শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

আসছে ডেঙ্গুর মৌসুম বাড়ছে এডিস মশা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

আসছে ডেঙ্গুর মৌসুম বাড়ছে এডিস মশা

এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়কে ডেঙ্গুর মৌসুম ধরা হয়। মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় উপযুক্ত পরিবেশ পাচ্ছে এডিস মশা। এর মধ্যে প্রাক-মৌসুম জরিপে গত দুই বছরের তুলনায় মশার ঘনত্ব বেশি পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ঢাকা শহরের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে জরিপে। তাই ডেঙ্গু ঠেকাতে এখনই কর্মসূচি নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯৮ ওয়ার্ডের ১১০ স্থানে প্রাক-মৌসুম এডিস মশার ঘনত্বের জরিপ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। প্রতি বছর তিনবার (প্রাক-মৌসুম, মৌসুম ও মৌসুম-পরবর্তী) এডিস মশার ঘনত্বের জরিপ করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঘনত্বের মাত্রা থেকে অনুমান করা যায় এডিস মশা বাহিত রোগ, বিশেষ করে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া কেমন হতে পারে। এ বছর প্রাক-মৌসুম জরিপে  ঢাকা শহরের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে। এ বছর প্রাক-মৌসুম এডিস মশার ঘনত্ব গত বছর প্রাক-মৌসুম এডিস মশার ঘনত্বের তুলনায় বেশি। পানি জমতে পারে এমন পাত্র অপসারণ করে বংশ বিস্তারের পরিবেশ ধ্বংস করতে হবে। এখন এ পদক্ষেপ নিলে মৌসুমে নিয়ন্ত্রণে থাকবে ডেঙ্গু।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর এ চার মাস মূল মৌসুম। কয়েক দিনের থেমে থেমে হওয়া বৃষ্টি এডিস মশার বংশ বিস্তারে প্রভাব ফেলছে। এডিস মশা জন্মায় পাত্রে জমা পানিতে। কোনো পাত্রে সাত দিন পানি জমে থাকলেই সেখানে এডিস মশা জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে। গত কয়েক বছরে গবেষণায় আমরা দেখেছি ঢাকা শহরে নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি, লিফটের গর্ত, টাইলস ভেজানোর চৌবাচ্চা, ড্রাম, বালতি, ওয়াসার মিটার রাখার জায়গা ইত্যাদি স্থানে এডিস মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া দইয়ের পাত্র, পানির জার, ভাঙা কমোড, বেসিনসহ যে কোনো ছোট বড় পাত্র যেখানে ২ সেন্টিমিটার পানি জমা হতে পারে সেখানেই এডিস মশার প্রজনন হতে পারে।’

ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত একটি ভাইরাসঘটিত জ্বর রোগ। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি স্ট্রেইনের (ডেন-১, ২, ৩ ও ৪) যে কোনো একটি দিয়ে ডেঙ্গুজ্বর হতে পারে। আর এ ভাইরাস বহন করে এডিস প্রজাতির মশা। এডিস মশার দুটি প্রজাতি ঢাকা শহরে দেখা যায়। তার মধ্যে একটি হলো এডিস ইজিপ্টি, আরেকটি এডিস অ্যালবোপিকটাস। এডিস ইজিপ্টিকে নগরের মশা বা গৃহপালিত মশা বলা হয়। এ মশা নগরীর বাড়ি ও বাড়ির আশপাশে বিভিন্ন পাত্রে জমে থাকা পানিতে জন্মায়।

ইজিপ্টি মশা ডেঙ্গুর প্রধান বাহক। দেশে ৯৫ ভাগ ডেঙ্গু রোগ ছড়ায় ইজিপ্টি প্রজাতির এডিস মশা থেকে। ডেঙ্গুর সেকেন্ডারি বা এপিডেমিক বাহক হচ্ছে এডিস অ্যালবোপিকটাস। অ্যালবোপিকটাস মশা বিভিন্ন পাত্র ছাড়াও গাছগাছালি যুক্ত এলাকায় গাছের কোটর, কলা গাছের দুই পাতার মাঝখান, কচুপাতার মাঝখান, কাটা বাঁশের গোড়ায় জমে থাকা পানিতে জন্মায়। বাংলাদেশে ১৯৬৪ সালে প্রথম ডেঙ্গু আসে। তখন একে ঢাকা ফিভার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২০০০ সালে সরকারি হিসাবমতে ৫ হাজার ৫০০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন এবং ৫৫০ জন মারা যান।

বাংলাদেশের মানুষ ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি দেখে ২০১৯ সালে। সে বছর লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন এবং প্রতিটি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৯ হাজার। বৃষ্টিপাত শুরু হলে এডিস মশার ঘনত্ব আরও বাড়বে তাই এখনই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা।

সর্বশেষ খবর