্যান জানতে জনশুমারি ও গৃহগণনা হয়। তবে ২০১১ সালের পর ১২ বছর পার হয়ে গেলেও জনশুমারি ও গৃহগণনা করা যায়নি। বারবার শুমারির তারিখ নির্ধারণ হলেও তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ অনিয়মের অভিযোগে পিছিয়ে যায় ষষ্ঠ জনশুমারির কাজ। এ ছাড়া সময়মতো জনশুমারির কাজ না হওয়ায় জনসংখ্যার সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। বাধাগ্রস্ত হয়েছে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজও। বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বলা হয়েছিল জনশুমারি না হওয়ায় সঠিকভাবে সীমানা নির্ধারণের কাজ করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’ প্রকল্পের পরিচালক মো. দিলদার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবদান রাখার অভিপ্রায়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রথম ‘ডিজিটাল শুমারি’ পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এবারের শুমারিতে জিআইএস (জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম) ভিত্তিক ডিজিটাল ম্যাপ ব্যবহার করে ডিজিটাল ডিভাইস ‘ট্যাবলেট’ এর মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। মাঠপর্যায়ে মূল শুমারির তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম আগামী ১৫ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত চলবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কর্মকর্তারা জানান, আগেও জনশুমারির তথ্য সংগ্রহের তারিখ বেশ কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে। দেশব্যাপী একযোগে সাত দিন জনশুমারির তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ জন্য ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাবলেট ক্রয় করা হচ্ছে। বিবিএস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তথ্য সংগ্রহকারীরা প্রত্যেক গৃহ, খানা ও ব্যক্তির তথ্য ট্যাবলেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করবে। মাঠপর্যায় থেকে সংগৃহীত তথ্য সংরক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড (বিডিসিসিএল)-এর টায়ার ফোর সিকিউরিটি সমৃদ্ধ ডাটা-সেন্টার ব্যবহার করা হবে। মাঠপর্যায়ে থেকে সংগ্রহীত তথ্য-উপাত্ত সার্ভারে আসার পূর্ব পর্যন্ত সব পর্যায়ে এনক্রিপটেড অবস্থায় থাকবে; যার মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা হচ্ছে। শুমারির তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমের অগ্রগতি মনিটর করার জন্য শুমারি পর্যবেক্ষণ অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। যার মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম মনিটর করা হবে। এ প্রক্রিয়াটি নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ব্যবহারের ফলে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ সহজ হবে এবং স্বল্পতম সময়ে শুমারির রিপোর্ট প্রকাশ সম্ভব হবে। বিবিএস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথম আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয়। পরবর্তী সময় ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১১ সালে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বার দেশে আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয়। ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া ‘পরিসংখ্যান আইন-২০১৩’ অনুযায়ী ‘আদমশুমারি ও গৃহগণনার নাম পরিবর্তন করে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’ করা হয়। এ ছাড়া সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে মোট জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ১৭ লাখ। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, জনশুমারি পিছিয়ে যাওয়ার একটা বড় কারণ ছিল কভিড-১৯। এ ছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি ও গৃহগণনা করার জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে ট্যাব কিনতে গিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর সেটি আমরা বাতিল করি। এ কারণেও পিছিয়ে গেছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, গত মার্চ মাসেও আমরা তারিখ নির্ধারণ করেছিলাম। কিন্তু সেটাও সম্ভব হয়নি। এবার ১৫ থেকে ২১ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছেন। আশা করি, এই দফায় আমরা জনশুমারি সম্পন্ন করতে পারব।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর