বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

সুনামগঞ্জে ফসল হারিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

প্রতিদিন ডেস্ক

সুনামগঞ্জে ফসল হারিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় কৃষক। জেলায় এখন পর্যন্ত ১৭টি হাওর ও বিলের বোরো ধান বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে ৫ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমির ধান। নেত্রকোনায় ৩৬৫ কি.মি বেড়িবাঁধ রয়েছে ঝুঁকিতে। পানি ঢুকছে গ্রামে। ইতোমধ্যে ধনু নদের পানি বেড়ে বাঁধের বাইরের নদীতীরের প্রায় ৩০০ হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে। হবিগঞ্জের লাখাইয়ে ৫০০ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে তলিয়ে গেছে ৭০ হেক্টর জমির ধান। প্রতিনিধিদের খবর-

সুনামগঞ্জে হাওরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত দুই দিনে বাঁধ ভেঙে নতুন কোনো হাওর তলিয়ে না গেলেও সম্প্রতি বাঁধ ভাঙায় কয়েকটি হাওরের উঁচু এলাকার ফসলও পানি নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকরা।

কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় এ পর্যন্ত ১৭টি হাওর ও বিলের বোরো ধান বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে ৫ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমির ধান। তবে হাওরের কৃষক ও হাওর আন্দোলন নেতারা মনে করছেন ক্ষতির পরিমাণ এ থেকে অন্তত পাঁচগুণ বেশি। সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় বছরে একটিমাত্র ফসল ফলে জমিতে। ওই ফসলের ওপর পরিচালিত হয় কৃষকের সারা বছরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।

যেসব হাওরে কৃষকের ফসল বাঁধ ভেঙে পানির নিচে তলিয়ে গেছে, তারা পড়েছেন চরম বিপর্যয়ে। ফসল উৎপাদনের ধারদেনা শোধের পাশাপাশি বছরের বাকি সময় কীভাবে কাটবে সেই দুশ্চিন্তা ভর করেছে তাদের মাঝে। অন্যদিকে, শনিবার ভেঙে যাওয়া দিরাই উপজেলার হুরা মন্দিরা ও তাহিরপুর উপজেলার গুরমার হাওরের বাঁধ ভাঙার দুই দিন পরও এর প্রভাব রয়েছে হাওরপাড়ে। ডুবে যাওয়া আধাপাকা ধান পানির নিচ থেকে তুলে আনার চেষ্টা করছেন নিরুপায় অনেক কৃষক। তবে তাদের বেশির ভাগই আশা ছেড়ে দিয়েছেন।

নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় ৩৬৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধই এখন ঝুঁকিতে। ওজানের ঢলে জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদের পানি বিপৎসীমার ২৭ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ রক্ষার পাশাপাশি রসুলপুর গ্রামে পানি প্রবেশ ঠেকাতে সড়কে মাটি ও বস্তা ফেলে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে পুরো হাওর। কৃষকরা বলছেন, আর অল্প পানি বাড়লেই তলিয়ে যাবে পুরো হাওর। বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে থাকায় কৃষকদের দ্রুত ধান কাটতে আহ্বান জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : গত তিন দিন ধরে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার নাসিরনগরে হাওরের অনেক জমির ধান তলিয়ে গেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে তিতাসপাড়ের আকাশি হাওরও তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এর মধ্যে গত সপ্তাহে শিলাবৃষ্টি ও পানি বৃদ্ধির কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার গোয়ালনগর, ভলাকুট, বুড়িশ্বর, নাসিরনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার হাওরের ধানী জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়াও হরিপুর, কুন্ডা, গোকর্ণ ও পূর্বভাগ ইউনিয়নের তিতাস নদীর তীরবর্তী আকাশি হাওরের অনেক জমির ধানও তলিয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিসের সূত্রমতে এখন পর্যন্ত ৭০ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষকদের হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।

হবিগঞ্জ : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে লাখাই উপজেলার বিভিন্ন হাওরের প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। আরও কয়েকশ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আছেন কৃষকরা। তড়িঘড়ি করে আধাপাকা ধান কেটে নিতে হচ্ছে তাদের। দ্রুত ধান কাটার জন্য শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না। যে জমির ধান আগে ১ হাজার টাকায় কাটানো যেত, পানি বেড়ে যাওয়ায় সেই জমির ধান এখন ৪ হাজার টাকা দিয়ে কাটাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর