মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

পিতৃস্নেহের অনন্য নিদর্শন

মোস্তফা মতিহার

পিতৃস্নেহের অনন্য নিদর্শন

কন্যা ইরান দুখত রাহমাত বানু ওরফে পরী বিবিকে অপরিসীম ভালোবাসতেন পিতা বাংলার মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খান। শাহজাদির মৃত্যু মুঘল শাসক শায়েস্তা খানকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। শাহজাদি ইরান দুখত রাহমাত বানু ওরফে পরী বিবিকে স্মৃতিময় করে রাখতে তাঁর স্মরণেই পরী বিবির মাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শায়েস্তা খান। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা আজমের সঙ্গে ১৬৬৮ সালের ৩ মে পরী বিবির বিয়ে হয়। ১৬৮৪ সালে পরী বিবির মৃত্যুর পর তাঁকে নির্মাণাধীন লালবাগ কেল্লার অভ্যন্তরে সমাহিত করা হয়। তাঁর সমাধিস্থলকে চিহ্নিত করে নির্মিত হয় পরী বিবির মাজার। এটি কেবলই মাজার নয়, কন্যার প্রতি পিতার ভালোবাসার অনন্য নিদর্শন। মাজারটির স্থাপত্যশৈলীর বাঁকে বাঁকে শৈল্পিকভাবে উঠে এসেছে এক পিতার বুকের পাঁজরের করুণ হাহাকার ও কন্যার প্রতি পিতার পরম মমতা আর অব্যক্ত ব্যথামালা। কন্যার প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে মারবেল পাথর ও কষ্টিপাথরের সঙ্গে বিভিন্ন রঙের ফুল-পাতা সুশোভিত চাকচিক্যময় টালির সাহায্যে অভ্যন্তরীণ নয়টি কক্ষের সমন্বয়ে এ স্থাপনাটি নির্মাণ করেন শায়েস্তা খান। সমাধিস্থলে রয়েছে আটটি ঘর। করবেল পদ্ধতিতে কষ্টিপাথরে তৈরি করা হয়েছে স্থাপনাটির ছাদ এবং চার কোণে চারটি অষ্টকোণ মিনার আর মাঝে রয়েছে একটি অষ্টকোণ গম্বুজ। মূল সমাধিসৌধের কেন্দ্রীয় কক্ষের ওপরের এ গম্বুজটি একসময় স্বর্ণখচিত ছিল। পরে পিতলের ও তামার পাত দিয়ে পুরো গম্বুজটি মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থাপনাটির অভ্যন্তরভাগ সাদা মারবেল পাথর দিয়ে আচ্ছাদিত। ২০.২ মিটার বর্গাকৃতির এ সমাধিটি ১৬৮৮ সালের আগে নির্মিত। মুঘল আমলের লালবাগ কেল্লার অবশিষ্ট তিনটি স্থাপনার মধ্যে এ মাজারটি অন্যতম। লালবাগ কেল্লা পরিদর্শনে আসা বিনোদন পিপাসুদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পরী বিবির মাজার। জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত কেল্লার বিশাল ও সুউচ্চ প্রধান দরজাটি দিয়ে প্রবেশ করলেই সোজা চোখে পড়ে মাজারটি। শাহজাদির প্রতি পিতৃস্নেহের গভীর মমত্ববোধের কারণে লালবাগ কেল্লার সঙ্গে পরী বিবির মাজারটিও ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে গর্বের সঙ্গে। পুরো কেল্লা ঘুরেফিরে দেখার পর পরী বিবির মাজারের কাছে এসে থমকে যান দর্শনার্থীরা। পিতার প্রতি কন্যার ভালোবাসার অনন্য এ নিদর্শনটির কাছে এসে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সুরম্য কেল্লার স্থাপত্যশৈলী দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীদের মধ্যে আনন্দে নেমে আসে শোকের বিহ্বলতা। লালবাগ কেল্লার সঙ্গে পরী বিবির মাজার ও পিতা-কন্যার ভালোবাসার স্থাপনাকে স্মৃতিময় করে রাখতে এ সময় নিজেদের সেলফিবন্দি করে রাখতেও কার্পণ্য করেন না দর্শনার্থীরা। লালবাগ কেল্লায় ঘুরতে আসা বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, দেওয়ান-ই-আম, দুর্গ, জাদুঘরসহ পুরো এলাকা ঘুরে দেখার পর পরী বিবির মাজার না দেখলে এখানে আসাটাই বৃথা। তবে মাজারপ্রাঙ্গণে এলে ঘোরাঘুরির সব আনন্দ মুহূর্তেই বিষাদময় হয়ে ওঠে। কন্যার প্রতি পিতার এমন ভালোবাসা নিঃসন্দেহে বিরল।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর