বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

লিবিয়ায় আটক ৫ শতাধিক বাংলাদেশি

অবৈধ পথে যাচ্ছিলেন ইউরোপে, চলছে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

লিবিয়ায় আটক ৫ শতাধিক বাংলাদেশি

লিবিয়ার পুলিশ ভূমধ্যসাগর উপকূল থেকে ৫ শতাধিক বাংলাদেশিকে আটক করেছে। দুই দিনের এক ঝটিকা অভিযানে এই বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশি আটক হয়েছে। অবশ্য লিবিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল এস এম শামীম উজ জামানের মতে, এটা এখন ‘নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে’। রাষ্ট্রদূত জানিয়েছে, ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতির সময় গত ২৩ এপ্রিল ত্রিপোলির পূর্ব উপকূল থেকে বাংলাদেশিদের আটক করা হয়। প্রাথমিকভাবে লিবিয়ার পুলিশ আমাদেরকে ৫০০ জন বাংলাদেশিকে আটকের কথা জানিয়েছে। তবে আমরা এ পর্যন্ত সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।

লিবিয়ান টিভি আল-আহরারের খবরে বলা হয়, ওই অভিযানে বাংলাদেশিসহ প্রায় ৬০০ অভিবাসী আটক হন। তারা আটককৃতদের একাধিক ছবি ও ভিডিও রিলিজ করেছে। মিসরাতা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৬০০-এর মতো অবৈধ অভিবাসী সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এমন সময় তাদের আটক করা হয়। আটকদের অধিকাংশই বাংলাদেশের নাগরিক। তারা জারিখ উপকূল থেকে নৌকাযোগে ইউরোপের উদ্দেশে রওনার প্রস্তুতিতে ছিলেন।

বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, শনিবার আটক অভিবাসীদের প্রথমে জেলা শহর মিসরাতার একটি ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে গাদাগাদি হওয়ায় একটি অংশকে তৎক্ষণাৎ রাজধানী ত্রিপোলির বিমানবন্দর সড়কের একটি কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাদের খাদ্য, পানীয় এবং অন্য জরুরি সহায়তা প্রদান করেছে পুলিশ। নাগরিকত্ব যাচাই শেষে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

জানা যায়, ২০১৬ সালে এক দিনে ছয় শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তারপর এক দিনে এত বাংলাদেশিকে আটকের ঘটনা এটাই প্রথম। ২০২০ সালে দালালদের এক বন্দিশালায় ২৬ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে গুলি করে হত্যার ঘটনার পর এ পথে অবৈধ অভিবাসীদের যাতায়াতে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। মহামারির দুই বছরে তা অনেকটাই বন্ধ ছিল। লিবিয়া কোস্ট গার্ডের বরাতে সে দেশের সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছে, এক সময় ত্রিপোলির পশ্চিম উপকূল ব্যবহার করে অবৈধ অভিবাসীরা সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করত। যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ায় চার বছরের বেশি সময় বাংলাদেশিদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ ছিল। এ বছরের শুরুতে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এখন কাজের ভিসা নিয়ে অনেকেই আবার লিবিয়ায় যাচ্ছেন। কিন্তু লিবিয়া যাওয়ার পর অনেকেই সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম বলছে, চলতি ২০২২ সালের প্রথম তিন মাসে ডজনখানেক অপারেশনে ভূমধ্যসাগর থেকে ৪ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে উদ্ধার এবং আটক করেছে। যার মধ্যে ৩৮১ জন নারী এবং ১৬৯ শিশু রয়েছে। আইওএম-এর রিপোর্ট মতে, ২০২১ সালে ৩২ হাজার ৪২৫ অবৈধ অভিবাসীকে লিবিয়া উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের একমাত্র টার্গেট ছিল ইউরোপে পাড়ি জমানো। ওই বছরে ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া রুট থেকেই ৬৬২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আর সলিল সমাধি ঘটেছে ৮৯১ জনের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর