রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

পুষ্টি চাহিদা পূরণে চ্যালেঞ্জ করোনা

আজ জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ শুরু

জয়শ্রী ভাদুড়ী

দুই বছরের বেশি সময় ধরে করোনা মহামারির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে বিশ্ব। জীবন-মৃত্যুর এই লড়াইয়ে তিন দফা ধাক্কায় টালমাটাল হয়ে পড়েছিল দেশের স্বাস্থ্য খাত। অন্যান্য খাতের মতো করোনার প্রভাব পড়েছে পুষ্টি সূচকেও। মাতৃ, শিশু, কিশোরী, প্রবীণ স্বাস্থ্য সূচকের উন্নয়ন করে এসডিজি অর্জনের চ্যালেঞ্জ বাড়াচ্ছে করোনা। এ পরিস্থিতির মধ্যে আজ শুরু হচ্ছে জাতীয় পুষ্টি    সপ্তাহ। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘সঠিক পুষ্টিতে সুস্থ জীবন।’ এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি পুষ্টি সূচকের উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। আমরা যে ধারায় ছিলাম সেই গতি শ্লথ হয়েছে। গতি ফিরিয়ে এনে এগিয়ে যেতে আমাদের সবগুলো সংস্থা কাজ করছে। অনেকগুলো সংস্থা জরিপ করছে। এর প্রাথমিক ফলাফল আমরা পেয়েছি। তাতে দেখা গেছে শিশু, কিশোরী এবং অন্যান্য বয়সী মানুষের স্বাস্থ্য সূচক বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে পুষ্টি পরিস্থিতি কিছুটা নেমে গেছে। এর পূর্ণাঙ্গ ফল পেলে আমরা প্রকাশ করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বছরে আমরা প্রতিটা বয়স গ্রুপের জন্য আলাদা আলাদা পুষ্টি পরিকল্পনা নিয়েছি। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।’ জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. গাজী আহমদ হাসান তুহিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুষ্টির সঙ্গে ২২টি মন্ত্রণালয় জড়িত। এসডিজি অর্জনে কাজ চলছে। এসডিজির দ্বিতীয় এবং তৃতীয় লক্ষ্যের সঙ্গে সরাসরি পুষ্টি জড়িত। এই দুই সূচক উন্নয়ন করতে না পারলে আমরা এসডিজি অর্জন করতে পারব না। এ হিসাবে পুষ্টির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, শিশু পুষ্টিতে বয়স অনুযায়ী উচ্চতা কম এই সূচকে আমরা ৩১ শতাংশে আছি। ২০১১ সালে ৪১ শতাংশ ছিল। এসডিজি অর্জন করতে হলে এই হার ১২ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কম এমন শিশুদের ক্ষেত্রে ২০১১ সালে বাংলাদেশ ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ ছিল। ২০১৭ সালে এটা নেমে এসেছে ৮ শতাংশে। ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জনের টার্গেট ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা। শিশুর বয়স অনুযায়ী ওজন কম এমন ক্ষেত্রে সূচক ২২ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সূচক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। এই স্তরগুলো অর্জন করতে গর্ভবতী মায়েদের সুস্বাস্থ্য এবং পুষ্টিতে নজর দিতে হবে। সঠিক পুষ্টি, হাসপাতালে নিয়মিত তদারকি, আয়রন ফলিক অ্যাসিড সেবন এবং বিশ্রাম নিশ্চিত করতে পারলে মাতৃমৃত্যু-শিশুমৃত্যু কমে যাবে। এতে শিশুদের ওজন, উচ্চতার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, ‘২০১১ সালে বিডিএইচএস’র তথ্য অনুযায়ী গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে ৪২ শতাংশ রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি অন্যান্য জরিপের অপ্রকাশিত এক তথ্যে দেখা যাচ্ছে ৩৮-৪০ শতাংশে আছে। করোনা পরিস্থিতির প্রথম দিকে দেখা যায় গর্ভবতী মায়েরা হাসপাতালে অনেক কম সেবা নিতে গেছেন। এর ফলে সঠিক সময়ে আয়রন ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করা, কাউন্সেলিং, দিকনির্দেশনা প্রদান ব্যাহত হয়। এসব কারণে শিশুদের মধ্যে স্বল্প, মাঝারি, তীব্র অপুষ্টি দেখা দেয়। তাদের আবার সুপার স্পেশাল সেবার আওতায় আনতে হয়। প্রতিটি মেডিকেল কলেজ ও সদর হাসপাতালে আলাদা কর্নার থাকে। হাসপাতালে স্পেশাল কর্নারে তীব্র অপুষ্টির কারণে অসুখে আক্রান্ত এমন শিশুদেরও সেবা দেওয়া হয়। ২০২০ সালে দেখা যায়, হাসপাতালে এ রকম সমস্যা নিয়ে ৬ হাজার ৫৭০ জন সেবা নিয়েছেন। ২০২১ সালে এটা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ১০ হাজার ৫০০ শিশু তীব্র অপুষ্টি নিয়ে হাসপাতালে আসে। কভিড পরিস্থিতিতে পুষ্টি পরিস্থিতিতে ধাক্কা লেগেছে। এ জন্য আমরা আমাদের কর্নারগুলোতে লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়িয়ে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া সচেতনতামূলক কাজও আমরা বাড়িয়েছি।’ পুষ্টি সপ্তাহ উপলক্ষে বিভাগীয়/জেলা/উপজেলা পর্যায়ে সেমিনার এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। পুষ্টি সচেতনতায় জোর দিয়েছে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি ইনস্টিটিউট। জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে শালদুধ খাওয়াতে হবে। শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ দিতে হবে। ছয় মাস বয়সের পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি সুষম বাড়তি খাবার দিতে হবে। শিশু সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে কি না জানতে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত ওজন ও উচ্চতা পরিমাপ করুন।

সর্বশেষ খবর