শিরোনাম
সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ব্যাপক হামলা, রাশিয়ার আলটিমেটাম

মার্কিন অস্ত্র বোঝাই বিমান ভূপাতিত করার দাবি, আত্মসমর্পণ প্রত্যাখ্যান ইউক্রেনের

প্রতিদিন ডেস্ক

ইউক্রেনে ৮০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা পৌঁছানো শুরু হতেই রুশ হামলায় ভূপাতিত হয়েছে মার্কিন অস্ত্র বোঝাই একটি ইউক্রেনীয় সামরিক বিমান। এ ছাড়া গত শনিবার রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত রুশ বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেন বাহিনীর ২৭৪টি শক্ত ঘাঁটিসহ অন্তত ৩১৭টি সামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। পাশাপাশি মারিউপোলে অবরুদ্ধ থাকা বিদেশি সেনাসহ ইউক্রেন সেনাদের আত্মসমর্পণের আলটিমেটাম দিয়ে রুশ বাহিনী বলেছে, অন্যথায় তাদের ওপর চূড়ান্ত আঘাত হানা হবে। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল জাজিরা, স্পুটনিক, সিএনএন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগর কোনোশেনকভ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রুশ সেনারা ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরের পাশে মার্কিন অস্ত্র বোঝাই একটি সামরিক পরিবহন বিমান ভূপাতিত করেছে। বন্দরের কাছে রাশিয়ার বিমান বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে ইউক্রেনের এই সামরিক বিমানটি ভূপাতিত করা হয়। বিমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর দেওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র বহন করা হচ্ছিল।

ইগর কোনোশেনকভ গত শনিবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত রুশ হামলার বিবরণ দিয়ে জানান, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের ৬৭টি এলাকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে দিয়েছে। রাশিয়ার সেনারা ৩১৭টি সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে ২৭৪টি ইউক্রেনে সেনাদের শক্ত ঘাঁটি বলে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া ২৪টি কমান্ড পোস্ট ও দুটি জ্বালানি সংগ্রহের স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। রুশ বাহিনী দুটি ড্রোনও ভূপাতিত করেছে। এর আগের রাতে রুশ বাহিনী উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের ১৬টি সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করে। এর মধ্যে ওডেসা অঞ্চলের পোভস্তানস্কো গ্রামে ইউক্রেনের সামরিক যানের ১১টি সংরক্ষণাগারও রয়েছে। রুশ সেনারা ইউক্রেনের নিকোলেইভ শহরের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলার দুটি গুদামও ধ্বংস করে। এ ছাড়া পোলতাভা শহরের দক্ষিণ-পূর্বে রাডার ও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের সরঞ্জামের গুদাম, পোলতাভা শহরের দক্ষিণে বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের গুদাম এবং গুসারভকা গ্রামে বিমানবাহিনীর ৯৫তম ব্রিগেডের ইউক্রেনীয় ইউনিটগুলোর একটি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়। কিয়েভের একটি ট্যাংক তৈরির কারখানা এবং নিকোলেইভের সামরিক সরঞ্জাম মেরামতের জন্য একটি ওয়ার্কশপও  ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংস করা হয় বলে তিনি জানান।

মারিউপোল বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আলটিমেটাম : গতকাল রাশিয়া মস্কো সময় সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সেনা ও ‘বিদেশি ভাড়াটে সেনাদের’ অস্ত্র সমর্পণে সময় বেঁধে দিয়ে জানায়, ‘যারাই অস্ত্র নামিয়ে রাখবে, তাদের যুদ্ধবন্দির মর্যাদা দেওয়া হবে ও জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী আচরণ করা হবে। অন্যথায় তাদের ওপর চূড়ান্ত আঘাত হানা হবে।’

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রুশ বাহিনী গত শনিবারই মারিউপোল শহরের চারপাশের সব এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। ইউক্রেন বাহিনীর অল্প কিছু সেনা এখন বিশাল এক ইস্পাত কারখানা সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবরুদ্ধ হয়ে আছে। তাদের সঙ্গে পশ্চিমা সেনাও রয়েছে। সংবাদ সূত্রগুলো জানিয়েছে, যে কারখানা এলাকার  ভিতর ইউক্রেনীয় সৈন্যরা আছে বলে রাশিয়া দাবি করছে, সেটি আজভস্টাল কারখানা। এটাকে দুর্গও বলা যেতে পারে। এটি যে শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত সেটির আয়তন ১১ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি। এখানে অগণিত ভবন, ধাতু গলানোর চুলা এবং রেললাইন আছে। শহরটি রক্ষায় যারা লড়াই করে আসছিল, তাদের মধ্যে ইউক্রেনের মেরিন, মোটরাইজড ব্রিগেড, ন্যাশনাল গার্ড ব্রিগেডের পাশাপাশি আজভ  রেজিমেন্টের সদস্যরাও আছে। কট্টর-ডান জাতীয়তাবাদীদের সৃষ্ট এই মিলিশিয়া বাহিনী আজভ ইউক্রেনের ন্যাশনাল গার্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তবে ইস্পাত কারখানা এলাকায় ইউক্রেনের কতজন দেশি-বিদেশি সেনা আছে, তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, মারিউপোলের পরিস্থিতি এখন খুবই জটিল। সেখানে ইউক্রেন সেনারা আটকে আছে। আহতরাও আটকে আছে। সেখানে মানবিক বিপর্যয়  দেখা দিয়েছে, তা সত্ত্বেও তারা নিজেদের রক্ষা করে যাচ্ছে।’

যুদ্ধে ইউক্রেনের ২৩ হাজার ৩৬৭ সেনা নিহত : রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ৩ হাজার সেনা নিহত হয়েছে বলে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের হিসাব অনুযায়ী একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, যুদ্ধে বিদেশি সাহায্যপুষ্ট ইউক্রেন অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ পর্যন্ত তাদের ২৩ হাজার ৩৬৭ সেনা এবং ভাড়াটে যোদ্ধা নিহত হয়েছে। এ তথ্য জানিয়ে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ বলেন, শুধু মারিউপোল শহরেই ইউক্রেনের ৪ হাজার সেনা ও ভাড়াটে যোদ্ধা নিহত হয়েছে। এর মধ্যে বহু উগ্রপন্থি কুখ্যাত নাজিবাদী রয়েছে। তিনি এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে অভিযুক্ত করে বলেন, ‘যুদ্ধে নিহত ইউক্রেনের সেনাদের প্রকৃত সংখ্যা তিনি গোপন করছেন, কারণ তিনি ইউক্রেনের জনগণকে ভয় পাচ্ছেন।’ জেনারেল কোনোশেনকভ বলেন, রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেনের সেনাদের হতাহত হওয়ার ব্যাপারে প্রমাণিত তথ্য হাতে পেয়েছে এবং শিগগিরই এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।

৮০ কোটি ডলারের মার্কিন সামরিক সহায়তা পৌঁছানো শুরু : যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাড়তি ৮০০ মিলিয়ন (৮০ কোটি) মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তা ইউক্রেনে পৌঁছাতে শুরু করেছে। উল্লেখ্য, এ সপ্তাহের শুরুতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৮০ কোটি মার্কিন ডলারের বাড়তি সামরিক সহায়তা অনুমোদন করেন। সে সময় বাইডেন বলেন, ‘পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার ব্যাপক অস্ত্রশস্ত্রের মুখে এ সহায়তা ইউক্রেনের কাজে লাগবে।’ এবারের ৮০ কোটিসহ এ পর্যন্ত বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনকে তিন বিলিয়ন অর্থাৎ ৩০০  কোটি ডলারের সামরিক সহায়তার অনুমোদন দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর