মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে ছাত্রদলের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক

যোগ্য ও ত্যাগীদের অগ্রাধিকার : শ্রাবণ, ব্যক্তি পছন্দের প্রতিফলন নয় : জুয়েল

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

যোগ্য ও ত্যাগীদের অগ্রাধিকার : শ্রাবণ, ব্যক্তি পছন্দের প্রতিফলন নয় : জুয়েল

বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেছেন, তাদের মূল চ্যালেঞ্জ তিন মাসের মধ্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা, ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ড, থানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি করে সংগঠনের সবাইকে একটা সাংগঠনিক পরিচয় দেওয়া। এক্ষেত্রে যোগ্য ও ত্যাগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য হয়ে কীভাবে ছাত্রদলের রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হলেন জানতে চাইলে কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, কলেজ জীবনে ছাত্র রাজনীতির যে সংস্কৃতি চলমান ছিল তাতে ছাত্রদলের রাজনীতিতেই বেশি আকৃষ্ট হই। সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরই মেধাবী, স্মার্ট ও রুচিশীল মনে হয়েছে। সেখান থেকেই ছাত্রদলকে লালন করতে থাকি। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হই। তিনি বলেন, গত ১০ বছর আমার পরিবার থেকে আমি বিচ্ছিন্ন। আমার পরিবার ভিন্ন মতাদর্শের রাজনীতিকে বিশ্বাস করে বলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের সঙ্গে আমার আদর্শিক দূরত্ব থাকবে। আমার পরিবার হয়তো মনে করেছে- ভিন্ন রাজনীতির কারণে আমার সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখলে তাদের রাজনীতিতে ক্ষতি হতে পারে তাই তারা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। এটা শুধু আমার পরিবার নয়, এটা পুরো দেশের চিত্র। এখন ভিন্ন মতের রাজনীতির কারণে একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত দেশকে বিভক্ত করা হয়েছে। আমার পরিবার যেহেতু আওয়ামী লীগ করে তাই তাদের চরিত্রও আওয়ামী লীগের বাইরে কিছু হবে না। বাবা-মার সঙ্গে আমি থাকতে পারি না। তবে আদর্শিক কারণে আমি গর্বিত। সংগঠনের কারণে আমার পরিবার বিসর্জন দিতে হয়েছে। দল আমার ত্যাগের মূল্যায়ন করেছে। ছাত্রদলের সভাপতি হওয়ার খবরটি পরিবারকে জানিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাকে টেলিফোনে জানিয়ে পরিবারকে জাতীয়তাবাদী আদর্শের রাজনীতিতে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।

মূল চ্যালেঞ্জ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, সভাপতি হিসেবে ছাত্রদলের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য হচ্ছে, ক্যাম্পাসভিত্তিক ছাত্র রাজনীতিকে গতিশীল করা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা।

কমিটিতে ব্যক্তি পছন্দের প্রতিফলন ঘটবে না-জুয়েল : ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেছেন, মেধাবী নিবেদিতপ্রাণ এবং রাজপথে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তাদের নিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন করব। এখানে কোনো ব্যক্তি পছন্দ বাস্তবায়ন করা হবে না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারা রাজপথে নিবেদিত থেকে কাজ করেছেন, সেসব মেধাবী তরুণকেই মূল্যায়ন করা হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, ছাত্রদলের কর্মকাণ্ডে ছাত্রসমাজের মানসিকতার প্রতিফলন ঘটে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ছাত্রদল সব সময়ই সরব থাকে। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে এখন ছাত্রদলই সবচেয়ে অগ্রগামী সংগঠন। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নব্বইয়ের গণআন্দোলনসহ ওয়ান-ইলেভেনের অবৈধ সরকারবিরোধী আন্দোলনেও ছাত্রদল সরব ছিল এবং সম্মুখভাগে নেতৃত্ব দিয়েছে।  প্রতিষ্ঠালগ্নে সমগ্র বাংলাদেশের শীর্ষ মেধাবীদের সংগঠিত করে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শিক্ষা, ঐক্য ও প্রগতি তথা উৎপাদনমুখী শিক্ষাব্যবস্থাকে সামনে রেখে ছাত্রদল সৃষ্টি করেছিলেন। আগামী দিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, সংগঠনকে গতিশীল করার জন্য এরই মধ্যে আমরা তৃণমূলেও সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরি করেছি। ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত পুনর্গঠিত করেছি। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি নিচ্ছি, যাতে প্রশিক্ষিত কর্মী তৈরি হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলছি, যাতে তারা অধিকার সচেতন থাকে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন সংগঠন শক্তিশালী ও সাংগঠনিক শক্তিসম্পন্ন। বাংলাদেশের রাজনীতি এখন সংকটময় পরিস্থিতি অতিক্রম করছে উল্লেখ করে বলেন, সারা দেশেই একটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে ছাত্রদলের রাজনীতি করতে হচ্ছে। এর মধ্যে থেকেও আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করে যাচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের সাংগঠনিক ভিত্তিও তৈরি করেছি। আমাদের যে কমিটি বিগত হয়েছে তার পাইওনিয়ার কর্মসূচি ছিল থানা উপজেলা, পৌরসভা এবং কলেজ কমিটিগুলো। সারা বাংলাদেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ কমিটি সম্পন্ন করেছি। ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটিগুলোর কাজও এগিয়ে রয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থানের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের সময় ছাত্রদলের আবেদন ছিল সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিত করা।

তখন ক্ষমতাসীনদের স্বীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য তথাকথিত এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে একটি সহাবস্থান নিলেও এখনো তা হয়নি। সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন তথা এই সরকারের কাছে আহ্বান থাকবে। অন্যথায় ছাত্রদল যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর