বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

নাজাতপ্রত্যাশীদের পাপমুক্ত থাকার তাগিদ

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

নাজাতপ্রত্যাশীদের পাপমুক্ত থাকার তাগিদ

মুসলিম হিসেবে আমরা সবাই জাহান্নাম থেকে নাজাতপ্রত্যাশী। তবে জাহান্নাম হতে নাজাত পেতে হলে নবী (সা.)-এর তরিকায় আল্লাহর হুকুম-আহকাম মেনে চলা জরুরি। তাহলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে যাব বলে আল্লাহর কাছে আশা করতে পারি। আরও সুসংবাদ হলো, যারা প্রকৃত ইমানদার তাদের মধ্যে অনেকে বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবেন ইনশাল্লাহ। পবিত্র কোরআন হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী যারা পাপী বান্দা, তবে তাদের ইমান ছিল, ইমান নিয়ে কবরে গেছেন, নিজেদের পাপের কারণে জাহান্নামে কিছুদিন শাস্তি ভোগ করার পর রব্বুল আলামিন দয়া করে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। কিন্তু এখানে  বোঝার বিষয় হলো- দুনিয়ার সামান্য রৌদ্র বা আগুনের তাপ সইতে পারা যায় না তাহলে জাহান্নামের কঠিন তাপ বা আগুন কীভাবে বরদাস্ত করা হবে। বিষয়টি বড় ভয়ানক। তাই মৃত্যুর পূর্বেই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। হাদিসে বলা হয়েছে- “মুতু ক্বাবলা আন তামুতু ওয়া হাসাবু ক্বাবলা আন তুহাসাবু” তোমরা মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাক। এবং নিজেদের হিসাব গ্রহণ কর। (পরকালে হিসাব নেওয়ার পূর্বে) তাই বাকি জীবনে আল্লাহর কাছে তাওবা করে নিজেদের পাপগুলো ক্ষমা ও মাফ করিয়ে নিতে হবে। হাদিসে ওইসব লোকদের জাহান্নামের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে যারা শরিয়তের সীমানা লঙ্ঘন করেছে। তাদের ব্যাপারে হাদিসে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে, এখানে সংক্ষেপে কয়েকজনের কথা উল্লেখ করা হলো। ১. হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাজি হজরত রসুল সা. থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা লালিত-পালিত হয়েছে, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (বায়হাকি শরিফ, হাদিস নম্বর : ৫৫২০) ২. হজরত জুবাইর ইবনে মুতইম রাজি. বলেন, আল্লাহর রসুল সা. ইরশাদ করেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর : ৫৫২৫) ৩. হজরত আবু হুরাইরা রাজি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন হজরত রসুল সা. বলেছেন, ‘যার অত্যাচার (আচরণ) থেকে প্রতিবেশীরা নিরাপদ নয়, তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন না। (মুসলিম, হাদিস নম্বর : ৬৬) ৪. হজরত হারেছা বিন ওহাব রাজি. বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, ‘অশ্লীলভাষী ও উগ্র মেজাজি লোক জান্নাতে যাবে না। (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ৪১৬৮) ৫. হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর রাজি. বলেন, নবী করিম সা. বলেছেন, ‘উপকার করে খোঁটা দানকারী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, সর্বদা মদপানকারী-এই তিন শ্রেণির মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস নম্বর : ৫৫৭৭) ৬. হজরত হুজাইফা রা. থেকে বর্ণিত, বিশ্বনবী সা. ইরশাদ করেন, ‘চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম, হাদিস নম্বর : ১৫১) ৭. হজরত সাদ রা. ও হজরত আবু বাকরাহ রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে নিজেকে অন্য পিতার সঙ্গে সম্পর্কিত করে-অর্থাৎ নিজেকে অন্য পিতার সন্তান বলে পরিচয় দেয়, তার জন্য জান্নাত হারাম।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর : ৬২৬৯) ৮. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. রসুলুল্লাহ সা. থেকে বর্ণনা করেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার রয়েছে, তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন না।’ (মুসলিম, হাদিস নম্বর : ১৩১) ৯. হজরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, ‘আমার সব উম্মত জান্নাতে যাবেন, কিন্তু যে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করেছে, তিনি নন। সাহাবিরা বললেন, আল্লাহর রসুল! কে অস্বীকার করেছে? তিনি বললেন, যে আমার আনুগত্য করে, তিনি জান্নাতে যাবেন। আর যে আমার নাফরমানি করে, সে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করেছে।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর : ৬৭৩৭) ১০. হজরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যে ইলম দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা হয়, সেই ইলম যদি কোনো ব্যক্তি দুনিয়াবি স্বার্থ-সম্পদ হাসিলের উদ্দেশে শিক্ষা করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ৩১৭৯) ১১. রসুল সা. ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ওয়ারিশকে তার অংশ (প্রাপ্য) থেকে বঞ্চিত করল, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের অংশ থেকে বঞ্চিত করবেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৬৯৪) সব মুসলমান ও ইমানদার, মানুষ জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রত্যাশী এবং জান্নাতে যেতে আগ্রহী, এর জন্য অবশ্যই পাপমুক্ত জীবন ধারণ করেত হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর