শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

রাজধানীতে ফের মশার উপদ্রব পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার শঙ্কা

♦ জরিপে ৪.৫৩ শতাংশ এডিসের লার্ভা ♦ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সিটি করপোরেশন

হাসান ইমন

রাজধানীতে আবারও বেড়েছে মশার উপদ্রব। বস্তি থেকে অভিজাত এলাকা। সর্বত্রই মশার আক্রমণ। মশারি, কয়েল আর স্প্রেও কোনো কাজে আসছে না। দুই সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে নানা চেষ্টা করলেও কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। এদিকে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনে স্বাস্থ্য অধিদফতর পরিচালিত ১০ দিনব্যাপী জরিপে ৪.৫৩ শতাংশ এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। বৃষ্টি হলে এর পরিমাণ আরও বাড়বে বলেও জানান কীটতত্ত্ববিদরা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি থেকে পরিচালিত ২৫ মার্চ থেকে ১০ দিনব্যাপী উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের ১০০টি সাইটে কীটতাত্ত্বিক জরিপ করেছে। জরিপে ২১ জন কীটতত্ত্ববিদের সমন্বয়ে গঠিত দল ১০ দিনে ৩ হাজার ১৫০টি বাড়ি পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে ১৪৩টি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। বাড়িতে লার্ভা শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদফতর আরও জানিয়েছে, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার গবেষণা শেষে মশার ঘনত্ব দিয়ে জিআইএস ম্যাপিং করা হবে। এতে ঢাকার কোন কোন এলাকায় মশার ঘনত্ব বেশি সেটা জানা যাবে।

কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রাক-মৌসুমি এডিস মশার ঘনত্বের জরিপে আমরা যেটি পেয়েছি, সেটি গত বছরের এই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বৃষ্টিপাত শুরু হলে এই ঘনত্ব আরও বাড়বে। এডিস মশার ঘনত্ব বাড়লে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তাই এখনই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনা শুরু করা উচিত। ’ তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি শুরু হলে আমরা আরও একটা জরিপ পরিচালনা করব। ওই জরিপের আলোকে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হবে। তবে এখন থেকে নগরবাসীকে আরও সচেতন হতে হবে। স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণেই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে সংশ্লিষ্ট সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ও বাড়াতে হবে।

এদিকে বর্তমানে রাজধানীর উত্তরার কয়েকটি সেক্টর, আশকোনা, গোড়ান, বনশ্রী, তেজগাঁও, বাড্ডা, জুরাইন, রায়েরবাগ, শ্যামপুর, মোহাম্মদপুরের বছিলা, মিরপুরের পল্লবীসহ আরও কিছু এলাকায় মশার উৎপাত বেশি বলে খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকাসহ রাজধানীজুড়েই চলতি মাসে এডিস মশার উৎপাত বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবশ্য দুই সিটি করপোরেশন এরই মধ্যে এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে কাজ শুরু করেছে। ভুক্তভোগী নগরবাসীরা জানান, গত কয়েক দিনে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ জনজীবন। দিনরাত সমান তালে কামড়াচ্ছে মশা। দরজা জানালা আটকা রাখলেও নিস্তার মিলছে না। সব সময় বাসায় মশারি টানিয়ে রাখতে হয়। বিশেষ করে বাচ্চাদের নিয়ে বিপাকে অভিভাবকরা। তারা বলছেন, শিশুদের বাসায় আটকিয়ে রাখা যায় না। বাসায় থাকলেও সারাক্ষণ হাত-পায়ে মশার কামড়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে। বাইরেও একই অবস্থা। কোথাও দাঁড়ানো কিংবা বসা যায় না। মাঝেমধ্যে মশককর্মীরা এলেও তাদের ওষুধে মশা মরে না।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মশা নিধনে কাজ অব্যাহত রেখেছি। উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় মশা বাড়ার অভিযোগ আসছে। আমরা খুব দ্রুত মশা নিধন অভিযান শুরু করব। ’

 

সর্বশেষ খবর