মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ঝুলে গেছে ভারতের সঙ্গে সংযোগ রেল প্রকল্প

তিন বছরেও পরামর্শক নিয়োগ হয়নি খুলনা-দর্শনা ডাবল লাইন নির্মাণে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ঝুলে গেছে ভারতের সঙ্গে সংযোগ রেল প্রকল্প

ভারতের সঙ্গে রেলপথে কানেকটিভিটি স্থাপনের লক্ষ্যে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের প্রায় চার বছরের মাথায় এখন জানা যাচ্ছে, এর অবকাঠামোগত কাজ শুরুই করা যায়নি। এমনকি তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শক নিয়োগ হয়নি। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘খুলনা হতে দর্শনা জংশন সেকশনে ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পের কথা।

আলোচ্য প্রকল্পটি নিয়ে গত ১ মার্চ রেলপথ মন্ত্রণালয়ে প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির একটি সভা হয়েছে। সেখানে অভিমত প্রকাশ করা হয়, ‘প্রকল্পের শুরু থেকে ইতোমধ্যে ৩ বছর ১০ মাস অতিবাহিত হয়েছে, এখনো পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন পর্যায়ে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের সম্মতি গ্রহণে সময় কম লাগলে প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজতর হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহার লক্ষ্যে এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মনিরুল ইসলাম ফিরোজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই প্রকল্পটির কাজ কিছুটা ভিন্নরকম। ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটে (এলওসি) বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে আমাদের প্রত্যেকটি পর্যায়ের জন্য  দেশটির এক্সিম ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আমরা সব অনুমোদন এরই মধ্যে নিয়েছি। আশা করছি পরবর্তী সভায় পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব তোলা হবে।’

জানা গেছে, ৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার এই প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থাৎ ২ হাজার ৬৯০ কোটি দেওয়া হচ্ছে ভারতের দ্বিতীয় এলওসি থেকে। ২০১৫ সালের জুনে ঢাকা সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন করে ১ শতাংশ সুদে ২০০ কোটি ডলার ঋণের যে ঘোষণা দেন, সেটিই দ্বিতীয় এলওসি নামে পরিচিত। এই প্রকল্পের ভ্যাট ও ট্যাক্স বাবদ অবশিষ্ট ৮১৬ কোটি টাকা দেওয়ার কথা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে। ২০১৮ সালের মে মাসে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয় ওই বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সে হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আর সময় আছে মাত্র আট মাস।

মনিরুল ইসলাম ফিরোজ জানান, প্রকল্পটির মেয়াদ যেহেতু শেষের পথে, সে কারণে (রেলপথ) মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিকভাবে এর    মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের হাতে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় আছে, সে কারণে আমরা পরামর্শক নিয়োগসহ অন্যান্য কার্যক্রমে গুরুত্ব দিচ্ছি।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, খুলনা থেকে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকা পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ৪১৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে মাত্র ১১০ কিলোমিটার ডাবল লাইন এবং বাকি ৩০৩ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন। এই ৩০৩ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে খুলনা থেকে দর্শনা ১২৬ কিলোমিটার এবং ঈশ্বরদী থেকে টঙ্গী ১৭৭ কিলোমিটার। এই দুটো সেকশনে ডাবল লাইন নির্মাণ কার্যক্রম শেষ হলে ঢাকা থেকে খুলনা-দর্শনা হয়ে সরাসরি যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন ভারতে প্রবেশ করতে পারবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে ঢাকা-খুলনা করিডোরের খুলনা-দর্শনা সেকশনে সিঙ্গেল বিজি লাইন সেকশন রয়েছে। এই সেকশনটি খুলনা-ঢাকা, খুলনা-চিলাহাটি এবং খুলনা-রাজশাহী রুটের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। ভারতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে এ রেল রুটগুলো বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে ভারতের সব রেলপথ ডাবল লাইন। ফলে খুলনা-দর্শনা সেকশনে ১২৬ কিলোমিটার ডাবললাইন রেলপথ নির্মাণ হলে, স্বল্প সময়ে অধিক সংখ্যক যাত্রীবাহী এবং মালবাহী ট্রেন পরিচালনা করা যাবে। পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য জ্বালানি তেল পরিবহন এবং দ্রুত ও নিরাপদ রেল সেবা নিশ্চিতকরণ করা যাবে। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হওয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব বাড়বে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর