শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

আফ্রিকান চক্রের উপহারের ফাঁদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ইউরোপ-আমেরিকার নাগরিক হিসেবে ভুয়া পরিচয়ে আইডি খুলে প্রতারণা চালিয়ে আসছিল একটি চক্র। বন্ধু হিসেবে কারও সঙ্গে সখ্য গড়ে উপহার পাঠানোর নামে কিংবা বিনিয়োগের প্রলোভনে হাতিয়ে নিত লাখ লাখ টাকা। প্রলোভনের এমন ফাঁদে পড়ে অনেকেই বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে দিয়েছেন প্রতারকদের হাতে। বিশেষ করে আফ্রিকার নাগরিকরা ভিজিট ও বিজনেস ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করে। বুধবার রাতে রাজধানীর পল্লবী ও ভাটারায় অভিযান চালিয়ে চক্রের বিদেশি নাগরিকসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের থেকে একটি ডলার ট্রিক মেশিন, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১৭টি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ, কেমিক্যালের বোতল, বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টের কপি জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- হেনরি ওসিতা ওকেচুকু, চিসম ইমানুয়েল ওবাইজুলু, ওকাকে পিটার, ওবিনা সান্ডে, ওনেকা এমবা, চিসম এন্থনি ইকুয়েনজে, ওকেয়া আজুবিকে, অনুয়ারাহ ওজুয়েমেনা ডানিয়েল, অনুরুকা জিনিকা ফ্রান্সিস, লুকে, ডোমাডু চিনেডো এবং বাংলাদেশি সহযোগী ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা চাঁদনী আক্তার। গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, গ্রেফতাররা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে বিদেশি পুরুষের আইডি খুলে নারীদের সঙ্গে এবং বিদেশি মেয়েদের নামে আইডি খুলে পুরুষের সঙ্গে চ্যাটিং করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা অঢেল সম্পত্তির কিছু অংশ বাংলাদেশি বন্ধুকে দেবেন কিংবা দামি গিফট পাঠানোর ফাঁদে ফেলেন। গিফট হিসেবে আসা হাজার হাজার পাউন্ড বা ডলার ছাড়াতে সুযোগ বুঝে ১০-১২ লাখ টাকা দাবি করেন ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা চাঁদনী।  প্রতারক চক্রটির প্রধান নাইজেরিয়ান নাগরিক হেনরি ওসিতা ওকেচুকু ও চিসম ইমানুয়েল। তারা কাস্টমস্ অফিসারের কাজের জন্য বাংলাদেশি মহিলা সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ ও প্রতারণার কাজে নিয়োজিত করার দায়িত্ব পালন করেন। অন্যরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। প্রাথমিকভাবে ওকেচুকুর ডিভাইসে পাঁচটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং চিসমের ডিভাইসে ৩২টি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা বিভিন্ন বিদেশি মেয়ের নামে আইডি খুলে পুরুষদের সঙ্গে চ্যাটিং করেন। শুধু টেক্সট চ্যাটিং করেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংগৃহীত নির্দিষ্ট ভিডিও পাঠান। এভাবে কিছুদিন যোগাযোগের পর তারা মোবাইল নম্বর চান। মোবাইল নম্বর পাওয়ার পর হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ শুরু করেন। অঢেল সম্পত্তির কিছু অংশ বাংলাদেশি বন্ধুকে প্রদান, কখনো জন্মদিনের গিফট বন্ধুর ঠিকানায় পাঠানোর ফাঁদে ফেলেন। আবার কখনো ব্যবসায়িক পার্টনার এবং বিনিয়োগের কথা বলে প্রতারণা এবং ডলার ট্রিক কিংবা ডলার ব্যবহার-উপযোগী করার মেশিন দেখিয়ে প্রতারণা করতেন।

সর্বশেষ খবর