মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
উদ্ভাবন

দাড়কিনা মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

দাড়কিনা মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল

খলিশা, বৈরালী, বাতাসি, পিয়ালিসহ দেশীয় ও বিলুপ্তপ্রায় ৩১ প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের  (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা। এবার অতিচেনা দাড়কিনা মাছ নিয়ে গবেষকরা বলছেন, অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ এ মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল গত মাসে উদ্ভাবন করা হয়েছে। জানা যায়, একসময় পুকুর, স্রোতযুক্ত জলধারা ও প্লাবন ভূমিতে প্রচুর পরিমাণে দেখা যেত দাড়কিনা মাছ। জলাশয় সংকোচন, পানি দূষণ এবং অতি আহরণের ফলে মাছটির বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হওয়ায় মাছটির প্রাপ্যতা নেই বললেই চলে। বর্তমানে মাছটি বাংলাদেশে বিপন্নের তালিকায়। বাজারেও দাড়কিনা মাছের খুব একটা দেখা মেলে না। কদাচিৎ পাওয়া গেলেও ৫০০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। বিএফআরআইর বিজ্ঞানীরা বলছেন, আবহমান বাংলার অতি পরিচিত দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ দাড়কিনার বৈজ্ঞানিক নাম: Esomus danricus। এ মাছটিকে স্থানীয়ভাবে ডাইরকা, ডানখিনা, দাড়কিনা, ডানকানা, দারকি, দারকা, চুক্কনি ও দাইড়কা ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। মাছটি বাংলাদেশ, ভারত (গাঙ্গেয় প্রদেশ এবং আসাম), মিয়ানমার, পাকিস্তান, নেপাল ও থাইল্যান্ডে পাওয়া যায়। বহুল পরিচিত ও সুস্বাদু এ মাছটি এখন বিলুপ্তির পথে। এ মাছের পুষ্টিগুণ অন্যান্য ছোট মাছের তুলনায় বেশি।

 প্রতি ১০০ গ্রাম মাছে ভিটামিন-এ ৬৬০ মাইক্রোগ্রাম আরএই, ক্যালসিয়াম ৮৯১ মি. গ্রাম, আয়রন ১২.০ মি. গ্রাম এবং জিংক ৪.০ মি. গ্রাম পাওয়া যায়। বিএফআরআই জানায়, দাড়কিনা মাছ ছোট ছোট প্লাংটন, পোকামাকড়, শেওলা এবং জলজ কীটপতঙ্গ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এ মাছের প্রজননকাল মার্চ থেকে শুরু হয়ে জুলাই মাস পর্যন্ত হলেও মে-জুলাই এদের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম। পুরুষ মাছের তুলনায় স্ত্রী দাড়কিনা মাছের আকার বড় হয়। মার্চ মাসে স্ত্রী মাছের জিএসআই ১০.৪৭% এবং ডিম ধারণক্ষমতা ২২০০-৩২৫০ (দৈর্ঘ্য ৬.৪ সে.মি. এবং দেহ ওজন ১.৫-২.০ গ্রাম)। প্রতি গ্রাম স্ত্রী মাছে গড়ে ৯০০-১০০০টি ডিম পাওয়া যায়।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, মাছের ডিম্বাশয় মার্চ মাস থেকে পরিপক্ব হতে শুরু করে। জানতে চাইলে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ  বলেন, ২০০৮-২০০৯ সালে চাষের মাধ্যমে দেশীয় মাছের উৎপাদন ছিল ৬৭ হাজার মে. টন। দেশীয় মাছের পোনা উৎপাদন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন হওয়ায় ২০২০-২১ সালে উৎপাদন চারগুণ বেড়ে ২.৫ লাখ মে. টনে উন্নীত হয়েছে। চলতি বছর আরও আটটি দেশীয় মাছের প্রজনন কৌশল উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর