বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

লাইলাতুল কদর কোরআন নাজিলের রাত

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

লাইলাতুল কদর কোরআন নাজিলের রাত

লাইলাতুল কদর শব্দ দুটি আরবি। এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুন’ অর্থ রাত এবং ‘কদর’ অর্থ সম্মান, মর্যাদা। ইত্যাদি। আল্লাহতায়ালা উম্মতে মুসলিমার জন্য যে কটি মহিমান্বিত রাত দান করেছেন তার মধ্যে লাইলাতুল কদর অন্যতম; যা আমাদের কাছে শবেকদর নামে পরিচিত। এ মহিমান্বিত রাতটি রমজানের শেষ দশকের বিজোড়সংখ্যক রাতের যে কোনো একটিতে অন্বেষণের জন্য নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন। এই একটি মাত্র রাতের ইবাদত-বন্দেগিকে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। ১ হাজার মাসে ৮৩ বছর চার মাস হয়। ভাগ্যবান ওইসব লোক যাদের এ রাতে ইবাদত-বন্দেগির তৌফিক হয়। কেননা এই একটিমাত্র রাত যে ইবাদতে কাটাল সে যেন ৮৩ বছর চার মাসের চেয়ে বেশি সময় ইবাদতে কাটাল। সুবহানাল্লাহ। আর এই বেশির পরিমাণও জানা নেই যে তা হাজার মাস অপেক্ষা কত মাস অধিক উত্তম? এই সম্মানিত রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি কোরআনকে কদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাস থেকেও শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা আল কদর, আয়াত ১-৩)। এ সুরা নাজিলের প্রেক্ষাপট অনেক বিস্তারিত ও দীর্ঘ। সংক্ষেপে শুধু এ বিষয়টি বোঝা প্রয়োজন যে মুসলমানদের সান্ত্বনার জন্য আল্লাহতায়ালা এ সুরাটি নাজিল করেন। এতে এ উম্মতের জন্য শুধু এক রাতের ইবাদতই ১ হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ। এ রাতটি কোন মাসে? এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মাহে রমজান এমন মাস যাতে কোরআন নাজিল হয়েছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)। সব ঐশী কিতাব মাহে রমজানেই আল্লাহ রব্বুল আলামিন নাজিল করেছেন। হজরত আবু জার গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন. তওরাত ৬ রমজান, ইনজিল ১৩ রমজান ও জবুর ১৮ রমজান আর কোরআন লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ হয়েছে। এ রাতটি রমজানের কোন তারিখে? ইমাম বুখারি ও ইমাম তিরমিজি বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কদরের রাতকে রমজানের শেষ ১০ রাতের কোনো বিজোড় রাতে খোঁজ কর।’ হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসেও একই ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। অবশ্য কোনো কোনো আলেম রমজানের ২৭তম রাত (অর্থাৎ ২৬ রোজার দিবাগত রাতে) শবেকদর হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা বলেছেন। তবে শুধু ২৭তম রাতেই শবেকদর তা কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ রসুলুল্লাহ (সা.) এ রাতটি কোন রাত তা তিনি সুনির্দিষ্ট করে বলে যাননি বরং কষ্ট করে খুঁজে নিতে বলেছেন। মহান আল্লাহ চান বান্দাহ কয়েক রাত ইবাদতে গভীর মনোনিবেশ করে এ মহিমান্বিত রাতের সন্ধান পাক। আবার রাতটি কোরআন নাজিলের রাতও। যারা কোরআনকে আমলের নিয়তে আঁকড়ে ধরবে তারা ইহ ও পর জীবনে সম্মানিত হবে। এ রাতেই মানবকল্যাণে আল্লাহ মানুষের জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ফেরেশতাদের জানান। আল্লাহ বলেন, ‘এ রাতে প্রতিটি ব্যাপারে অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত ও সুদৃঢ় ফয়সালা জারি করা হয়।’ (সুরা দুখান, আয়াত ৪) মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘ফেরেশতারা ও রুহ (জিবরাইল) এ রাতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হয়, সে রাত পুরোপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার- ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত।’ (সুরা আল কদর, আয়াত ৪-৫) হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ইমানসহকারে ও আল্লাহর কাছ থেকে বড় শুভফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, তার পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ (বুখারি, মুসলিম)। রাত জেগে ইবাদত করা আল্লাহর প্রিয় বান্দাহদের একটি বড় গুণ।

শবেকদরে করণীয় : বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত। নফল নামাজ আদায়। ন্যূনতম ১২ রাকাত থেকে যত বেশি সম্ভব পড়া। এজন্য নফল নামাজ পড়ার নিয়তে দুই রাকাত নফল পড়ছি এই বলে তাকবির বেঁধে যত ইচ্ছা নফল নামাজ পড়া। এ নিয়তে নামাজ শুরু করে আবার সঠিকভাবে শেষও করা। এজন্য সুরা ফাতিহার সঙ্গে নিজের জানা যে কোনো সুরা মেলালেই চলবে।

 এ ছাড়া সালাতুত তওবা, সালাতুল হাজত, সালাতুত তাসবিহও পড়া যেতে পারে। ৩. জিকির ও দোয়া করা। ৪. ইসতিগফার ও দরুদ আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। কমপক্ষে ১০০ বার ইসতিগফার ও ১০০ বার দরুদ পড়া। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রসুলুল্লাহকে (সা.) বললাম ইয়া রসুলুল্লাহ! যদি কোনো প্রকারে আমি জানতে পারি রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে কী দোয়া করব? জবাবে তিনি বললেন, এ দোয়া পড়বে- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুব্বুন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি’; আল্লাহ! তুমি বড়ই মাফ করনেওয়ালা এবং বড়ই অনুগ্রহশীল। মাফ করে দেওয়াই তুমি পছন্দ কর। অতএব তুমি আমাদের গুনাহগুলো মাফ করে দাও। ৫. মোনাজাত : মোনাজাতের মাধ্যমে বান্দাহ তার প্রভুর কাছে চায়। প্রভু এতে ভীষণ খুশি হন। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি এতটাই অনুগ্রহশীল যে তিনি তাঁর কাছে না চাইলে অসন্তুষ্ট হন। ‘যে আল্লাহর কাছে কিছু চায় না আল্লাহ তার ওপর রাগ করেন।’ (তিরমিজি)। কাজেই আমরা কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দারবারে মোনাজাত করব, মাগফিরাত, রহমত কামনা করব, জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করব। চোখের পানি ফেলে কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে দোয়া করব। আল্লাহ আমাদের খালি হাতে ফেরাবেন না ইনশা আল্লাহ। মহান রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে কায়মনোবাক্যে মহিমান্বিত এ রাতে বেশি বেশি ইবাদত করার তৌফিক দান করুন।

সর্বশেষ খবর