শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

রাষ্ট্রদূত পরিচয় ছাপিয়ে পোল্যান্ডের বড় আপা যিনি

আ স ম মাসুম, পোল্যান্ড থেকে ফিরে

রাষ্ট্রদূত পরিচয় ছাপিয়ে পোল্যান্ডের বড় আপা যিনি

পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশোতে কথা হচ্ছিল ইউক্রেন থেকে জীবন হাতে নিয়ে ফিরে আসা বাংলাদেশের চাঁদপুরের যুবক মাহমুদুল হাসান দোলনের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন কীভাবে ১৫ দিন মারিউপোলে আটকে থেকে তারপর বেঁচে আসেন পোল্যান্ডে। অভিজ্ঞতা বলছিলেন আর শিউরে উঠছিলেন বারবার। খাবার, গোসল ছাড়া ১৪ দিন ছিলেন একটি বহুতল ভবনের বেজমেন্টে। ১৪ দিন পর যখন বের হয়ে পোল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা দেন, তখন দেখেন পুরো মারিউপোল শহরই ধ্বংসস্তূপ। সেই ভয়াবহ জীবনে তিনি একমাত্র আশার আলো পেয়েছিলেন পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেনের কাছ থেকে। দোলন বলছিলেন, ১৪ দিনের অন্ধকার জীবনে মোবাইলের চার্জ বাঁচানোর জন্য শুধু পোল্যান্ডে বসবাসরত বোনজামাই মাসুদুর রহমান তুহিন আর রাষ্ট্রদূত ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলেছি। ম্যাডাম বারবার অভয় দিয়েছেন যেভাবেই হোক জীবিত উদ্ধার করবেন। তার সঙ্গে প্রতিদিন কথা বললে মনে হতো বড় আপার সঙ্গে কথা বলছি। এ রকম প্রায় ৮০০ আটকে পরা বাংলাদেশিকে উদ্ধারের গল্প শুনছিলাম পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেনের কাছে। বাংলাদেশ মিশনের অসাধারণ কর্মদক্ষতার কারণে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে আসতে পেরেছে। এ জন্য পোল্যান্ডের বাংলাদেশিদের মুখে রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন ও দূতাবাস কর্মকর্তা কাউন্সিলর (স্থানীয়) অনির্বাণ নিয়োগীর জয়জয়কার।॥ সুলতানা লায়লা হোসেনের এর আগে লিবিয়া যুদ্ধের সময় বাংলাদেশিদের উদ্ধারের অভিজ্ঞতা ছিল। তাই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার এক মাস আগে তিনি এক ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। পোল্যান্ড সরকারের সঙ্গে বেশ কিছু অফিশিয়াল যোগাযোগে তিনি আসন্ন সংকটে কী কী ধরনের সহযোগিতা পোল্যান্ড সরকারের লাগবে সেটা নিশ্চিত করেন। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছিল বাংলাদেশি নাগরিকদের যেন করিডর দেওয়া হয়। সুলতানা লায়লা হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলছিলেন, ‘আমি একই সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পোল্যান্ড সরকারের কাছেই প্রয়োজনীয় সাহায্যের বিষয়ে জানিয়ে রাখি। সেই সঙ্গে অন্তত এক মাস আগেই দূতাবাসের একটি নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকটিভ করে সেখানে ইউক্রেনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের যুক্ত হতে বলা হয়। প্রথম দু-তিন দিনেই ২৫৬ জনের লিমিট হয়ে যায়। তারপর আরও দুটি গ্রুপ করে প্রায় ৭০০ জনকে নিয়ে আসা হয় দূতাবাসের যোগাযোগের আওতায়।’ তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগের দিনই আমি এক ধরনের একটি মৌখিক আশ্বাস পোল্যান্ড সরকারের কাছ থেকে পাই, যেসব বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে আসবেন তাদের তারা ঢুকতে দেবে। কিন্তু আমি লিখিত অনুমতির জন্য চাপ তৈরি করি। একপর্যায়ে রাতে সেটা পাওয়া যায়। সুলতানা লায়লা বলেন, ‘মধ্যরাতে যখন খবর পাই যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, দূতাবাস কর্মকর্তা অনির্বাণ নিয়োগীকে ঘুম থেকে তুলেই একটি তাৎক্ষণিক টিম তৈরি করে ফেলি।

 

সর্বশেষ খবর