সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

কলকাতার ‘দোস্তি কি ইফতার’

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

কলকাতার ‘দোস্তি কি ইফতার’

কলকাতার আহিরিটোলার নিমতলা ঘাট স্ট্রিটে অবস্থিত প্রাচীন নেয়ামতুল্লাহ মসজিদ। গঙ্গার ধারে এ মসজিদ চত্বরে সে অর্থে কোনো মুসলিম পরিবারের বসবাস নেই। কিন্তু তাতে কী! আপনার পাশের লোকটিকে চিনে নেওয়ার এই তো সেরা সময়! আর তাই তো জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষের জমায়েত। মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা তো ছিলেনই, সেই সঙ্গে অ-মুসলিম বাঙালি, অ-বাঙালি, নারী- সবাই একে অপরকে দেখলেন। পরিচয় হলেন। মোবাইল নম্বর বিনিময় করলেন। কেউ আবার দেদার সেলফিও তুললেন। এক কথায় বন্ধুত্ব তৈরির ইফতার।

শনিবার সন্ধ্যায় প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এ নিয়ামতুল্লাহ মসজিদ চত্বরেই বসে ইফতার মাহফিলের আসর। যার পোশাকি নাম ছিল  ‘দোস্তি কি ইফতার’। গোটা অনুষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে ছিল ‘নো ইওর নেইবার’ নামক একটি প্ল্যাটফরম। এর লক্ষ্যই ছিল দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মনিরপেক্ষতার চিত্র তুলে ধরা। ‘নো ইওর নেইবার’-এর আহ্বায়ক সাবির আহমেদ ওই মসজিদের ইতিহাস, স্থাপত্য এবং এ জায়গায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন নিয়ে জানান ‘এই জমির মালিক ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মুহাম্মদ রমজান আলী। যিনি ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে এ মসজিদের দুই পাশেই রয়েছে দুই প্রাচীন মন্দির। বহু যুগ আগে অজুখানায় গঙ্গার পানি আসত এবং তা দিয়ে মুসলিমরা শুদ্ধ হয়ে তাদের আচার পালন করতেন। পরবর্তীতে কিছু মুসলিম যুবক কয়েকজন ব্রাহ্মণের গায়ে ওই পানি ছিটিয়ে দেন। এর পরই রমজান আলী ঘোষণা দেন যে নিয়ামতুল্লাহ ঘাট এখন থেকে হিন্দুদের জন্যও খুলে দেওয়া হবে।’  তিনি আরও বলেন, ‘কলকাতায় ইফতার নিয়ে মানুষ জাকারিয়া স্ট্রিট, পার্ক সার্কাস, রাজাবাজার বা খিদিরপুরের হালিম ও কাবাব-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু সেই সীমানাকে ছাড়িয়ে যেতে চাই। আর সে কারণেই উত্তর কলকাতার এ জায়গাকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’

খিদিরপুর কলেজের ভূগোলের শিক্ষিকা তিস্তা দে জানান ‘দিন কয়েক আগেও ঈদ বলতে তিনি বুঝতেন একটা ছুটির দিন। কিন্তু মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় শিক্ষকতা করতে গিয়ে সেখানকার স্থানীয় ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মেলামেশার সুবাদে তিনিও এখন ঈদের চাঁদ দেখার জন্য অপেক্ষা করেন। এ চাঁদই কত মানুষের মুখে হাসি ফোটায়।’ তার অভিমত ‘মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ, সম্পর্ক তৈরি হলে আমাদের চিন্তা, মানসিকতার ধ্যান-ধারণার অনেক কিছুই পরিবর্তন ঘটে যায়।’ এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে কলকাতার সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক সামাতা বিশ্বাস বলেন ‘এ উদ্যোগ একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধ হওয়ার এবং একে অপরকে ধরে রাখার প্রতশ্রুতিকে দৃঢ় করেছে।’ 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর